• ধর্মীয় মেরুকরণ বনাম রুটি-রুজি প্রশ্নে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আলিগড়ে
    বর্তমান | ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • আলিগড়: উত্তরপ্রদেশের আলিগড়। ২০১৪ সাল থেকে এখানে একচেটিয়া আধিপত্য গেরুয়া শিবিরের। ২০১৪ সালে প্রায় ২ লক্ষ ৯০ হাজার ব্যবধানে বিএসপি প্রার্থী অরবিন্দকুমার সিংকে হারান বিজেপির সতীশকুমার গৌতম। ২০১৯ সালে সতীশকুমার জিতলেও ব্যবধান একটু কমে। এবারের নির্বাচনে এককালের ঘাঁটি আলিগড়ের ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া মায়াবতী শিবির। ‌প্রাথমিকভাবে আলিগড়ে একজন মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএসপি। তবে গেরুয়া দাপট রুখতে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী বদল করে ‘ব্রাহ্মণ’ হিতেন্দ্রনাথ উপাধ্যায়কে টিকিট দেয় তারা। অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টির তরফে প্রার্থী করা হয়েছে জাঠ নেতা তথা প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ বিজেন্দ্র সিংকে।

    সম্প্রতি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাঁচটি বিধানসভাতেই জয়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির। হিসেব বলছে, লোকসভা কেন্দ্রে ৫৫ শতাংশ হিন্দু ভোটারের বাস। মুসলিম ভোটার ৪০ শতাংশ। লোকসভা কেন্দ্রে তফসিলি ভোটার রয়েছেন সাড়ে ৩ লক্ষ। যার মধ্যে প্রতিবার বিএসপির ঝুলিতে যায় প্রায় আড়াই লক্ষ ভোট। বাল্মীকি সম্প্রদায়ের ভোট পায় গেরুয়া শিবির। ইতিমধ্যেই নিজের জয়কে নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছে বিজেপি। ব্রাহ্মণ, বৈশ্য এবং ঠাকুর সম্প্রদায়ের ৭ লক্ষ ভোটের উপর নির্ভর করছে পদ্ম-প্রার্থীর ভাগ্য। অন্যদিকে, লোধ সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপির বাক্সে গেলেও জাঠ এবং যাদব সম্প্রদায়ের ভোট জোট প্রার্থীর ঝুলিতে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। 

    বিজেপির হিন্দুত্বের পাল্টা মানুষের রুটি-রুজিকে হাতিয়ার করেছে বিরোধী শিবির। পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির মতো বিষয়গুলিতেও সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। উত্তরপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যবসাকেন্দ্রটি তালাশিল্পের জন্য বিখ্যাত। তবে বর্তমানে শুধু তালা নয়, সব শিল্পের ক্ষেত্রেই মন্দা দেখা দিয়েছে। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই হোটেল রশিদ খানের। জিএসটির ফলে ব্যবসায় কী পরিমাণে মন্দা চলছে, সে কথাই বলছিলেন তিনি। এমনকী জিএসটির চড়া হার থেকে বাঁচতে বিলও দিতে চাইছেন না বহু ব্যবসায়ী। গ্রাম হোক বা শহর মন্দার ছায়া সর্বত্র। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না পাওয়ার দরুণ উদ্বেগের ছায়া স্পষ্ট কৃষক সমাজে। সারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি আরও শোচনীয় করে তুলেছে। জালালির কৃষক সতীশ কুমারের কথায়, ‘আমরা সকলেই হিন্দু। কিন্তু তা বলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলা হবে না?’ বেকারত্ব নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। আলিগড় মর্ডান স্কুলের শিক্ষিকা নুসরত জাহান জানান, পড়াশোনার পাট চুকে গেলেও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না যুবক-যুবতীরা। বিদায়ী সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী উন্নয়নের কথা বললেও আদতে যে কিছুই হয়নি, তার প্রমাণ মিলেছে আলিগড় শহরেই। রাস্তাঘাট থেকে জলনিকাশি ব্যবস্থা—সবেতেই সমস্যা। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে জল জমে যায়। শহরের দু’টি অন্যতম প্রধান হাসপাতাল জে এন মেডিক্যাল কলেজ এবং পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালের অবস্থাও বেহাল। ফলে একটু বাড়াবাড়ি হলেই রোগীকে নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েন আত্মীয়রা। দীর্ঘদিনের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও আপতকালীন পরিষেবার প্রশ্নে সতীশ গৌতমের ঔদাসীন্য নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে জনমানসে। ফলে ধর্মীয় মেরুকরণকে সামনে রেখে বিজেপি যতই সুর চড়াক, মানুষ তাতে ভুলতে নারাজ। জীবন-জীবিকার প্রশ্নকে সামনে রেখে লড়তে নামা বিরোধী জোট এবার ছবিটা বদলে দিতে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
  • Link to this news (বর্তমান)