• খাদানের জায়গা নিয়ে বিবাদেই চক্রান্ত, দাবি
    আনন্দবাজার | ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • তাঁরা তিন জনেই পাথর কারবারি। তাঁদের মধ্যে দু’জন খুন হয়েছেন। এবং সেই জোড়া খুনে অভিযুক্ত তৃতীয় জন।

    সালাউদ্দিন খান, তাপস দাস ও তারক টুডু। এই তিন জনের নামই নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছে সালাউদ্দিন ও তাপস খুনে তারককে পুলিশ গ্রেফতার করার পরে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, খাদানের জায়গাকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরেই মহম্মদবাজারের পাঁচামি পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকার দুই পাথর ব্যবসায়ী তাপস ও সালাউদ্দিন খুন হয়েছেন। সালাউদ্দিন খুনে অন্যতম অভিযুক্ত তারককে পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছিল। মঙ্গলবার তাপস দাস হত্যাকাণ্ডেও হিংলো পঞ্চায়েত এলাকার হরিণশিঙা গ্রামের বাসিন্দা তারককে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

    পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর ২১ অগস্ট সন্ধ্যায় পাঁচামি থেকে কাপিষ্ঠা পঞ্চায়েতের কেন্দ্রসরাইল গ্রামে, নিজের বাড়ি ফেরার পথে হিংলো পঞ্চায়েতের পচ্চনপুর থেকে সারেন্ডা যাওয়ার রাস্তার পাশে ধানজমি থেকে উদ্ধার হয় গুলিবিদ্ধ তাপসের দেহ। ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সম্প্রতি আর এক পাথর ব্যবসায়ী ও তৃণমূল নেতা সালাউদ্দিন খানের খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় পাথর ব্যবসায়ী তারক টুডুকে। পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরার মুখে তারক তাদের কবুল করেছেন, সালাউদ্দিন ও তিনি মিলেই তাপস দাসকে খুন করিয়েছেন। সে কারণেই তাপস-খুনের প্রায় ৮ মাস পরে তারককে হেফাজতে নিয়ে তাপস-খুনের সূত্র পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

    কিন্তু, কেন খুন খুন হলেন তাপস ও সালাউদ্দিন?

    পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই তালবাঁধের পাথরচাল এলাকায় পাথরের ব্যবসা করতেন তাপস, সালাউদ্দিন ও তারক। ব্যবসা সূত্রে একে অন্যের বিশেষ পরিচিত ছিলেন তাঁরা। ওই এলাকায় তিন জনের খাদানও রয়েছে। এলাকা ও পুলিশ সূত্রের দাবি, তারক ও তাপসের খাদানের পাশেই প্রায় ১৪ বিঘা সরকারি জমি পড়ে রয়েছে। সেই জমি লিজ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। আবার ওই সরকারি জমির এক দিকে তাপস এবং অন্য দিকে তারক অল্প অল্প কাটতে শুরু করে ছিলেন বলে অভিযোগ।

    পুলিশের দাবি, সেই খবর সালাউদ্দিনের কাছে পৌঁছতেই তিনি তাপস ও তারকের কাছে তাঁর সরকারের কাছে লিজের আবেদন করা জমি কেটে নেওয়া বাবদ বড় অঙ্কের টাকার দাবি করেন। তাপস ও তারক প্রথমে মানলেও পরে তাপস টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাঁর সঙ্গে সালাউদ্দিনের বিবাদ শুরু হয়। তদন্তকারীদের দাবি, সালাউদ্দিন খুনের ঘটনায় তারককে গ্রেফতার করার পরে তারক জেরার মুখে স্বীকার করেন, টাকা নিয়ে বিবাদের কারণেই তারক ও সালাউদ্দিন মিলে তাপসকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেন। সুযোগ বুঝে ২১ অগস্ট তাপসকে গুলি করে ধান জমিতে ফেলে দেওয়া হয়।

    পুলিশের আরও দাবি, সালাউদ্দিন ও তারকের মধ্যেও টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করেই বিবাদের সৃষ্টি হয়। হঠাৎ করেই মার্চ মাসে প্রায় এক সপ্তাহ নিখোঁজ হয়ে যান সালাউদ্দিন। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সিউড়ি থানায় লিখিত অভিযোগে করা হয়। পুলিশ তারককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তারকের লিজ নেওয়া খাদানের নীচ থেকে এ বছর ২৮ মার্চ উদ্ধার হয় সালাউদ্দিন খানের মৃতদেহ। এর পরেই সিউড়ি থানার পুলিশ তারক টুডুকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে তাপস খুনের কথাও কবুল করেছেন তারক। তাপস-খুনের মামলা চলছে মহম্মদবাজার থানায়। এর পরেই তারককে হেফাজতে নেন মহম্মদবাজার থানার তদন্তকারী অফিসারেরা। এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত আছে কি না, তা জানতে তারককে আরও জেরা করা হচ্ছে। আগামী কাল, শুক্রবার তারককে ফেরয় সিউড়ি আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)