কখনও রোদ, কখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, আবার কখনও কনকনে ঠান্ডা। এককথায়, পাহাড়ের আবহাওয়ার পট বদল হতে সময় লাগে না। অনেকটা, রাজনীতিতেও তাই। স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের দাবিতে অনড় একাধিক রাজনৈতিক দল। মেঘের আড়ালে এখনও জ্বলন্ত ইস্যু হল গোর্খাল্যান্ড। বিজেপি বিধায়কের নির্দল হয়ে দাঁড়ানো, হামরো পার্টির ইন্ডিয়া জোটে যোগদান, বিমল গুরুংয়ের বিজেপিকে সমর্থন, সবটা মিলিয়ে এবারেও দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন বৈচিত্র্যময়।মেঘ সরিয়ে পাহাড়ে রোদ কখন উঠবে, সে কথা বলতে অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদরাও হোঁচট খান। তেমনই, দার্জিলিং লোকসভায় এবার বাজিমাত করবেন কে? উত্তর নেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে। গত তিনবার পদ্মের উপরেই ভরসা রেখেছে পাহাড়বাসি। এবার সেখানে আড়াআড়ি বিভাজন। ‘বহিরাগত’ প্রার্থী রাজু বিস্তাকে নিয়ে দলাদলি বিজেপির অন্দরেই। পার্টি লাইনের বাইরে গিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন কর্শিয়াং-এর বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা।
কালিম্পং এবং উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া (দার্জিলিং লোকসভার অন্তর্গত) বাদ দিয়ে বাকি সব আসনে বিধানসভায় জয়ী হয় বিজেপি। সেক্ষেত্রে, কার্শিয়াং-এর বিধায়কের এহেন পদক্ষেপ বিজেপির জন্য অনেকটা অস্বস্তিজনক বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলে।
অন্যদিকে, জিটিএ নির্বাচনে ৪৫ টি আসনের মধ্যে বিজিপিএম-এর দখলে ছিল ২৭টি আসন। তৃণমূলের নিজের পাঁচটি আসন রয়েছে। গত কয়েক বছরে পাহাড়ে নিজদের প্রভাব বাড়িয়েছে অনীত থাপার দল। যার ফল হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গিয়েছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও। জিজেএম, বিজেপি, হামরো গোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ লড়াই টিকতে পারেনি বিজেপিএমের সামনে। বিজেপির ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর তকমার বিরুদ্ধে ভূমিপুত্র গোপাল লামাকে সেনাপতি করেছে বিজেপিএম - তৃণমূল জোট।
অন্যদিকে, সমতলে নামলে শিলিগুড়ি বিধানসভা আসন তৃণমূলের হাতছাড়া হলেন শিলিগুড়ি পুরসভা নির্বাচনে গত ২০২২ সালে প্রথমবারের জন্য জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। মেয়র গৌতম দেবের নেতৃত্বে সমতল এলাকায় সংগঠন মজবুত করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে শাসক শিবির। ফলত, এবারের নির্বাচনে একদিকে, ছাই চাপা গোর্খাল্যান্ড নির্মাণের আগুন, অন্যদিকে, পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়ন রাজ্য সরকারের প্রতি আস্থা, কোনটা বেছে নেবে পাহাড়ের বাসিন্দারা, সেটার অগ্নিপরীক্ষা শুক্রবার।
প্রসঙ্গত, দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে মোট সাতটি বিধানসভা রয়েছে। উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া এবং কালিম্পং জেলার কালিম্পং বিধানসভা রয়েছে। এই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে বাকি চারটি বিধানসভা দার্জিলিং জেলার মধ্যে পড়ছে। দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪৪ জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৪৮ জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৪২ জন। মোট ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা রয়েছে ১৯৯৯টি।