• মমতাকে চিনতে দেরি, ‘আক্ষেপ’ শুভেন্দুর
    আনন্দবাজার | ২৮ এপ্রিল ২০২৪
  • চার বছর হল তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন। বিজেপিতে যে তাঁর আরও আগে যোগ দেওয়া উচিত ছিল এতদিন পর শুক্রবার সেই উপলব্ধির কথা প্রকাশ্যে জানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নেহাতই ঘটনাচক্র। শুভেন্দুর এই বোধোদয়ের কথা জানা গেল দিলীপ ঘোষের খাসতালুক বলে পরিচিত রেলশহর খড়্গপুরে।

    বোধোদয়ের পাশাপাশি শুভেন্দু এ দিন প্রকাশ করেছেন ‘আত্মগরিমা’ও । বৃহস্পতিবার দাঁতনে সভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই দাঁতনেই প্রকাশ্য কর্মি সম্মেলনে যোগ দিয়ে শুভেন্দুকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ও (মমতা) আমাকে তৈরি করেছে? আপনি কে হরিদাস পাল? আপনি দল করেছেন ১৯৯৮ থেকে। আমি ১৯৯৫ সাল থেকে কাউন্সিলর।"

    এ দিন সন্ধ্যায় মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের খড়্গপুর শহরের ঝাপেটাপুরে ছিল বিজেপির বিজয় সংকল্প সভা। সেই সভাতেই বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের সমর্থনে প্রচারে এসেছিলেন শুভেন্দু। গত লোকসভা নির্বাচনে এই মেদিনীপুর আসনে জয়ী হয় বিজেপি। তবে শুধুমাত্র রেলশহরেই বিজেপির ‘লিড’ ছিল ৪৫হাজার। অথচ ২০১৯ সালের বিধানসভা উপ-নির্বাচনে এই শুভেন্দুর হাত ধরেই রেলশহরের বিধানসভা প্রথমবার জিতেছিল তৃণমূল। বিধায়ক হয়েছিলেন প্রদীপ সরকার। অবশ্য ২০২০সালের ডিসেম্বরে শুভেন্দু যোগ দেন বিজেপিতে।

    এ বার খড়্গপুরে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলকে বিঁধতে করলেন অন্য স্বীকারোক্তি। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমি বিজেপি নেতাদের স্যালুট করি। আপনারা আগে যেটা বুঝেছেন আমার সেটা বুঝতে সময় লেগেছে। আপনারা ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে কুনার হেমব্রম, দিলীপ ঘোষদের জিতিয়ে তালা মেরে দিয়েছিলেন। আর এই পিসি উপনির্বাচন হয়েছিল না!

    বিগত ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে। এই ঠগি পিসি আর তার চোর ভাইপো খড়্গপুরে প্রচারে এসেছিলেন? আসেনি। আমি ঘুরে-ঘুরে প্রদীপ সরকারকে জিতিয়েছিলাম। লোক প্রদীপ সরকারকে ভোট দেয়নি আমাকে ভোট দিয়েছিল।” এমনকি শুভেন্দু দাবি করেন, প্রদীপ সরকার জেতার পরে তৃণমূলের বন্ধ কার্যালয়ে তিনি এসে তালা খোলেন।

    মেদিনীপুরের আবেগ কাড়তে এ দিন শুভেন্দু বলেছেন, “পিসি বলছেন, মেদিনীপুরে গদ্দার জন্মায়। আরে মেদিনীপুরে গদ্দার জন্মায় না বিদ্যাসাগর জন্মায়। মেদিনীপুরে মাতঙ্গিনী হাজরা জন্মায়, ক্ষুদিরাম বসু জন্মায়, তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার তৈরি হয়। আর আপনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গদ্দার। যিনি পরিচয় দিয়েছেন সেই রাজীব গান্ধীকে ছুরি মেরেছেন। যিনি আশ্রয় দিয়েছেন সেই ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ছুরি মেরেছেন।”

    এই প্রসঙ্গে শুক্রবার তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘খড়্গপুরের মানুষ এ বার তৃণমূলকে লিড দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। শুভেন্দুর এই বোধদয়ের জন্যই বিজেপি হারবে।

    তবে এ দিন মেদিনীপুর আসনের কেন্দ্রবিন্দু যে খড়্গপুর তা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। আক্রমণ করেছেন খড়্গপুরের পুলিশকে। সন্দেশখালিতে অস্ত্র উদ্ধারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে খড়্গপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “মমতা পুলিশের আমলে খড়্গপুর শহরে গত একমাসে দু’বার দু’জন ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ভাবতে লজ্জা লাগে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিডিওরা আইসিদের সঙ্গে বসে ব্যালট ছাপিয়ে ভোট করেছে। খড়্গপুর শহরে আজকে ভোট করুন ওই হানিফ মিঞাঁ (শেখ হানিফ) ওয়ার্ড ছাড়া একটা ওয়ার্ডও ওঁরা পাবে না। সব
    বিজেপি জিতবে।”

    শুভেন্দু বলেন, “বদলা হবে তো? ২৫মে মিনিইন্ডিয়া খড়্গপুর ৫০হাজার নেব না, ১ লক্ষ লিড চাই। খড়্গপুর জিতাবে। বাকিরা তো থাকবেই। কিন্তু খড়্গপুর মার্জিন তৈরি করে দেবে। আপনারা পারবেন।”

    এ দিন সেই অঙ্কের সমীকরণে বিজেপিতে ৯বছর পরে ফিরেছেন তৃণমূলে চলে যাওয়া প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি জগদম্বা প্রসাদ গুপ্ত। ঘরে ফিরেছেন পুর প্রতিনিধি মুকেশ হুমনেও। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক রামাশিস সিংহ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)