দুর্নীতির দায়ে ২০১৬-এর এসএসসি'র পুরো নিয়োগ প্যানেলই বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ব্যতিক্রম সোমা দাস নামে এক তরুণী। ক্যান্সার আক্রান্ত ওই তরুণীকে ময়দানে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে আন্দোলনরত অবস্থায় দেখে এক বিচারপতির অনুরোধে রাজ্য সরকার তাঁকে শিক্ষিকার চাকরি দেয়। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬-র গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করলেও ছাড় দিয়েছে ওই তরুণীকে।এ ক্ষেত্রে মানবিকতার কথা বলেছে আদালত। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় তিনশো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর তরফে। যাঁরা দৃষ্টিহীন এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদের সংরক্ষিত পদে চাকরি পেয়েছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশে এ রকম ১০৪ জন দৃষ্টিহীন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং আরও শ'দুয়েক শারীরিক দিক থেকে বিশেষ ভাবে সক্ষম শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
দৃষ্টিহীন দম্পতি অভিজিৎ প্রধান ও তুহিনা পারভিন মণ্ডল ২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে যাবতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক জন সোনারপুরের হরিনাভি, অন্য জন বাসন্তীর একটি স্কুলে চাকরি পান। হাইকোর্টের রায়ে তাঁরা এখন চাকরিহারা। একই অবস্থা হাওড়ার চামরাইল স্কুলের শিক্ষিকা অপর্ণা মজুমদার বা মালদার স্কুলের প্রণব সিংহের। চাকরি খুইয়ে তাঁরা অথৈ জলে।
তাঁদের প্রশ্ন, ডিভিশন বেঞ্চ যদি মানবিকতার যুক্তিতে ক্যান্সার-আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি বাজায় রাখে তা হলে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্যে সংরক্ষিত ৩ শতাংশ পদে চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরি থাকবে না কেন! তাঁদের ক্ষেত্রে কেন মানবিক হবে না আদালত?
তাঁদের বক্তব্য, প্রতিবন্ধকতা ও দারিদ্র অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। আর্থিক দৈন্যের সঙ্গে সামাজিক ভাবে জুটত অবহেলা আর অসম্মান। চাকরি পাওয়ার পরে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্মান এসেছিল। কিন্তু এ বার তো ভিক্ষে করা ছাড়া উপায় নেই! দৃষ্টিহীন প্রণবের কথায়, 'পরীক্ষার জন্যে সবাই যখন নিজেরা পড়াশোনা করে, আমাদের তখন শ্রুতিলেখক খুঁজতে হয়। তাঁরা যাতে পরীক্ষার হলে যেতে পারেন, সেই অনুমতির জন্যেও দৌড়োদৌড়ি করতে হয় আমাদেরই। তার পরে তো প্রতিযোগিতা। সব যোগ্যতামান পেরোনোর পরেও যদি চাকরি চলে যায়, আদালত শুধু মানবিকতার কথা ভাবে এক জনের জন্যে--তা হলে এই বঞ্চনার কথা কোথায় বলব!'
ব্লাইন্ড পার্সনস টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের হরিপদ হাজরা বলেন, 'আমাদের সংগঠনের তরফে দুর্দশার কথা জানাতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।' হাইকোর্টের এক বর্ষীয়ান আইনজীবীও মানছেন, 'মানবিকতার কথা ওঁদের জন্যে কেন ভাবা হলো না, এ প্রশ্ন অবশ্যই যুক্তিযুক্ত।'