রাজ্যের অধিকাংশ শহরেই বেশ কিছু জলাশয় পরিণত হয়েছে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেখানে নিয়মিত বর্জ্য ফেলছেন আশপাশের বাসিন্দারা। এর ফলে একদিকে যেমন দূষণ ছড়াচ্ছে, তেমনই ক্রমশ কমে আসছে জলাশয়ের আয়তন। এই ধরনের ঘটনা রুখতে রাজ্যের সব পুরসভা, পুরনিগমগুলোকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিল রাজ্য পুর দপ্তর। ওই নির্দেশিকায় জলাশয়গুলোর রক্ষণাবেক্ষণের উপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।সে জন্য পুরসভার নিজস্ব অর্থের পাশাপাশি প্রয়োজনে নিতে বলা হয়েছে বেসরকারি সংস্থার সাহায্য। জলাশয়গুলোর উপর নজরদারির জন্য পুলিশ, স্থানীয় ক্লাব এবং দুর্গাপুজো আয়োজক কমিটিগুলির সাহায্য নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে পুর দপ্তরের এই নির্দেশিকায়। সেই সঙ্গে কোথাও জলাশয় ভরাট হলে তা আটকে দিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
পুর দপ্তরের এক কর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, 'জীববৈচিত্র রক্ষায় জলাশয় রক্ষা করাটা ভীষণ জরুরি। সে কারণেই পুরসভাগুলোকে এই ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে।' কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দেশে এই মুর্হূতে জলাশয়ের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৪০টি। আর সেই সব জলাশয়ের ৩০.৮ শতাংশই বাংলায়।
পুর দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যে পঞ্চায়েত এলাকায় জলাশয় রয়েছে ৭ লক্ষ ১৯ হাজার ৬৫৪টি। সেই তুলনায় পুর এলাকায় জলাভূমি অনেকটাই কম। সেখানে সংখ্যাটা মাত্র ২৭ হাজার ৮২৬। বছর পাঁচেক আগেও এই সংখ্যাটা ছিল ৩৮ হাজার ৫২০। যার থেকে স্পষ্ট, গত পাঁচ বছরে, পুর এলাকাগুলোয় অনেক জলাশয় ভরাট করা হয়েছে।
কিন্তু নতুন করে যাতে আর জলাশয় ভরাট না-হয়, সে জন্য পুরসভাগুলো আরও সক্রিয় হোক- চাইছেন পুর দপ্তরের কর্তারা। সে জন্য পুরসভাগুলোকে সব রকম ভাবে দপ্তরের তরফে সাহায্য করা হবে, এমনটা পুর দপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন। পুরসভার এই নির্দেশ নিয়ে দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংয়ের বক্তব্য, 'এ বছর অন্তত পাঁচটি জলাশয় সংস্কারের টার্গেট রাখা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে জলাশয় বাঁচানোটা ভীষণ জরুরি।'
পুর দপ্তরের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, 'মাছ চাষ থেকে শুরু করে বাড়ির কাজেকর্মে প্রয়োজনে জলাশয়ের জল ব্যবহার করা হয়। জীববৈচিত্র রক্ষায় এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ফলে, জলাশয় বাঁচানোর জন্য সরকার উদ্যোগী হলে সব ক্ষেত্রেই এর সুফল মিলবে।'
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত অবশ্য মনে করেন, 'জলাশয় ভরাট করে নির্মাণ এখন বড় সমস্যা। তাই নির্দেশিকা দিলেই হবে না। বাস্তবে কাজ হচ্ছে কি না, সে দিকে কড়া নজর রাখতে হবে।