এই সময়, নয়াদিল্লি: ধর্মের নামে ভোট চেয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে দেশের সংবিধান-বিরোধী আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। লোকসভা ভোটের আবহে প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থান নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধির পরিপন্থী দাবি করে এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রার্থীপদ খারিজ এবৼ৾ং আগামী ৬ বছরের জন্য তাঁর ভোটে লড়াই করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে সম্প্রতি দায়ের করা হয়েছে মামলা৷ শুক্রবার এই মামলার শুনানি নির্ধারিত থাকলেও বিচারপতি সচিন দত্তা ব্যস্ত থাকায় তা এ দিন হয়নি। সোমবার ২৯ এপ্রিল এই মামলার শুনানি হবে৷এই মামলার আবেদনকারী একজন আইনজীবী, আনন্দ এস জোনধালে৷ তাঁর অভিযোগ, গত ৯ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের পিলভিটে জনসভা সম্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দু ও শিখদের আরাধ্য দেবদেবী এবৼ৾ং দেবস্থান সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলেছেন৷ একইসঙ্গে তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে আক্রমণ করতে গিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের টেনে এনে একের পর এক সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেই চলেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর এই আচরণ সংবিধান-বিরোধী বলে অভিযোগ তাঁর৷ মামলাকারীর দাবি, ভোটের মরশুমে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নিজের ভাষণে কোনও সম্প্রদায়ের ধর্মস্থান বা ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কোনও বক্তব্য পেশ করতে পারেন না৷ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর জন্য তিনি প্রথমে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ কিন্তু কমিশন তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি দিল্লি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন৷ তবে, বৃহস্পতিবার মোদীর 'সাম্প্রদায়িক মন্তব্যে'র জন্য তাঁর দলকে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। তাতে অবশ্য কোনও লাভ হয়েছে বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। কারণ শুক্রবারও মোদী সেই মুসলিম তাস খেলেছেন।
এ দিন বিহারের আরারিয়ায় প্রচারে গিয়ে বলেন, 'কংগ্রেস ধর্মভিত্তিক রিজার্ভেশন বাস্তবায়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তারা দেশে কনার্টকের সংরক্ষণ মডেল আনতে চায়, তারা ওবিসি সম্প্রদায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবৼ৾ং কর্নাটকের সব মুসলিমকে ওবিসি তালিকায় এনেছে... বিহার এবৼ৾ং দেশের অন্য অংশেও একই কাজ করতে চায়।' যদিও কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাই আগেই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে বলে মানুষকে ভুল পথে চালনা করছেন। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ করছেন। তবে এ সব নিয়ে মোদীর কোনও মাথাব্যথা নেই। তিনি বলেন, 'কংগ্রেস গভীর ভাবে SC, ST এবং OBC-দের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে এবং আমি অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে এটি বলছি। বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর খুব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ভারতে ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণ থাকতে পারে না।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও সেই মুসলিম অস্ত্রেই কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন নতুন ইস্যু নিয়ে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি রাহুল গান্ধীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, 'দেশ কি এরপর শরিয়ত মেনে চলবে? কী চায় কংগ্রেস?' লোকসভা ভোটের ইস্তাহারে কংগ্রেস বলেছে, দল ক্ষমতায় এলে ব্যক্তিগত আইনের পরিসর আরও বাড়ানো হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই শাহের তোপ। শুক্রবার সকালে মুসলিম অস্ত্রে কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন বিজেপি সভাপতি নাড্ডাও। বলেছেন, কংগ্রেসের গোপন অ্যাজেন্ডা হল গরিব মানুষের সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া। গত কয়েক দিন ধরে মোদী অভিযোগ করে আসছিলেন কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে।