এই সময়: ‘জব উই মেট’ ছবিতে রতলমের সেই হোটেলটার কথা মনে আছে অনেকেরই। আবছা আলো-আঁধারিতে ঢাকা হোটেলের রিসেপশনে বসে থাকা যুবকের চোখে ইঙ্গিতপূর্ণ চাউনি, খুপরি ঘর—সে সব ঠেলে শেষ পর্যন্ত ঘরে ঢোকেন করিনা কাপুর ও শাহিদ কাপুর। খানিক পরে হোটেলে পুলিশের হানা, দেখা যায়, ওই হোটেলের প্রায় সব ঘরেই রমরমিয়ে চলছে মধুচক্র।দেড় দশক আগেকার বহুচর্চিত এই সিনেমার সঙ্গে বাস্তবে দিল্লির পাহাড়গঞ্জের ঘটনার প্রেক্ষাপটের খুব একটা মিল নেই। মিল যা আছে, সেটা হোটেলের এই ছবিটার। রিলের থেকে রিয়েল লাইফে কাণ্ডটা অনেক বেশিই ঘটনাবহুল।
পাহাড়গঞ্জের হোটেলের ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সামনে এনেছেন জনৈক দীপিকা নারায়ণ ভরদ্বাজ। তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ঘটনার কথা শুনে আঁতকে উঠছেন অনেকেই। কারণ, দিল্লিতে গিয়ে পাহাড়গঞ্জের সস্তার হোটেলে ওঠা, অন্তত খানিকক্ষণের জন্য জিরিয়ে নেওয়ার জন্য সস্তার রুম বুক করেন অনেকেই।
এক্স প্ল্যাটফর্মে দীপিকার পোস্ট অনুযায়ী, তাঁর এক বন্ধু কাম সহকর্মী ক’দিন আগে একটা কনফারেন্সের জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। ঘণ্টা খানেকের জন্য শুধু মালপত্র একটা ঘরে ঢুকিয়ে কাজ সেরে আবার বেরিয়ে আসবেন, এমনটাই ছিল প্ল্যান। কিন্তু তাঁকে পথে বসানোর জন্য যে আরও বড় মাস্টারপ্ল্যান করে বসে আছে একটা বড় গ্যাং—সেটা কে জানত!
কাজ সেরে ঘণ্টা কয়েক পরে হোটেলে ঢুকে ওই বন্ধুটি রুম থেকে ব্যাগপত্র বের করতে গেলে জোর করে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে জনা চার-পাঁচ যুবক, সঙ্গে এক মহিলাও। বলা কওয়া নেই, এভাবে হঠাৎ এই মহিলা-পুরুষরা কেন ঘরে ঢুকছেন—সেটা জিজ্ঞেস করার আগেই ওই মহিলা নিজের শরীরের সব পোশাক খুলে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। ওই যুবকদের কয়েকজন চড়-থাপ্পড় মেরে দীপিকার বন্ধুটিকেও জোর করে পোশাক খুলিয়ে মহিলার পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়।
অন্য কয়েকজন নগ্ন মহিলার সঙ্গে ওই যুবকের ছবি ফটাফট ক্যামেরাবন্দি করতে থাকে। তারপরে ওই যুবককে বলা হয়, নগ্ন মহিলার সঙ্গে তাঁর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়া হবে, যদি না তিনি টাকা ছাড়তে রাজি হন। বাধ্য হয়ে কোনওরকমে হাজার পনেরো টাকা আগন্তুকদের হাতে তুলে হোটেল ছেড়েই ওই যুবক বিষয়টি জানান দীপিকাকে।
তাঁর পোস্ট অনুযায়ী, ওই যুবকদের সঙ্গে পুলিশের পোশাকেও একজন ছিল, তাতে তাঁর বন্ধুর মনে হয় পুরো গ্যাংটির সঙ্গে সাঁট রয়েছে লোকাল পুলিশেরও। তাই প্রথমে তিনি পুলিশে অভিযোগও জানাননি ভয়ে। যদিও দীপিকার দাবি, তাঁর পোস্টের পরে দিল্লি পুলিশের তরফ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বন্ধুটির সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা এবং তারা বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
পুলিশের পোশাকে যে ছিল ওই দলে, সে আসল পুলিশ, নাকি নকল—সেটাও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। মঙ্গলবার পোস্ট করা দীপিকারএই পোস্টটি ইতিমধ্যে ১৪ লক্ষ জন দেখেছেন। অনেকে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন। কেউ লিখেছেন, ‘পাহাড়গঞ্জ চোর-পকেটমারে ভর্তি। ক’দিন আগেই চার যুবক আমাকে ঘিরে ধরে মোবাইল-পার্স ছিনতাই করেছে।’
কেউ লিখেছেন, ‘পাহাড়গঞ্জ এমন সব খতরনাক ঘটনার জন্য কুখ্যাত।’ কেউ বা আবার কোনও নামী ও প্রতিষ্ঠিত সংস্থার মাধ্যমে রিভিউ দেখে হোটেল বুক করার পরামর্শ দিচ্ছেন। হোটেল বুক করার সময়ে যে সতর্ক থাকতে হবে—সে পরামর্শ বারবারই দেয় পুলিশ। কিন্তু দীপিকার বন্ধুর ক্ষেত্রে যে ঘটনাটা ঘটেছে, তা নিয়ে পুলিশের বক্তব্য, এটা হলো সেক্সটরশনের একটা নতুন ফাঁদ। এবং এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁদ পেতে নয়, ভার্চুয়ালি আলাপ পরিচয় জমিয়েও নয়—রীতিমতো একটা বড় গ্যাং পাহাড়গঞ্জ বা তার আশপাশ এলাকায় অপারেট করছে বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।
পুলিশের অভিজ্ঞতা বলছে, গত ক’মাসের মধ্যে গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদের মতো দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি জায়গা থেকেও কিছুটা এমন ধরনের সেক্সটরশন গ্যাংয়ের অভিযোগ জমা পড়েছে স্থানীয় থানায়। একটি ক্ষেত্রে যেমন এক ডাক্তারবাবুকে বাড়িতে এসে রোগী দেখার নাম করে ডেকে ফোনে ডেকে পাঠান এক মহিলা। বলেন, তাঁর স্বামী নাকি গুরুতর অসুস্থ। ডাক্তারবাবু ওই ঠিকানায় গেলে তাঁকে আটকে রেখে নগ্ন মহিলার সঙ্গে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয় পাতানো দম্পতি।
পাহাড়গঞ্জের হোটেলে যে গ্যাং অপারেশন চালিয়েছে, তার সঙ্গে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশের ওই চক্রের কোনও যোগ আছে কি না, সেটাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। শাহিদ-করিনা, থুড়ি পর্দার গীত আর আদিত্য ভাগ্যিস রতলমের হোটেলে উঠেছিলেন। আজকের পাহাড়গঞ্জের হোটেলে উঠলে কী যে হতো!