• কলকাতা হাই কোর্টই তুলে দেওয়া উচিত, চাকরি বাতিল নিয়ে তোপ অভিষেকের
    প্রতিদিন | ২৬ এপ্রিল ২০২৪
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কলকাতা হাই কোর্টকে তুলে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ‌্যায়। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় এমনটাই বললেন তিনি নিজে। অভিষেক অভিযোগ করেন, কলকাতা হাই কোর্টের একাংশ যেভাবে বিজেপির সঙ্গে যোগসাজোশ করে চলছে, তাতে ওই আদালত তুলে দেওয়া উচিত। শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের সাম্প্রতিক রায় (SSC Recruitment Veridict) প্রসঙ্গে তিনি মন্তব‌্য করেন, এটা ‘ম‌্যাচ ফিক্সিং’ বা বেটিংয়ের মতো। তিনি হাই কোর্টের রায়কে ‘অর্ডার ফিক্সিং’, ‘কোর্ট ফিক্সিং’ বলে অভিহিত করেন।

    বৃহস্পতিবার অভিষেক দলীয় কর্মসূচিতে পুরুলিয়ায় ছিলেন। রাঘবপুর মোড় এলাকার একটি বাগানবাড়িতে কর্মী বৈঠকের পর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ‌্যায়ের প্রসঙ্গ তুলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘একজন বিচারপতি, বিচারপতি থাকাকালীন বলেছেন, ‘বিজেপি অ্যাপ্রোচ মি, আই অ্যাপ্রোচ বিজেপি’। তার মানে বিজেপির সঙ্গে তিনি যোগাযোগে ছিলেন। আর সেই বিচারপতি যদি বিজেপিতে যান তাহলে ভারতবর্ষ থেকে কলকাতা হাই কোর্টকে তুলে দেওয়া উচিত।’’ তিনি এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘‘বেটিং-র নতুন মাত্রা অ্যাড করেছে কলকাতা হাই কোর্টের একাংশ। বিজেপির লোকেরা বেটিং করছেন। আর সেই বেটিংয়ের দোসর হিসাবে কাজ করছেন বিচারকের আসনে থাকা বিচারপতিরা।’’ এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার বলেও তাঁর দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মনে করি গণতন্ত্রে কারও কোনও ক্ষমতা নেই। শেষ কথা বলবে মানুষ। বিচারব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম, বিজেপি, ইডি, সিবিআই, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, ইলেকশন কমিশন যার যত ক্ষমতা আছে প্রয়োগ করে নিন। ৪ তারিখ ভোট বাক্স খুললে দেখবেন জয় মানুষের হবে। চক্রান্তকারীদের নয়।’’

    আদালতের রায়ে শিক্ষকদের চাকরি যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আদালতের তর্ক হিসাবে, যুক্তি হিসাবে যদি আমি দেখি এক হাজার, দেড় হাজার জন বাড়তি প্যানেলের বাইরে থেকে চাকরি পেয়েছেন, তাই পুরো প্যানেল বাতিল। একজন বিচারপতি বিজেপিতে জয়েন করেছেন, তার মানে তো সব বিচারপতি বিজেপি হয়ে গেল তা আমি তো বলছি না। যদি আপনার যুক্তি ধরে নিই, তার মানে তাহলে তো তাই হচ্ছে। বিচারপতি বলেছেন, সবার চাকরি বাতিল করে দেওয়া হোক। তার দু’দিন আগে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, আমি সপ্তাহের শুরুতেই বোমা ফাটাব।’’ এদিন সেই বিষয়টি তুলে অভিষেক বলেন, ‘‘একটা সপ্তাহ শুরু হয় কবে? সোমবার। রায় হয় কবে? সোমবার। এটা কি কাকতালীয়? আমি এই প্রশ্নটাই সাধারণ মানুষের কাছে রাখছি।’’ অভিষেকের কথায়, ‘‘প্যানেলের বাইরে কিছু লোক চাকরি পেয়েছে বলে গোটা প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক, বেদনাদায়ক। এমন বিষয় ভূ-ভারতে আমরা কোথাও দেখিনি। কলকাতা হাই কোর্টের একাংশ বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশে রয়েছেন। তাঁদের কথায় বিচার ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়ে রায় দিচ্ছে। কেন শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে না?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আদালতের বিচারপতিরা যাঁরা এসএসসি মামলা শুনছিলেন, তাঁরা আজ বিজেপির প্রার্থী। তাঁরা পরিকল্পিতভাবে বিজেপির কথায় রায় দিচ্ছেন।’’ এই বিষয়ে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, হতে পারে ১০ জন, ১০০ জন, ১০০০ জন, ৫ হাজার জন লোক দুর্নীতি করেছেন। তার জন্য আপনি ৬০ লাখ মানুষের টাকা বন্ধ করতে পারেন না। আজকে ২০ হাজার যোগ্য লোকেরও চাকরি কেড়ে নিল আদালত।’’

    যাঁদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের প্রতি অভিষেকের বার্তা, ‘কারও চাকরি যাবে না।’ তাঁর কথায়, ‘‘যাদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের অনুরোধ করব, আপনারা বিব্রত হবেন না। বিরত হবেন না। দলগতভাবে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তৃণমূল কংগ্রেস আপনাদের পাশে ছিল, থাকবে। যাঁরা মেধাযুক্ত, যাঁদের চাকরি প্রয়োজন, যাঁরা কষ্ট করে মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের কারও চাকরি আমরা যেতে দেব না। আজ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই যে হাই কোর্টের অর্ডার, তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিজেপির দুর্নীতি রয়েছে।’’ বিজেপিকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি যেভাবে ৪ জন দুর্নীতি করলে ১০০ জনের টাকা আটকে দেয়, সেই ভাবেই কিছু লোক প্যানেলের বাইরে চাকরি পেয়েছে বলে গোটা প্যানেলকে বাতিল করে দিয়েছে।’’
  • Link to this news (প্রতিদিন)