ভোট যুদ্ধে তুরুপের তাস শিল্পায়ন, এই লোকসভাতেও ব্যতিক্রম নয়। রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির লোকসভা ভোটের প্রচারে ঘুরে ফিরে এল শিল্পায়নের প্রসঙ্গ। শাসক দল বলছে, তাঁদের হাতেই রঘুনাথপুরে শুরু হয়েছে শিল্পায়নের সুবিশাল কর্মকাণ্ড। বিজেপির দাবি, বাম আমলে স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলিকে জমি দিয়ে দূষণ ডেকে এনেছিল সিপিএম। আর তৃণমূলের আমলে শুরু হয়েছে কাটমানির শিল্প। সিপিএমের কথায়, রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের যে সলতে তাঁরা পাকিয়েছিল, তা নষ্ট করছে তৃণমূল ও বিজেপি। সব মিলিয়ে রঘুনাথপুরে লোকসভা ভোট পেরতে শাসক-বিরোধীর বৈতরণী যে শিল্পায়নই, তা আন্দাজ করা যায়।
২০০৭-২০০৮ সাল, বাম আমলে রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের বীজ বোনা শুরু হয়। পরে তৃণমূলের সরকার এই এলাকাতেই গড়ে তুলছে জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী। তৃণমূলের দাবি, তাঁদের আমলে রঘুনাথপুরে কম বেশি ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে নানা শিল্প সংস্থা। ঘটনা হল গত চার-পাঁচ বছরে রঘুনাথপুর বিধানসভা এলাকার রঘুনাথপুর ১, সাঁতুড়ি, নিতুড়িয়া ব্লকে সুসংহত ইস্পাত প্রকল্প গড়তে বিনিয়োগ করেছে দু’টি বড় শিল্প সংস্থা। সিমেন্ট কারখানা গড়তেও বড় মাপের বিনিয়োগ হয়েছে। শিল্প জেলা আসোনসোল ও পড়শি রাজ্যের শিল্পাঞ্চল ধানবাদের মধ্যবর্তী এলাকা রঘুনাথপুর ক্রমেই শিল্প সংস্থাগুলির গন্তব্য হয়ে উঠছে বলে পর্যবেক্ষণ শিল্প মহলের। আর এই প্রেক্ষাপটেই তৃণমূলের প্রচারে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গের উল্লেখ বার বার নজরে আসছে। রঘুনাথপুরে আরও বেশি করে শিল্প গড়তে তাঁদের হাত শক্ত করা ডাক দিচ্ছে শাসক দল।
গত বিধানসভায় তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছিল রঘুনাথপুর। এই কেন্দ্রে বিজেপির কাছে হারতে হয়েছিল শাসক দলকে। ব্যবধান হাজার পাঁচের কিছু বেশি ভোট। তবে বিধানসভা ভোটের তিক্ততা ভুলে লোকসভার মধুতে মন দিয়েছে সবুজ শিবির। বাঁকুড়া লোকসভার আওতাধীন রঘুনাথপুর বিধানসভায় অন্তত হাজার ১৫-২০ ভোটে লিড পাওয়ার দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার কথায়, “তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রঘুনাথপুরের শিল্পায়নকে গুরুত্ব দিয়েছেন। জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীর কাজ শুরু করেছেন। এখানে মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই একটি বড় মাপের সিমেন্ট ও একটি ইস্পাত কারখানার উদ্বোধন হয়েছে। তাতে এলাকায় কর্ম সংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি রঘুনাথপুরে কয়েক হাজার জমিতে শিল্প বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে নানা সংস্থা।”
তৃণমূলের দাবিকে দিবাস্বপ্নের তকমা দিয়ে পদ্ম শিবিরের কটাক্ষ, তিন বছরের ব্যবধানে রঘুনাথপুরে এমন কিছু হয়নি, যাতে বিধানসভার ফল রাতারাতি পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা পাবে শাসক দল। তাঁদের অভিযোগ, রঘুনাথপুরে আদতে কাটমানির শিল্প হচ্ছে। বিনিয়োগ করতে আসা সংস্থাগুলির কাছ থেকে কাটমানি নিচ্ছে শাসক দল। যা দেখে বিনিয়োগের আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকেই। বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার বলেন, “কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি রঘুনাথপুরে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায় তৈরিতে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু রঘুনাথপুরের শিল্প সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে তৃণমূলের আমলে। তৃণমূল কাটমানি শিল্প বন্ধ করুক। রঘুনাথপুরে শিল্পের বন্যা এনে দেবে কেন্দ্র সরকার।”
সিপিএমের নিশানায় তৃণমূল, বিজেপি দুই দলই। দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, “বাঁকুড়ার বিদায়ী বিজেপি সাংসদ কেন্দ্রের মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও রঘুনাথপুরে কোনও শিল্প আনতে পারেননি। আর ডিভিসির দ্বিতীয় পর্যায়ের শিলান্যাস ইউপি-২ এর আমলেই হয়ে গিয়েছে। পরে একই কাজের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সব রাজনৈতিক চমক ছাড়া আর কি?”
রাজ্যের শিল্পায়নের প্রসঙ্গে প্রদীপের কটাক্ষ, “পুরুলিয়ায় এসে অসম্পূর্ণ ইস্পাত কারখানার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী হাস্যকর ভাবে শিল্পের বার্তা দিয়েছেন।”