‘বাবা মন্ত্রী হবে বলে গোঁসা হয়েছিল?’ স্মৃতিচারণায় অধিকারী ‘পিতা-পুত্র’কে তুলোধোনা মমতার
এই সময় | ২৬ এপ্রিল ২০২৪
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতির মানচিত্রে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অধিকারী পর্বের উত্থান। কংগ্রেস আমল থেকেই অবিভক্ত মেদিনীপুরের বিতীর্ণ অংশে অধিকারী পরিবার একাধিপত্য বিস্তার করেছে। সেখানেই আবার, নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি হয়ে উঠেছিল বাম জমানার শেষের দিকে। সেই অধিকারী বংশের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যের সখ্যতা নেই বললেই চলে। গত লোকসভাতেও এই জেলার দুটি লোকসভা আসন ছিল তৃণমূলের দখলে। এবার সেই জেলায় অধিকারী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক কিছু তথ্য তুলে ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।ঘটনাচক্রে তমলুকের জনসভা থেকে বক্তৃতার মাঝে কোনওভাবেই শুভেন্দু এবং শিশির অধিকারীর নাম মুখে আনেননি মুখ্যমন্ত্রী। পিতা-পুত্র বলে সম্বোধন করেছেন তাঁদের। তাঁর স্মৃতিচারণায় উঠে আসে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথাও। তিনি বলেন, ‘নন্দীগ্রামে যখন গিয়েছিলাম, সে দিন ওই পিতা-পুত্র কেউ ছিল না। কেউ আসেনি। সারারাত বোমা-গুলির আওয়াজ শুনেছিলাম। তখনও কিন্তু কেউ আসেননি। আমি কিন্তু পিছু হটেনি। চিত্ত মাইতি আমাকে থাকতে দিয়েছিল।’ এমনকি, শিশির অধিকারীকে মন্ত্রী করার সময় শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত ছিলেন না বলেও দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাবা মন্ত্রী হবে বলে ওর গুস্সা হয়েছিল। বাবা মন্ত্রীর শপথ নিলেও তাই ও সেখানে যায়নি। এঁদের কাছ থেকে শিক্ষা নেব?'
'সবার চাকরি খেয়েছ, তোমায় ছেড়ে দেব?' কটাক্ষ মমতার
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রামের সেই আন্দোলনের ইতিহাস নিজের কিছু বইতে উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা প্রসঙ্গে তুলে আনেন সেই বইয়ের কথাও। মমতা বলেন। ‘ আমি ওদের কথা বইয়ে লিখেছিলাম, ভুল লিখেছিলাম, নিজেদের লোকের নাম করব না? তাই লিখেছিলাম। এখন সংশোধন করে দেব। কারণ আমি ১০ দিন ওখানে পড়েছিলাম। পিতা-পুত্র কেউ বাইরে বেরোয়নি।’
তমলুক থেকে এবার প্রার্থী করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। অন্যদিকে, জেলার আরেক লোকসভা কেন্দ্র কাঁথি থেকে প্রার্থী হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। এদিনের সভা থেকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কেও চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করতে ছাড়েননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, বক্তব্যের আগাগোড়ায় তাঁর নিশানায় ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মমতা বলেন, ‘ কংগ্রেস যখন করতাম, ও তিন বার দাঁড়িয়েছে, প্রতিবার আমি এসেছি। ও গোহারা হেরেছে।’
মেদিনীপুরের এই দুইটি কেন্দ্র এবারের লোকসভা নির্বাচনের জন্য সম্মানরক্ষার লড়াই দুই দলের কাছেই। বাম জমানার শেষের দিক থেকে যে কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে ছিল, সেই কেন্দ্র এবার পালাবদলের স্বপ্ন দেখছেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে, এই কেন্দ্র আদতে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশেই দাঁড়াবে, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় ‘গদ্দার’দের পাশে নয়, সেটাই এদিন পরিষ্কার করে দেন তাঁর সভা থেকে।