আরামবাগ কেন্দ্রে তৃণমূলের বহু ‘বিক্ষুব্ধ’ এবং ‘নিষ্ক্রিয়’ নেতা-কর্মী এখনও ভোটের কাজে নামেননি। পরিস্থিতি সামলাতে অবশেষে মহকুমার তিন বিধানসভায় দলের অভিজ্ঞ নেতাদের কাজে নামনো হল। এই কেন্দ্র নিয়ে দলীয় বৈঠকের পর সবচেয়ে খানাকুল বিধানসভা এলাকা সামলাতে দায়িত্ব দেওয়া হল উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান তথা দলের রাজ্য সম্পাদক দিলীপ যাদবকে। দিলীপ দলের প্রাক্তন হুগলি জেলা সভাপতি। পুরশুড়ার ভার পান ওই বিধানসভা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক পারভেজ রহমান এবং গোঘাটের দায়িত্বে সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক মানস মজুমদার। আরামবাগ বিধানসভার জন্য নতুন করে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
গত শনিবার আরামবাগে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী কর্মী-বৈঠক করতে এসেছিলেন। তিনি ফিরে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে গত বুধবার সিদ্ধান্তের কথা জানান বলে দলীয় সূত্রে খবর। সুব্রতবাবুর আগে একই বিষয়ে রাজ্য নেতা ফিরহাদ হাকিম এবং বর্ষীয়ান নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বৈঠক করেছিলেন।
আরামবাগ মহকুমার চারটি বিধানসভায় গত বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদল পরাজিত হয়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে খানাকুল বিধানসভা এলাকার মোট ১৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টি বিজেপির দখলে চলে যায়। একইসঙ্গে খানাকুল ২ পঞ্চায়েত সমিতিও বিজেপির দখলে যায়। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট না পেয়ে দলের ‘বিক্ষুব্ধেরা’ ভোটের কাজে নামেননি। এই অবস্থায় স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, ১৯৯৯ সাল থেকে মহকুমার বিভিন্ন বিধানসভা এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির দিলীপেকে দায়িত্ব দেওয়ায় দলের হাল নিশ্চিত ফিরবে। কিন্তু যে সময় তাঁকে নামানো হল, তারপর নিষ্ক্রিয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কতটা চাঙ্গা করতে পারবেন তা নিয়েও প্রশ্ন তাঁদের।
দিলীপ বৃহস্পতিবার থেকে কাজে নেমে পড়েছেন। কয়েকটি কর্মী-বৈঠকও করেছেন। তিনি বলেন, “দলের নিষ্ঠাবান সৈনিক হিসাবে দলের নির্দেশ মতোই কাজ শুরু করেছি। দলের পক্ষে অনেক ইতিবাচক কাজ করতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে দল আমার কাছে যা চাইছে, তা পরিশ্রম এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে পূরণ করতে পারব বলে আশা করছি।”
একই ভাবে পুরশুড়ায় কাজ শুরু করেছেন পারভেজ। তিনি বলেন, “দলের প্রতি মানুষের আস্থা আছে। খালি আমাদের বুথে বুথে নেতাদের সমন্বয়ের অভাবে তাঁরা বিভ্রান্ত। এই ফাঁকটা মেরামত করছি।” গোঘাটে নেমেছেন মানস মজুমদার। তিনি বলেন, “অভিমান করা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সবাই সাড়া দিচ্ছেন।”
দলের বুথ স্তরের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে গোঘাটের শেখ মানোয়ার, পুরশুড়ার শঙ্কর মালিক, খানাকুলের বিমল সাঁতরা, আরামবাগের সৈকত রায়ের মতে, ভোট পরিচালনায় দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বা ভাল মুখের নেতা আনতে দেরি করল দল। আরামবাগের চারটি বিধানসভা এলাকার হাল বিশেষ সুবিধার নয়। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষের দাবি, ‘‘এত করেও তৃণমূলের শেষ রক্ষা হবে না। এই কেন্দ্রে এ বার বিজেপিই জিতবে।’’