চেন্নাই: সীমান্তে যতই উত্তেজনা বা কূটনীতিক স্তরে যতই টানাপড়েন চলুক, মানবিকতার দিক থেকে পাকিস্তানকে যে আলাদা ভাবে দেখে না ভারত, তা বুঝিয়ে দিল আরও একবার। পাকিস্তানি এক তরুণীকে ‘হার্ট’ উপহার দিয়ে নতুন জীবন দিলেন ভারতীয় চিকিৎসকরা!আয়েশা রাশহানের জন্ম ভারতে হলেও কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়। তার পর থেকেই করাচির বাসিন্দা আয়েশার পরিবার। ১৯ বছরের আয়েশার হার্টে সম্প্রতি একটা সমস্যা ধরা পড়ে। পাকিস্তানে চিকিৎসা করিয়ে আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় আয়েশাকে ভারতে নিয়ে আসে তাঁর পরিবার। নিয়ে যাওয়া হয় চেন্নাইয়ের এমজিএম হেলথকেয়ারে।
হার্টের অবস্থা দেখে একমোতে রাখা হয় আয়েশাকে। কিন্তু তার মধ্যেই হার্ট ভাল্ভে দেখা দিয়েছে একটি ছিদ্র! ফলে, হার্ট প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় ছিল না। হৃদ্পিন্ড প্রতিস্থাপনের খরচ প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। এত টাকা খরচ করার সামর্থ্য আয়েশার পরিবারের নেই। এদিকে, দিল্লির এক অঙ্গদাতার হার্ট পাওয়া গিয়েছে, আয়েশার সঙ্গে তা ম্যাচও করেছে।
অন্য দাবিদার না থাকায় আয়েশার কাছে আসে সুবর্ণ সুযোগ। শুধুমাত্র টাকা-পয়সার কারণে এমন সুযোগ হারাবে মেয়েটা? অকালেই থেমে যাবে তাঁর হার্টবিট? এটা মানতে পারেননি ডক্টর কে আর বালাকৃষ্ণণ (হার্ট অ্যান্ড লাং ট্রান্সপ্লান্ট ডিরেক্টর) এবং ডক্টর সুরেশ রাও (কো-ডিরেক্টর)। আর তাই তাঁদের উদ্যোগ এবং একটি মেডিক্যাল ট্রাস্টের সাহায্যে পুরো বিনামূল্যে করা হলো আয়েশার হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি!
হার্ট প্রতিস্থাপনের পর এখন ভালো আছেন আয়েশা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে পাকিস্তানে ফিরেও যেতে পারবেন ১৯-এর তরুণী। পূরণ করতে পারবেন ফ্যাশান ডিজাইনিং নিয়ে পড়ার স্বপ্ন। আয়েশাকে নতুন জীবন দিতে পেরে খুশি চিকিৎসকরাও।
বললেন, ‘আয়েশাও তো আমাদের মেয়ের মতো। দেশ, স্থান আমরা দেখি না, চিকিৎসকদের কাছে প্রতিটি জীবন অমূল্য। ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপনের খরচ অনেক বেশি বলেই অনেক পরিবার তা বহন করতে পারে না। ফলে, অনেকে অঙ্গদানে আগ্রহী হলেও খরচের কারণে গ্রহীতার কাছ পর্যন্ত তা পৌঁছয় না। তাই অন্য চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ করব, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।’
প্রসঙ্গত, ২০২৩-এর সেপ্টেম্বরে করাচির এক পাকিস্তানি পরিবারের ১১ মাসের কন্যাসন্তানের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর চিকিৎসকরাই।