সিবিআই তল্লাশিতে সন্দেশখালির গোপন ডেরা থেকে উদ্ধার হওয়া পুলিশের রিভলভার নিয়ে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। রহস্য উন্মোচনে অনুসন্ধানে নেমেছে সিআইডি। সাম্প্রতিক কালে পুলিশের হেফাজত থেকে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র মিসিং হয়েছে কিনা, খোঁজখবর চলছে। থানাগুলির কাছে কত বন্দুক, রিভলভার এবং গুলি মজুত রয়েছে--তার স্টক মেলাতে বলা হয়েছে।ভবানী ভবনে সিআইডি’র নিজস্ব মালখানায় মজুত অস্ত্রেরও হিসাব নেওয়া হচ্ছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে এনএসজি কমান্ডোদের নিয়ে সন্দেশখালির আগরহাটি পঞ্চায়েতের মল্লিকপাড়ায় একটি বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। দিনভর তল্লাশির পর বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় ৭টি আগ্নেয়াস্ত্র। তার মধ্যে রয়েছে ৩টি বিদেশি পিস্তল, যেগুলির ভারতে বিক্রিই নিষিদ্ধ।
এ ছাড়াও একটি কোল্ট রিভলভার উদ্ধার হয়, যা শুধুমাত্র পুলিশই ব্যবহার করে। এতেই শোরগোল পড়েছে পুলিশ মহলে। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের অস্ত্র সন্দেশখালির ডেরায় পৌঁছল কী ভাবে? পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘থানা কিংবা ব্যারাকে অস্ত্র রাখার জন্যে মালখানা থাকে। দেখভালে আলাদা পুলিশ অফিসার নিযুক্ত থাকেন। প্রত্যেক মাসে স্টক মেলানো হয়। ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি নজরদারিও থাকে। ফলে মালখানা থেকে অস্ত্র মিসিং সহজ নয়। মিসিং হলে সঙ্গে সঙ্গে জিডি করতে হয়। তবে পুলিশের অস্ত্র কোনও দিন মিসিং হয়নি, এমনও নয়।’
সন্দেশখালিতে অস্ত্র উদ্ধারের পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘বিষয়টি পুলিশের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের নজরে থাকা উচিত ছিল।’ শনিবার দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলপ্রার্থী সৌগত রায় বলেন, ‘বেআইনি অস্ত্র ধরা তো পুলিশেরই কাজ। এটা পুলিশের অপদার্থতা।’
উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের মন্তব্য, ‘পুলিশের প্রশ্রয় না পেলে শেখ শাহজাহান এতটা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠত না। শাহজাহানের ডেরা থেকে পুলিশের পিস্তল উদ্ধার হওয়াও তাই অস্বাভাবিক নয়।’ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ভার পুলিশের হাতে থাকলেও নির্বাচনী বিধি লাগু হওয়ার পর রাজ্য প্রশাসনের মাথার উপরে থাকে নির্বাচন কমিশন। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে প্রতিটি নির্বাচনের আগে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে হয় পুলিশকে।
লোকসভা নির্বাচন-পর্বের মধ্যে সন্দেশখালিতে অস্ত্র উদ্ধারে অনেকে কমিশনের দিকেও আঙুল তুলছেন। কমিশনের এক শীর্ষকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, নিয়ম মেনেই ভোটের সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার হয়েছে এ বারও।