West Bengal Voter Turn Out : দেশের এক তৃতীয়াংশ ভোটার বুথ বিমুখ, স্রোতের বিপরীতে বাংলা ভোটের হারে কেন এগিয়ে?
এই সময় | ২৬ এপ্রিল ২০২৪
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, প্রথম দফা লোকসভা ভোটে মোট ভোটদানের হার ছিল ৬৯.৩২ শতাংশ। যা ২০১৯ সালের লোকসভার প্রথম দফার প্রায় সমপরিমাণ (৬৯.৫ শতাংশ)। পাঁচ বছর আগেও লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল।২১টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে, গত সপ্তাহের প্রথম দফার লোকসভা ভোটে ভোটদানের হারে বিরাট ফারাক দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে লাক্ষাদ্বীপে (৮৪.১৬ শতাংশ) এবং সবচেয়ে কম ভোট পড়ে বিহারে (৪৯.২৬ শতাংশ)। চলতি বছর লোকসভা ভোটের প্রথম দফায় সর্বাধিক ভোটদানের ট্রেন্ড ভেঙে দিয়েছে নাগাল্যান্ড। ২০১৯ সালের ৮৩ শতাংশ ভোটদানের বদলে এ রাজ্যে এবার ভোট পড়েছে মাত্র ৫৭.৭২ শতাংশ। একাধিক এলাকায় ভোট বয়কটের ডাক পড়েছিল নাগাল্যান্ডে। ছয় রাজ্যে ভোটদানের হার শূণ্য শতাংশ। ২০১৪ সালে এই নাগাল্যান্ডেই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছিল (৮৭.৮২ শতাংশ)। ২০০৯ সালে ভোট পড়েছিল (৮৯.৯৯ শতাংশ)। নাগাল্যান্ডের পাশাপাশি ত্রিপুরা এবং সিকিমেও ভোটদানের হার বেশি।
এ ছাড়াও আরও অনেক বড় বড় রাজ্য রয়েছে যেখানে ভোটারদের হার তুচ্ছ। অবশ্যই ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় উত্তর প্রদেশের কথা। গত তিন লোকসভা ভোটে সবচেয়ে কম ভোটের হারের পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে ছিল যোগী রাজ্য। ২০১৯ সালে ৫৯.২১ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৫৮.৩৫ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে সেখানে ভোট পড়েছিল ৪৭.৭৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে উত্তর প্রদেশের রেজিস্টার্ড ভোটারের অর্ধেকাংশ ভোটদান করেননি। এরপরের দুই ভোটে ৪০ শতাংশ ভোটার ভোটদান করেননি। সংসদের নিম্নকক্ষের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে উত্তর প্রদেশে আসন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (৮০)।
একইরকম রেকর্ড মহারাষ্ট্রের। সে রাজ্যে রয়েছে মোট ৪৮টি আসন। ২০১৯ সালে ভোট পড়েছিল ৬১.০২ শতাংশ, ২০১৪ সালে পড়েছিল ৬০.৩৬ শতাংশ। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইও সবচেয়ে কম ভোট পড়ার জন্য খবরের শিরোনামে থাকে। ১৯৯১ সালের পর থেকে কেবলমাত্র তিনবার মুম্বইয়ে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। মুম্বই একমাত্র মেট্রোপলিটন শহর যেখানে এমন রেকর্ড রয়েছে। কিছুটা ভালো পরিস্থিতিতে রয়েছে দিল্লি। দেশের রাজধানীতে ২০১৯ সালে ভোট পড়েছিল ৬০.৬ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে পড়েছিল ৬৫.০৭ শতাংশ।
জম্মু এবং কাশ্মীরেও বরাবর কম ভোটের হার থাকে। ২০১৯ সালে ভোট পড়েছিল ৪৪.৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে ৪৯.৫২ এবং ২০০৯ সালে পড়েছিল ৩৯.৬৮ শতাংশ ভোট।
উল্লেখ্য, ১৯৫১-৫২ সালে দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৬১.১৬ শতাংশ। এরপর ২০১৯ সালে ভোটারদের হার রেকর্ড তৈরি করে (৬৭.৪০ শতাংশ)। ২০১৪ সালে ভোটের হার ছিল ৬৬.৪০ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ২৯৭ মিলিয়ন রেজিস্টার্ড ভোটার ভোটদান করেননি।
সেফোলজিস্ট তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয় মুর্গ একটি সংবাদমাধ্যমে জানান, ভোটারদের হার দেখে বোঝা যায় একটি দেশের গণতান্ত্রিক চেহারা কেমন। কম ভোটের হার ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ত ভোটারের ইঙ্গিত। আবার ভোটের হার বেশি থাকবে সরকার বিরোধী ভোট হওয়ার সুযোগ থাকে বলেও মনে করেন তিনি।
যদিও ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে দেশে ভোট পড়েছিল ৫৮ থেকে ৬০ শতাংশ। সে দু'বারই একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ক্ষমতা পেয়েছিল কংগ্রেস। ২০১৪ সালের মোদী হাওয়ার সময় ভোটের হার ছিল ৬৬.৪ শতাংশ। যা ১৯৮৪ সালের পর সবচেয়ে বেশি।
কেন বড় রাজ্য হয়েও ভোটের হারে ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ?সেফোলজিস্ট তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয় মুর্গ বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার মতো রাজ্যে ভোটারদের সংঘবদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দলগুলি। রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং ক্যাডার ভিত্তিক দল CPIM-এর জন্যই ভোটের হার বেশি হওয়া বাংলায় অতীত থেকেই ট্রেন্ড। এই রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলির কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ এবং নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলে।'
সাংবাদিক তথা লেখক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে, 'শহুরে মানুষের উদাসিনতা ভোটের হার কম থাকার অন্যতম কারণ। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বরাবরই ভোট নিয়ে সচেতন মানুষের সংখ্যা বেশি। ইতিহাস বলছে বঙ্গের ভোটের হার বরাবরই বেশি।' এই বিশেষজ্ঞের মতে, কর্মসূত্রে নিজের কেন্দ্রে না থাকতে পারায় অনেক রাজ্যেই ভোটের হার কম হয়।