• পাঁশকুড়ায় সালিশি করে বিজেপি নেতাকে হেনস্তা ও জরিমানা, প্রতিবাদে ইস্তফা গোটা বুথ কমিটির
    বর্তমান | ২৭ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মহিলাঘটিত বিষয়ে দলেরই নেতাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে পেটালেন বিজেপি নেতা-কর্মীরাই। সালিশি সভা বসিয়ে আদায় করা হল মোটা অঙ্কের জরিমানাও। পাঁশকুড়া থানার খণ্ডখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের চাকদহ গ্রামে ওই ঘটনায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে একযোগে ইস্তফা দিলেন ১৩ জন বিজেপির নেতা-কর্মী। তালিকায় বুথ সভাপতি, সম্পাদক, পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী প্রমুখ আছেন। লোকসভা ভোটের মুখে ওই ঘটনায় অস্বস্তিতে রয়েছে বিজেপি। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতিকে চিঠি দিয়ে ইস্তফার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ওই নেতারা। গোটা ঘটনায় পাঁশকুড়া ব্লকজুড়ে দলের অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পদত্যাগীদের পাশে দাঁড়িয়েছে দলের কোণঠাসা আদি শিবিরের নেতারা। ভোটের মুখে তাঁদের সিদ্ধান্তকে সাহসী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন পাঁশকুড়া গ্রামীণের পুরনো দিনের বিজেপি নেতারা। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে খণ্ডখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন চাকদহ বুথে বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণা বেরা মান্না জয়ী হন। গত ১৯ এপ্রিল একটি মহিলাঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে চাকদহ গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী অতনু মান্নাকে আটকে রাখা হয়। ২০তারিখ এনিয়ে গ্রামে সালিশি বসে। সেখানে বিজেপির অতনু মান্নাকে নিগ্রহ করা হয়। অভিযোগ, বিজেপির নব্য গোষ্ঠীর স্থানীয় মাতব্বররা তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিগ্রহ করেছে। শুধু তাই নয়, সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আর্থিক জরিমানাও আদায় করার ঘটনা ঘটেছে। গোটা ঘটনার বিরুদ্ধে পার্টির ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানান অতনু মান্না সহ বুথ কমিটি। কিন্তু, পার্টি নেতৃত্ব বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ না করায় অভিমানে গোটা বুথ কমিটি ইস্তফার সিদ্ধান্ত নেয়।

    খণ্ডখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চাকদহ বুথের সভাপতি গৌরাঙ্গ খাঁড়া, সম্পাদক অনুপ মান্না সহ গোটা কমিটি দলের আদি শিবির ঘনিষ্ঠ। তাঁদের অভিযোগ, দলের একটা অংশ প্রতিমুহূর্তে অসহযোগিতা করছে। নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকছে। ভোটের মুখে তাঁদের কালিমালিপ্ত করতেই পরিকল্পনা করে মহিলাঘটিত বিষয়ে পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামীকে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের রাশ নিজেদের হাতে রাখতেই নব্য গোষ্ঠীর পরিকল্পনা। তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার চাকদহ বুথের সভাপতি, সম্পাদক সহ মোট ১৩জন বুথ কমিটির সদস্য একযোগে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতির কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন। তার কপি পাঠানো হয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। কপি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় পাঁশকুড়া পশ্চিম-৩ মণ্ডল কমিটির সভাপতিকেও।

    পাঁশকুড়ায় দলের আদি-নব্য সংঘাতের এই ঘটনা নতুন নয়। তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সভাপতি থাকাকালীন তখন থে঩কেই দু’পক্ষের সংঘাত প্রকাশ্যে আসে। জেলা সভাপতি রদবদলের পর পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভায় একসঙ্গে চারটি মণ্ডলের সভাপতি পদে পরিবর্তন হয়। ২০২৩ সালে ২৪আগস্ট ওই রদবদলের দিনে পাঁশকুড়ার আদি গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীরা সল্টলেকে রাজ্য পার্টিঅফিসে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভ দেখান। তার জেরে গতবছর ২৮ আগস্ট অপসারিত দুই মণ্ডল সভাপতি সহ ২২ জন নেতানেত্রীকে শোকজ করে দল। পাশাপাশি তাঁদের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়।

    পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী অতনু মান্না বলেন, মহিলাঘটিত মিথ্যা ঘটনা নিয়ে আটকে রাখা ও সালিশিতে জরিমানার ঘটনা ঘটেছে। আমাকে নিগ্রহ করা হয়েছে। পার্টির একাংশ এই কাজে যুক্ত। বিষয়টি পার্টি নেতৃত্বকে জানানোর পরও সুফল মেলেনি। তাই ইস্তফার সিদ্ধান্ত। পাঁশকুড়া পশ্চিম-৩ মণ্ডল কমিটির সভাপতি শশাঙ্ক পট্টনায়েক বলেন, একটা বিষয় নিয়ে চাকদহ বুথে নিজেদের মধ্যে সমস্যা হয়েছিল। আমরা সেটা বসে মিটমাট করে নেওয়ার চেষ্টা করছি।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)