Lok Sabha Election 2024: জেলবন্দি অমৃতপাল প্রার্থী হলেও কেন ভোট দিতে পারবেন না কেজরিওয়াল? জানুন নিয়ম
এই সময় | ২৭ এপ্রিল ২০২৪
এ যেন কতকটা 'এক যাত্রায় পৃথক ফল'! গোটা বিশ্ব জুড়েই নির্বাচনের একাধিক নিয়ম বলবৎ রয়েছে। সেই নিয়ম নিয়েও বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। তবে নিয়ম থাকলে তা নিয়ে যে বিতর্কও থাকবে তা নতুন কিছু নয়। দেশের নির্বাচনী নিয়মের মধ্য়েও যেন কোথাও ফলে যায় 'এক যাত্রায় পৃথক ফল' প্রবাদ বাক্যটি। লোকসভা নির্বাচনেই দুই ব্যক্তির ক্ষেত্রে বলা ভালো দুই নেতার সঙ্গে 'দুই দুই' আচরণের সাক্ষী থাকবে দেশ! দুই ব্যক্তির 'দৈহিক দূরত্ব' অবশ্য ২৩০০ কিলোমিটারে। দু'জনের অবস্থা একই, বিচারাধীন অবস্থায় জেলবন্দি দু'জনেই। তাঁদের মধ্য়ে একজন বুক ফুলিয়ে জেল বন্দি থাকা অবস্থাতেই নির্বাচনে লড়তে পারবেন অথচ একজন নূন্যতম ভোটাধিকারটুকু প্রয়োগ করতে পারবেন না। ব্যতিক্রমী নিয়ম বললেও অত্যুক্তি হয় না।কথা হচ্ছে 'ওয়ারিস পাঞ্জাব দে' প্রধান অমৃতপাল সিং ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্র অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিয়ে। অমৃতপাল বন্দি অসমের ডিব্রুগড় কারাগারে অন্যদিকে দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বন্দি তিহাড় জেলে। লোকসভা ভোটের আবহে দুই ব্যক্তির 'কাহিনি' মিলে যেতে যেতেও যেন মিলল না! দাঁড় করালো মেরুর দুই প্রান্তে! কেন এরকম কথা?
একদিকে খালিস্তানি সমর্থক অমৃতপাল সিং ডিব্রুগড় জেল সীমানা লাগোয়া আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। অন্য়দিকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন না। ভারতে নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী, বিচারাধীন মামলায় বন্দি থাকা ব্যক্তিরা জেল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন কিন্তু তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না।
২০২৩ সাল থেকে জেলবন্দি খালিস্তান পন্থী নেতা অমৃতপাল সিং
খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২৩ এপ্রিল,২০২৩ সাল থেকে কারাগারবন্দি রয়েছেন। অমৃতপাল পঞ্জাবে খাদুর সাহেব লোকসভা আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন। অমৃতপালের আইনজীবী রাজদেব সিং খালসা আগেই জানিয়েছিলেন, 'ডিব্রুগড় সেন্ট্রাল জেলে আমি ভাই সাহেব (অমৃতপাল)-এর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। খালিস্তানি পন্থী হওয়ায় আমিই তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম সাংসদ হওয়ার জন্য খাদুর সাহিব থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত তাঁর। ভাই সাহেব রাজি হয়েছেন। এবার নির্বাচনে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়বেন তিনি।'
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অমৃতপালকে গোরু খোঁজা খোঁজে পুলিশ। শেষমেশ পঞ্জাবের মোগা জেলার রোড গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অমৃতসরের একটি থানায় নিজের সমর্থকদের সঙ্গে বন্দুক, তলোয়ার নিয়ে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ছিল অমৃতপালের বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ছিলে তিনি। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে অসমের পূর্বের ডিব্রুগড় জেলে পাঠানো হয়।
যে অমৃতপাল একসময় বলেছিলেন ভারতীয় সংবিধান মানেন না সেই তিনি নাকি ভারতীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির দিকে ঝুঁকছেন! বলা বাহুত্য নিয়মের ফাঁকে তিনি সেই সুযোগ পাচ্ছেন! লোকসভা ভোটে জিতলে ভারতের সংবিধানের নামে সংসদে শপথ নেন একজন সাংসদ। এনএসএর অধীনে অভিযুক্ত একজন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তবে জেলবন্দি থাকা অবস্থায় ভারতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এই অবশ্য প্রথম নয়।
এর আগে কবে কবে হয়েছে এরকম ঘটনা?
১৯৯৬ সালে, ডন থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মুখতার আনসারি কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএসপির টিকিটে উত্তরপ্রদেশের মৌ বিধানসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। গত মাসে মৃত্য়ু হয়েছে আনসারির। জেল থেকেই নির্বাচনে লড়ে জিতেছিলেন তিনি। জাতীয় জনতা দলের প্রধান লালু প্রসাদ যাদব ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় জেলে ছিলেন । তিনি বিহারের মধ্যপুরা লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং জেল থেকে জিতেছিলেন।
জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নেই
তবে অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেও যাঁরা বিচারাধীন কোনও মামলায় জেলবন্দি রয়েছেন, এখনও পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হননি তাঁরা ভোট দিতে পারেন না।
দোষী সাব্যস্ত না হলেও ভারতে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় কোনও ব্য়ক্তির ভোট দেওয়ার ব্য়বস্থা নেই। ২০১৯ সালের প্রবীণ কুমার চৌধুরী বনাম ভারতের নির্বাচন কমিশন মামলায়, দিল্লি হাইকোর্ট পুনরায় নিশ্চিত করেছে যে বন্দীদের ভোট দেওয়ার অধিকার নেই। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্য হতে পারে।
দিল্লিতে ২৫ মে ভোট হবে। ২৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে কেজরিওয়ালের শুনানির উপর সবটা নির্ভর করছে। তিনি জেল থেকে ছাড়া পেলেই তবেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন, নয়তো নয়।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল একটি উদাহরণ মাত্র। ভারতে পাঁচ লাখের বেশি জন বিচারাধীন মামলায় জেলবন্দি রয়েছেন যাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, আর্থিক তছরূপ মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলবন্দি রয়েছেন , সুপ্রিম কোর্ট যদি তাঁর মুক্তির আদেশ না দেয় তবে তিনিও ভোট দিতে পারবেন না। হেমন্ত সোরেন বুধবার তাঁর গ্রেফতারি বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
কোন নিয়মের বলে অমৃতপাল ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেও কেজরিওয়াল ভোট দিতে পারবেন না?
২০২১ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রিপোর্টস ব্যুরো (NCRB) রিপোর্ট অনুসারে, ভারত জুড়ে বিভিন্ন জেলে মোট ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ জন বন্দি ছিলেন। যেহেতু অমৃতপাল সিং এখনও দোষী সাব্যস্ত হননি, তাই তিনি নির্বাচনে লড়তে পারেন। এমনকি যাঁরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাঁরা কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় বছর পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।
অমৃতপাল সিংয়ের মতো একজন কারাবন্দী ব্যক্তি কোনও প্রতিনিধির সহায়তায় কারাগার থেকে তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন। যদি একজন কারাবন্দি প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হন, তবে তাঁকে শপথ নেওয়ার জন্য কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে, কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, কারাগারের অভ্যন্তরে শপথ নেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই।
তবে কোনও ব্য়ক্তি কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি পর তাঁর অনুপস্থিতিতে একাধিক কাজ সামালচ্ছেন তাঁর স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল এমনকী আপের পক্ষ থেকে প্রচারেও অংশ নিচ্ছেন তিনি। এক কথায় কেজরিওয়াল অন্যতম প্রতিনিধি বর্তমানে সুনীতা। এক্ষেত্রে সুনীতা কেজরিওয়ালও যাতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ভোট দিতে পারেন তার জন্য় সওয়াল করতে পারবেন না। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন,১৯৫১-এর ৬২ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি আইনত পুলিশের হেফাজতে থাকেন বা কারাগারে বন্দি থাকেন তবে কোনও নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না তিনি। নির্বাচনের নিয়মে এটি অন্যতম এক ব্যতিক্রমী নিয়ম। কারাগারে থাকা ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন কিন্তু ভোট দিতে পারে না।