এই সময়: সানডে নাইট বলে কথা। ওঁরা, কয়েক জন বন্ধু মিলে ঠিক করলেন, রাতভর আড্ডা হবে, নাইট আউট চলবে। গান, মজা, গল্পগুজবের সঙ্গে থাকবে জম্পেশ খাবার-দাবার। না-হলে কি আর পার্টি জমে? কিন্তু ভাবনায় থাকা ফান নাইট যে এ ভাবে নাইটমেয়ারে পরিণত হবে, সেটা ওঁরা ভাবতেই পারেননি। ওঁদের প্ল্যান চৌপট করে দেওয়া ভিলেন একটি পিৎজ়া। হ্যাঁ, যে ইটালিয়ান চটজলদি খাবার দুনিয়া জুড়ে অনেকেরই কমফর্ট ফুড।গত রবিবার, ২১ এপ্রিল কলকাতার একদল তরুণ-তরুণী রাতে আড্ডা দেবেন বলে টালিগঞ্জে তাঁদের এক বন্ধুর বাড়িতে হাজির হন। রাত দেড়টা নাগাদ তাঁরা ক্যামাক স্ট্রিটে পিৎজ়ার একটি ঠেক থেকে বেশ কয়েকটি পিৎজ়া অর্ডার করেন। ঠিক সময়ে খাবার পৌঁছেও যায়। কিন্তু তার মধ্যে একটি পিৎজ়ার একটি স্লাইসে প্রথম কামড় দিতেই বিপত্তি! পিৎজ়ার ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো একটি গ্লুকোমিটারের রক্তমাখা স্ট্রিপ!
ঘিনঘিনে ব্যাপার বলতে যা বোঝায়, তা-ই। বিরিয়ানিতে টিকটিকি, ডালমুটে আরশোলার ঠ্যাং-পাখনার পর এ বার এই কাণ্ড। ওই তরুণ-তরুণীদের অভিযোগ পেয়ে লালবাজার থেকে স্থানীয়, অর্থাৎ শেক্সপিয়র সরণি থানাকে আইনি পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পিৎজ়ার ঠেক বা রেস্তরাঁটি ওই থানা এলাকার। রাত দেড়টা নাগাদ জেন জ়ি-র ওঁরা ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে ক্যামাক স্ট্রিটের ওই নামী পিৎজ়া-আউটলেট থেকে মোট দেড় হাজার টাকার পিৎজ়া অর্ডার করেন।
তার পর?
ভবানীপুরের সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘একটা পিৎজ়ায় প্রথম কামড়টা দেওয়ার পরেই আমি বুঝি, তাতে অন্য রকম কিছু রয়েছে। তখনই পিৎজ়া থেকে কী যেন একটা নীচে পড়ে গেল। ঘরে আলো কম থাকায় প্রথমে বুঝতে পারিনি। তার পর ঘরের সব আলো জ্বালিয়ে দেখলাম, ব্লাড সুগার টেস্টের গ্লুকোমিটারে যে স্ট্রিপে রক্ত দিয়ে টেস্ট করতে হয়, সেটা পড়ে রয়েছে!’ ওটা দেখার পরেই গা গুলিয়ে ওঠে সাগ্নিক ও তাঁর বন্ধুদের। সাগ্নিকই ওই পিৎজ়া মুখে তুলেছিলেন বলে ঘেন্নায় তিনি বমি করে ফেলেন।
খবর দেওয়া হয় পিৎজ়ার ওই ঠেকে। ভিডিয়ো তুলেও পাঠানো হয়। কিন্তু অভিযোগ, সব জানানো হলেও পিৎজ়ার ওই আউটলেটটি কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। টালিগঞ্জ থেকে সাগ্নিকরা দল বেঁধে অত রাতে ক্যামাক স্ট্রিটের ওই রেস্তরাঁয় যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। ভুক্তভোগীদের অন্যতম, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনুষ্কা দত্ত বলছেন, ‘আমরা বার বার করে রেস্তরাঁকে সব বললেও ওঁরা আমাদের কথায় কর্ণপাত পর্যন্ত করলেন না। আমরাও বুঝলাম, ওখানে হইচই করে কোনও লাভ নেই। রাত আড়াইটে-তিনটে নাগাদ আমরা শেক্সপিয়র সরণি থানায় রিপোর্ট করতে গেলাম।’
ওই তরুণ-তরুণীদের বক্তব্য, পুলিশ সব শুনে ওই রেস্তরাঁর এক কর্মীকে ডেকে এনে ধমকও দেয়। কিন্তু থানা লিখিত অভিযোগ নিলেও তার ভিত্তিতে এফআইআর দূরের কথা, জেনারেল ডায়েরি পর্যন্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ। অনুষ্কার কথায়, ‘আমরা সোমবার ভোর পর্যন্ত থানায় ছিলাম। সকাল ৬টা-সাড়ে ৬টা নাগাদ বাড়িতে ফিরি। বুঝলাম, পুলিশ কিছুই করবে না। তাই, আমরা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) এবং জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা ফোরামে ই-মেল করে অভিযোগ করেছি। জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা ফোরাম সেই মামলা শুরু করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
এই ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া পেতে ‘এই সময়’-এর তরফে ক্যামাক স্ট্রিটে পিৎজ়ার ওই রেস্তরাঁয় ফোন করা হয়। তবে সব শোনার পরেও এই ব্যাপারে তাঁরা প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। শুধু তাঁদের স্টোর থেকে জানানো হয়েছে, ‘ওই রাতে কিছু ছেলেমেয়ে এসে হল্লা করছিল। তার পর পুলিশ আসে। পুলিশই যা করার, করছে।’ কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ওয়ান) মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘লোকাল থানাকে এই ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছি।’ সাগ্নিকের বক্তব্য, ‘ওই ঘটনার পর থেকে আমি বাইরের খাবার তো দূর, ঘরের খাবারও ঠিক মতে খেতে পারছি না। সারাক্ষণ একটা ঘেন্না আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।’