• ৭১.৮৪ শতাংশ ভোট: শান্তিপূর্ণ দ্বিতীয় দফা, নিজ গড়েই চাপে বিজেপি
    বর্তমান | ২৭ এপ্রিল ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ‘চোখ রাঙানি’র ঘটনা ছাড়া লোকসভার দ্বিতীয় দফায় উত্তরবঙ্গের তিন কেন্দ্রের ভোট ছিল পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। রায়গঞ্জ, বালুরঘাট ও দার্জিলিং—বিজেপির ‘গড়’ বলে পরিচিত এই তিন কেন্দ্রের ভোট পরিচালনায় দিনভর তৃণমূল ও তাদের সহযোগী অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। আর চাপে থাকা গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা বরং ব্যস্ত ছিলেন অভিযোগের ‘ডালি’ সাজাতে। নানা দাবির আস্ফালন থাকলেও, এদিন চাকুলিয়া, গোয়ালপোখর, ইসলামপুর সহ আরও বেশ কিছু জায়গায় বুথে এজেন্টই দিতে পারেনি বিজেপি এবং কংগ্রেস। এই পর্বেই কমিশনের কাছে যত সংখ্যক অভিযোগ (সিএমএস) রাজনৈতিক দলগুলির তরফে জমা পড়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৯টি পদ্মপার্টির। রাজনীতির কারবারিদের বক্তব্য, এই পর্বে ভোট করাতে সত্যিই যে চাপে পড়তে হয়েছিল, বিজেপির অভিযোগের ডালি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা, কোথাও রাজ্য পুলিসের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগের পাশাপাশি কয়েকটি জায়গায় পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা। এমনকী হাতে বন্দুক থাকা সত্ত্বেও কেন তা চালায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। বিস্তা নিজে ৫০টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছেন। তারই মধ্যে ‘পাহাড়ে বিজেপি কম ভোট পাবে’—‘দোসর’ বিমল গুরুংয়ের এই ঘোষণা কপালে ভাঁজ ফেলেছে গোটা পদ্মপার্টির। অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছেন নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোট লড়তে নামা বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। ভোট শেষে তাঁর হুমকি, ‘আমাকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফল ভুগতে হবে বিজেপিকে।’

    বিজেপির স্বস্তি ছিল না বালুরঘাট ও রায়গঞ্জেও। বালুরঘাট আসনে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজেই দলীয় প্রার্থী। ভোটের দিন নিজের কেন্দ্রে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান শুনে মেজাজ হারান সুকান্তবাবু। দেহরক্ষীদের নিয়ে তেড়ে যান তিনি। রাজ্য পুলিসের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে তাদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকিও দিয়েছেন সুকান্তবাবু। বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তপনে এক অসুস্থ ভোটারকে টোটোয় চাপিয়ে বুথে নিয়ে আসার পথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান বেধড়ক লাঠিপেটা করে এক তৃণমূল কর্মীকে। আবার ইটাহারের দুর্গাপুরের একটি বুথে আদিবাসীদের ভয় দেখিয়ে পদ্মফুলের বোতাম টেপার জন্য প্ররোচিত করার অভিযোগ উঠেছে বাহিনীর বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ জানানো হলে, তারা খতিয়ে দেখে দু’টি জায়গা থেকেই অভিযুক্ত জওয়ানদের সরিয়ে নেয়। রায়গঞ্জের কয়েকটি বুথে ইভিএম বিভ্রাটের খবর মেলে। পরে কমিশনের তরফে তা পাল্টে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফার এই ভোটে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তিনটি কেন্দ্রে গড়ে ৭১.৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭২.৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে বালুরঘাট কেন্দ্রে। এই সময় পর্যন্ত এই তিন কেন্দ্রে গড়ে যে পরিমাণ ভোট পড়েছে, তা গত বিধানসভার তুলনায় সাত থেকে আট শতাংশ কম। কমিশন মনে করছে, তীব্র তাপপ্রবাহই এর কারণ। 

    অপরদিকে, প্রথম দফার মতো এদিনের জনমত তাঁদের অনুকূলে থাকবে বলে দাবি করেছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘দ্বিতীয় দফার ভোট দেখে বিজেপি ভয় পেয়েছে। অর্থ আর পেশিশক্তি দিয়ে ভোট ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে। বিজেপির পতন এবার কেউ আটকাতে পারবে না।’ রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও বলেছেন, ‘এবার ইন্দ্রপতন হবে। নিশ্চিতভাবে হারছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি।’ যদিও গড় রক্ষার প্রত্যয়ী বার্তা ছিল সুকান্তবাবুর। 
  • Link to this news (বর্তমান)