• ‘ফারাওয়ের অভিশাপ’ কি আসলে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ! ফের চর্চায় তুতেনখামেন
    এই সময় | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: ফারাওয়ের শান্তির ঘুম যে ভাঙাবে, তার উপর অভিশাপ নেমে আসবেই— হায়রোগ্লিফিক লিপিতে নাকি এমনই কথা লেখা ছিল মিশরের ফারাও তুতেনখামেনের সমাধিতে। যা নাকি সমাধি আবিষ্কারের পর-পরই মুছে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার! কার্টার নিজে যদিও এমন কোনও ঘটনার কথা স্বীকার করেননি আজীবন। তবু ‘ফারাওদের অভিশাপ’ নিয়ে রটনা রয়েই গিয়েছে।মাত্র ৯ বছর বয়সে প্রাচীন মিশরের রাজা হন তুতেনখামেন। মারা যান মাত্র ১৮ বছর বয়সে! কী ভাবে? সে সংশয় কাটেনি সাড়ে তিন হাজার বছরেও! ঠিক যেমন ধোঁয়াশা কাটেনি বিপুল ঐশ্বর্য-সহ তাঁর ওই সমাধি আবিষ্কারের পরে বহু ‘রহস্যমৃত্যু’ নিয়ে! ব্রিটিশ ধনকুবের লর্ড কার্নারভনের নেতৃত্বে তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কার করেন। কিন্তু তিনিও সমাধির পুরোটা দেখে যেতে পারেননি। সমাধি আবিষ্কারের কয়েক মাসের মধ্যেই কায়রোয় বিষাক্ত মশার কামড়ে মারা যান লর্ড কার্নারভন।

    তাঁর মৃত্যুর সময়ে নাকি কায়রো আঁধারে ডুবে যায়। কার্নারভনের ইংল্যান্ডের বাড়িতে থাকা কুকুরটিও নাকি অদৃশ্য কাউকে তাড়া করতে গিয়ে মারা গিয়েছিল ঠিক মালিকের মৃত্যুর সময়ে। শোনা যায়, সমাধির দরজা খোলার দিনই নাকি কার্টারের পোষা পাখির মৃত্যু হয় কেউটের কামড়ে। আমেরিকান ধনকুবের জর্জ গোল্ডও অজানা জ্বরে ভুগে মারা যান তুতেনখামেনের সমাধিতে ঢোকার কয়েক মাসের মধ্যে। সমাধির ভেতরের ছবি তুলেছিলেন মিশরের যুবরাজ আলি কামেল ফাহমি। পরের বছরই তাঁকে গুলি করে মারেন তাঁর স্ত্রী!

    এ সবের নেপথ্যে কি ফারাওয়ের অভিশাপ? সমাধির খননকার্যে নামা বহু খনন-শ্রমিকেরও অকাল মৃত্যু কিংবা রোগভোগের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। না, এর মধ্যে কোনও অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার নেই— দাবি করলেন আমেরিকান বিজ্ঞানী রস ফেলোজ়। গত কয়েক দশকের তর্ক-বিতর্কে সম্পূর্ণ নতুন থিয়োরি শোনা গেল তাঁর মুখে।

    বিজ্ঞানীর দাবি, ‘অভিশাপ বলে কিছু হয় না। তুতেনখামেনের সমাধির মধ্যে রাখা ভয়ঙ্কর তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম-সমেত নানাবিধ টক্সিক মেটেরিয়ালই এ ক্ষেত্রে আসল ভিলেন। একটা সিল করা সমাধিক্ষেত্রের মধ্যে ৩ হাজার বছর ধরে এমন সব পদার্থ রাখা থাকলে, যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।’ জার্নাল অফ সায়েন্টিফিক এক্সপ্লোরেশন সম্প্রতিই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণা। যেখানে তিনি তুতেনখামেনের সমাধিক্ষেত্রের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন।

    এই জাতীয় বিকিরণে শরীরে নানাবিধ সমস্যা, এমনকী ব্লাল বা বোন ক্যান্সারও হতে পারে বলে দাবি করেছেন তিনি। গিজ়া সংলগ্ন অন্তত দু’টি সাইট থেকে সেফটি স্ট্যান্ডার্সের থেকে ১০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয় বিকিরণের হদিশ তিনি পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ফেলোজ়। সাক্কারার কিছু সমাধিক্ষেত্রে রেডিয়োঅ্যাক্টিভ গ্যাসের খোঁজ মেলার কথা লিখেছেন তিনি তাঁর গবেষণায়।

    তবে মিশরের কিছু কিছু সমাধির দেওয়ালে যে ‘অভিশাপ’ লেখা রয়েছে, সে কথা স্বীকার করেছেন তিনিও। তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের কয়েক মাসের মাথায় লর্ড কার্নারভনের রহস্যমৃত্যু নিয়ে তাঁর দাবি, ‘উনি মারা যান ব্লাড পয়জ়নিং এবং নিউমোনিয়ায়। এর পিছনে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে থাকতেই পারে!’
  • Link to this news (এই সময়)