• Harvey Weinstein : ট্রায়ালে পক্ষপাত! ধর্ষণ মামলায় হার্ভের কারাদণ্ড খারিজ সুপ্রিমে
    এই সময় | ২৬ এপ্রিল ২০২৪
  • নিউ ইয়র্ক: ২০১৭ সালে দুনিয়া কেঁপে গেছিল দু'টি শব্দে। 'মি টু'। মহিলাদের যৌন নির্যাতন, সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, শারীরিক নিগ্রহ এমনকী ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগের কাঠগড়ায় উঠেছিলেন হার্ভে ওয়েনস্টাইন। হলিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রযোজকের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে ঘটে চলা যৌন নির্যাতন নিয়ে মুখ খুলেছিলেন শতাধিক মহিলা।তাঁদের মধ্যে ছিলেন অ্যাশলে জুড, গোয়েনিথ প্যালট্রোর মতো হলিউডের সুপারস্টাররাও। একাধিক ধর্ষণ ও যৌন নিগ্রহের মামলায় ২০২০ সালে ২৩ বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয় হার্ভেকে। গোটা হলিউডের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া সেই মামলায় এ বার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট।

    হার্ভের কারাদণ্ডের রায় খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ওই মামলা শোনার সময় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছিলেন ট্রায়াল কোর্টের বিচারক। হলিউডের ক্ষমতার বৃত্তের একেবারে শীর্ষ থেকে গত কয়েক বছরে জেলের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছেন হার্ভে ওয়েনস্টাইন। বিলিয়নেয়ার মুভি প্রোডিউসার এখন কপর্দকশূন্য দণ্ডিত আসামি। ছেড়ে গিয়েছেন স্ত্রী-পরিবার।

    তাঁর হাতে তৈরি মাল্টি বিলিয়ন ডলার কোম্পানি বিকিয়ে গেছে দেউলিয়া হয়ে। মি টু আন্দোলনের ঢেউ হার্ভের দরজা থেকে শুরু হয়ে আছড়ে পড়েছিল সারা দুনিয়ায়। অতি প্রভাবশালী এই প্রোডিউসারের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিয়েছিলেন অসংখ্য মহিলা। ওই আন্দোলনের জেরে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হেনস্থা রোধে বহু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় বড় কর্পোরেট হাউস, ফিল্মি দুনিয়া থেকে সরকার পর্যন্ত।

    কিন্তু এ বার সেই বিচারপদ্ধতি নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ৭২ বছরের হার্ভে এই মুহূর্তে নিউ ইয়র্ক জেলে বন্দি। ২০০৬ সালে এক প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্টকে জোর করে ওরাল সেক্সে বাধ্য করা ও ২০১৩ সালে এক উঠতি অভিনেত্রীকে ধর্ষণের মামলায় ২৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল তাঁর। তবে এ দিনের মামলায় মুক্তি পেলেও এখনই জেল থেকে ছাড়া পাবেন না হার্ভে।

    ২০২২ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে আর একটি ধর্ষণের মামলায় ১৬ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তাঁর। সুপ্রিম কোর্ট এ দিন বলেছে, নিউ ইয়র্কের মামলায় ট্রায়াল জাজ জেমস বার্ক হার্ভে ওয়েনস্টাইনকে দোষী সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্যে ওই মামলার সঙ্গে সম্পর্কহীন একাধিক মহিলাকে সাক্ষী দিতে ডেকেছেন। উইটনেস বক্সে তাঁদের সাক্ষ্য জুরিদের প্রভাবিত করেছে। হার্ভে ওয়েনস্টাইন দোষী হওয়া সত্ত্বেও, ট্রায়াল কোর্টের বিচারকের এই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ফলেই ন্যায়বিচার ঘটতে পারেনি। তার সুযোগেই মুক্তি দিতে হলো রিপিট অফেন্ডার হার্ভেকে।

    হলিউডের ক্ষমতাবৃত্তে হার্ভে ওয়েনস্টাইনের সমতুল কাউকে পাওয়া কঠিন। গত চার দশকে অস্কারে মঞ্চে সবচেয়ে বেশিবার ধন্যবাদ জানানো হয়েছে যে তিনজনকে তার প্রথম নামটি স্বয়ং ঈশ্বরের ও দ্বিতীয় নামটি স্টিভেন স্পিলবার্গ। সেই তালিকায় তিন নম্বর নামটি ছিল হার্ভে ওয়েনস্টাইনের।

    'গুড উইল হান্টিং,' পাল্প ফিকশন', 'দ্য ইংলিশ পেশেন্ট', 'শেক্সপিয়র ইন লাভ'-এর মতো অসংখ্য অস্কারজয়ী ছবি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। শূন্য থেকে শুরু করে ভাইয়ের হাত ধরে তৈরি করা তাঁর প্রোডাকশন কোম্পানি মিরাম্যাক্স ও পরে দ্য ওয়েনস্টাইন কোম্পানি ছিল হলিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রোডাকশন হাউস। হলিউডের ব্লকবাস্টার মেনস্ট্রিম মুভির বাইরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে আনার পিছনে তাঁর অবদান অস্বীকার করেন না কেউই।

    কিন্তু আগাগোড়াই হার্ভের বিরুদ্ধে নাররীনিগ্রহের অভিযোগ ছিল। তাঁর বিপুল ক্ষমতার ভয়ে সাধারণ কর্মচারীরা তো বটেই, মুখ খুলতে সাহস পাননি হলিউডের মহিলা তারকারাও। ২০১৭ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দ্য নিউ ইয়র্কার তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন তদন্তের পর হার্ভের এই ধারাবাহিক অপরাধের তথ্য প্রকাশ্যে আনে। সেই খবর প্রকাশের পর ভয় কাটিয়ে এগিয়ে এসে মুখ খোলেন আরও অনেক মহিলা।

    মামলা শুরু হওয়ার পরেও অসংখ্য মহিলা সাক্ষ্য দেন আদালতে। কিন্তু সেই অভিযোগগুলির প্রত্যুত্তরে হার্ভেকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। উল্টে হার্ভের পূর্ব অপরাধগুলি নিয়ে বই লেখা এক ব্যক্তিকে জুরির আসন থেকে সরাতে দেননি ওই বিচারক।

    এ বার সেই সাক্ষ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। মামলার সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নিয়ে মূল মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টার বিচার হওয়া উচিত বলেও মনে করেছে শীর্ষ আদালত। প্রত্যাশিত ভাবেই আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন হার্ভের আইনজীবীরা।

    উল্টোদিকে, হার্ভের নির্যাতনের শিকার মহিলাদের আইনজীবী ডগলাস উইগডোর বলেন, 'এই রায় যৌন অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করার পক্ষে বিরাট ধাক্কা।'
  • Link to this news (এই সময়)