• পদ্ম শিবির নেতারা আগে ব্যবস্থা নিলে মনোনয়ন বাতিল হতো না
    বর্তমান | ২৭ এপ্রিল ২০২৪
  • সৌম্যদীপ ঘোষ, সিউড়ি: বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দেবাশিস ধরের নাম ঘোষণার পর থেকেই নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রী  বারবার তাঁর চাকরি জীবনের ‘ক্লিয়ারেন্স’ নিয়ে প্রকাশ্য সভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন। কয়েকদিন আগে হাসনের জনসভা থেকেও এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সবকিছু জানা সত্বেও কেন আগেভাগে রাজ্য সরকারের ‘নো ডিউস’ সার্টিফিকেট চেয়ে আদালতের দারস্থ হননি দেবাশিসবাবু? সেই প্রশ্নই জোরালো হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। তবে কী তিনি বিজেপি দলের ষড়যন্ত্রের শিকার? এমন প্রশ্ন নিয়েও জলঘোলা চলছে জেলার  রাজনৈতিক মহলে। কেননা, প্রার্থী হিসেবে তাঁকে ‘না পসন্দ’ ছিল বীরভূম জেলা বিজেপি অনেক নেতারই। 

    শুক্রবার স্ক্রুটিনিতে ‘নো ডিউস’ সার্টিফিকেট না দেওয়ার কারণে মনোনয়ন বাতিল হয় বীরভূম লোকসভার ঘোষিত বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধরের। তার বদলে আগের দিন মনোনয়ন জমা করা দলের রাঢ় বঙ্গের কো-কনভেনার দেবতনু ভট্টাচার্যই শেষমেশ বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়াই করবেন। এদিনই দলের নেতারা তা স্পষ্ট করে দেন। তা হলে দেবাশিসবাবু এখন কী করবেন? তাঁর যুক্তি, ‘আগেও সাধারণ মানুষ হিসেবে বাঁচতাম। এখনও সাধারণ মানুষ হয়েই থাকব। দল যা বলবে তাই করব।’

    তবে, এই ঘটনার ফলে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। বিশেষ করে বীরভূমের বিজেপি কর্মীরা যেভাবে দেবাশিসের হয়ে জোরকদমে প্রচারে নেমেছিলেন তাঁরা হতাশ। রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই প্রশ্ন, দেবাশিসবাবু একজন দক্ষ পুলিসকর্তা হয়েও কেন এই ভুল করলেন? এতদিন ধরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শাসকদলের একাধিক নেতা তাঁর চাকরি জীবনের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর চাকরি জীবনের ‘ক্লিয়ারেন্সের’ বিষয় নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। সেক্ষেত্রে তো তিনি আগেভাগেই আদালতে যেতে পারতেন? কিংবা মনোনয়নের হলফনামাতে ‘নো ডিউস’ এর জায়গায় ‘নট অ্যাপ্লিকেবল’-এর পরিবর্তে অন্য কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যেত কি না সেই পরিকল্পনাও তিনি করতে পারতেন।। 

    অন্য অংশের দাবি, বিজেপির উচ্চ নেতৃত্ব কেন রাজনীতিতে আনকোরা দেবাশিসবাবুর এই বিষয়গুলি নিয়ে আগেভাগে ভাবনাচিন্তা করেনি। সেটাও ভাবাচ্ছে রাজনীতির কারবারিদের। দলের বেশ কয়েকজন কর্মী তো সরাসরি এর পিছনে দলেরই কারও ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছেন! তা না হলে এই বিষয়ে আগেই আদালতের দারস্থ হওয়ার বন্দোবস্ত করা হতো। আর সেটা হলে এখন আর তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা হতো না দেবাশিসবাবুর। যা দলের পক্ষেও ভালো হতো। এভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।

    নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জেলা স্তরের এক নেতা বলেন, বোলপুর আগেই আমাদের হাত থেকে চলে গিয়েছে। এবার এই আসনটাও গেল! বড়রা সর্বদা ছোটদের গাউড করেন। রাজনীতিতে দেবাশিসবাবু অন্য অনেকের চেয়ে ছোটই বটে। দলের যাঁরা কনভেনার কিংবা উপদেষ্টা পদে রয়েছেন তাঁরা তাঁকে পরামর্শ দিতে পারতেন। ভেতরে ভেতরে এত কিছু হচ্ছে জেনেও সবাই চুপচাপ ছিলেন। দেবাশিসবাবু অবশ্য বলেন, ‘কেন্দ্র সরকারের নির্দেশমতো রাজ্য সরকার আমাকে সবকদিক থেকে রিলিজ দিয়েছে। তবুও একটা কারণ খাড়া করা হল। এবার আদালত যা বলবে সেটাই হবে।’ দলের এক রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা আগে জানতে পেরেইবিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিলাম। দেবতনুদাকে জেতাতে দেবাশিসবাবু সহ জেলার সমস্ত কার্যকর্তারা মাঠে নেমে লড়বেন। মোদিজির মুখ দেখে মানুষ ভোট দেবেন। এদিকে, এই ইস্যুতে অনেকটায় ফুরফুরে শাসকদল তৃণমূল। প্রার্থী শতাব্দী রায় থেকে দলের নেতারা দেবাশিসবাবুর প্রতি সহানুভূতিও জানিয়েছেন।  দলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আইনত প্রশ্নে ওঁর প্রার্থীপদ খারিজ হয়েছে শুনেছি। এতে ওঁদের যে টুকু পকেট ভোট ছিল সেটাও গেল।’

      মনোনয়ন বাতিলের পর সিউড়ির প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে আসছেন দেবাশিস ধর (উপরে)।  (নীচে) বিজেপির বর্তমান প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্য। 
  • Link to this news (বর্তমান)