এক বছর আগেও বোলপুর নিচুপট্টি এলাকার নীল দোতলা বাড়িটিতে ভিড় লেগে থাকত। উৎসব, অনুষ্ঠানে বাড়ি থাকত জমজমাট। কিন্তু, এখন সে বাড়ি কার্যত শুনশান। কারণ, বাবা অনুব্রত মণ্ডলের পরে বাড়ির এক মাত্র মেয়ে সুকন্যাও গরুপাচার মামলায় তিহাড় জেলে বন্দি। পরিজনেরা চান, ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরুক দ্রুত।
গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাজিরার নোটিস ন’বার এড়িয়ে গিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের ১১ অগস্ট বোলপুরের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এর পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের নজরে ছিলেন সুকন্যা। বাবার মতোই সুকন্যার নামেও কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ ও বিপুল পরিমাণে জমির হদিস মিলেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। এ নিয়ে একাধিক বার সুকন্যাকে দিল্লিতে তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বেশ কয়েক বার সেই তলব এড়িয়ে যান সুকন্যা। গত বছর ২৬ এপ্রিল দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে হাজিরা দেওয়ার পরে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি ও তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে সুকন্যাকে গ্রেফতার করে ইডি। বাবার সঙ্গে তিনিও এখন তিহাড়ে বন্দি।
গত এক বছর ধরে নিচুপট্টির বাড়ি তাই মালিক-শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। সোমবারও অনুব্রতের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল কিছু পুলিশকর্মী বাড়িটি পাহারা দিচ্ছেন। কবে সুকন্যা বাড়ি ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়দের মনে সংশয় রয়েছে। সুকন্যার কাকা প্রিয়ব্রত মণ্ডল বলেন, “ছোট থেকে বড় হতে দেখলাম। আমার দুই মেয়ের সঙ্গেই বড় হয়েছে সুকন্যা। উৎসব অনুষ্ঠানে আমরা এক সঙ্গে হই- হুল্লোড় করতাম। আজ এক বছর হল বাড়িতে কোনও আনন্দ নেই। ওর জন্য বড় কষ্ট হয়।”
তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যার মা-ঠাকুমা কেউ নেই। বাবাও জেলবন্দি। সেই মেয়েকে পর্যন্ত রেয়াত করল না বিজেপি। তাঁকেও রাজনীতির শিকার হতে হয়েছে। বিনা বিচারে এক বছর ধরে জেলবন্দি রয়েছে। সুকন্যার জন্য আমাদের কর্মী, সমর্থকেরা মর্মাহত। আমাদের প্রার্থনা, অবিলম্বে যেন সে মুক্তি পায়।’’ পাল্টা বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিজেপি কাউকে জেলে ঢোকানোর মতো কাজ করে না। নিজেদের অপকর্মের ফল এগুলি। অনুব্রতের সঙ্গে তাঁর মেয়েকেও ভুগতে হচ্ছে।’’