তীব্র তাপপ্রবাহে থেকে বাঁচতে কারও আশ্রয় ঘরে ফ্যানের নীচে কিংবা এসিতে। কিন্তু শুকনো খটখটে প্রকৃতিকে আশ্রয় করেই যাদের বেঁচে থাকা, সেই পশু, পাখিদের কী অবস্থা? তাদের পরিস্থিতি নিয়ে কি কেই আদৌ ওয়াকিবহাল?উত্তর হ্যাঁ। প্রাথমিক স্কুলের শিশু সংসদের খুদে পড়ুয়ারা এ ব্যাপারে পুরো ওয়াকিবহাল। এর জন্য যুদ্ধেও নেমে পড়েছে তারা। যে যুদ্ধের নাম 'আর নয় বিশ্বযুদ্ধ, এসো সামলাই গ্রীষ্মযুদ্ধ।'
স্কুলের নাম পূর্বস্থলী ১ এর মিনাপুর নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়। এই যুদ্ধের সেনানি তামান্না, আয়েষা, ইয়াকুবরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক-শিক্ষিকাও। এই গ্রীষ্মযুদ্ধে এলাকার পশু-পাখিদের খাবার ও জল জোগাচ্ছে তামান্নারা। কচি-কাঁচাদের এই উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারাও।
এমনিতে পঠনপাঠন, পরিকাঠামো, নিয়মানুবর্তিতা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক- সব দিক থেকেই ব্যতিক্রমী এই স্কুল। শিশুমিত্র, নির্মল বিদ্যালয় সমেত একাধিক পুরস্কার এসেছে এই বিদ্যালয়ের ঝুলিতে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২৬০। বিদ্যালয়ের শিশু সংসদের প্রধানমন্ত্রী পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না মল্লিক। মন্ত্রী ইসমাতারা খাতুন, আয়েষা খাতুন, ইয়াকুব মণ্ডলদের সঙ্গে নিয়ে এখন 'যুদ্ধে' সামিল তামান্না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, 'সরকারি নির্দেশে গ্রীষ্মকালে কিছু প্রকল্পের কথা বলা রয়েছে। এবারের গ্রীষ্মকালীন প্রকল্পকে অন্য ভাবে ভাবা হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষের প্রাণই অতিষ্ঠ। তখন প্রকৃতিতে থাকা পশু-পাখি জল, খাবার ঠিকমতো না পেয়ে কী অবস্থায় আছে তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমরা বলছি, এসো একসঙ্গে বাঁচি এবং বাঁচাই।'
প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে এমন কাজের মধ্যে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আরও মানবিক করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। স্কুলের পাশাপাশি বাড়িতেও পশু-পাখিদের খাবার দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে পড়ুয়াদের। শিশু সংসদের প্রধানমন্ত্রী তামান্না জানায়, এখন বন্ধ থাকলেও এই কাজের জন্য তাদের স্কুলে আসতে হয়। শিশু সংসদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'স্কুল খোলা থাকলে আমাদের মিড-ডে মিলের খাবারের অবশিষ্টাংশ খেত পশু-পাখিরা। কিন্তু এখন স্কুল বন্ধ। তীব্র গরমে ওদের খাবারের পাশাপাশি জলেরও অভাব দেখা দিয়েছে। তাই আমরা খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত জলেরও ব্যবস্থা করছি ওদের জন্য। বিভিন্ন পাত্রে রাখা হচ্ছে জল।'
সংসদের মন্ত্রী ইয়াকুব মণ্ডল বলে, 'বিদ্যালয়ের গাছে পাখিদের আশ্রয়ের জন্য হাঁড়ি, ঝুড়ি, খাঁচা রয়েছে। গাছে উঠতে পারে এমন কাউকে সেগুলোয় জল ও খাবার রেখা আসার জন্য আমরা বলছি। কাজ ঠিকমতো হলো কিনা তার তদারকও করি।' আয়েষা, ইসমাতারারা জানায়, তারা বাড়িতেও পশু-পাখিদের জন্য জল, খাবার রেখে দিচ্ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক হরেকৃষ্ণ সরকার, মনিরুল হক মণ্ডল, শিক্ষিকা ববিতা বিশ্বাস বলেন, 'অপরিকল্পিত ভাবে গাছকাটা, নগরায়ন, অতিরিক্ত বৃক্ষরোপণ না হওয়ার কারণেই আজ এই তীব্র তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমাদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশে পড়তে হচ্ছে পশু-পাখিদেরও। তাই তাদের রক্ষার দায়ও আমাদের। যতক্ষণ না বর্ষা শুরু হচ্ছে, তত দিন এভাবেই জল ও খাবার দেওয়া হবে।'