• ফাঁকা পড়ে আছে রেলের জমি, হাসপাতাল-ট্যুরিজমের দাবি তুলে শুরু আন্দোলন
    ২৪ ঘন্টা | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • প্রদ্যুৎ দাস: স্বাধীনতার আগে তিস্তা পারের ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহনীতে ছিল বেঙ্গল ডুয়ার্স রেলওয়ে হেড কোয়ার্টার। এখানেই ছিল ডিআরএম অফিস। ছিল স্টিম ইঞ্জিনের শেড।

    সেইসময় ডুয়ার্সের মালবাজার থেকে দোমহনী হয়ে মেখলিগঞ্জ পার হয়ে বাংলাদেশের ভেতর থাকা বুড়িমারি হয়ে লালমনি হাট, সেখান থেকে পার্বতীপুর হয়ে শিয়ালদহ পর্যন্ত অত্যন্ত কম সময়ে চলে যেত একাধিক ট্রেন। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কলকাতা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যাবস্থা থাকায় এখানে প্রচুর শ্রমিক কাজ করতেন। তারা এই অঞ্চলেই থাকতেন। খুব স্বাভাবিক ভাবে এই এলাকা অত্যন্ত জমজমাট ছিল।

    ১৯৬৮ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তা নদীতে বিধ্বংসী বন্যা হয়। সেই সময় এই অঞ্চল ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। এরপর ৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশ তৈরী হওয়ার পর এই এলাকা আরও গুরুত্ব হারায়। রেলের যাবতীয় পরিকাঠামো সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।এর ফলে একসময়ের জমজমাট দোমহনী স্টেশন ফাঁকা হয়ে যায়। বহু একর জমি বর্তমানে পড়ে আছে। একসময় এই স্টেশন দিয়ে দিনে আট জোড়া ট্রেন চলাচল করতো। এখন এই স্টেশন দিয়ে মাত্র দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করে।এর পাশাপাশি দোমহনী স্টেশন থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি স্টেশন করা হয়েছে। দোমহনী, নিউ দোমহনী এবং Y লেগ স্টেশন। খুব কাছাকাছি এই তিনটি স্টেশন হওয়ায় কোনও স্টেশন থেকেই তেমন মানুষ ওঠানামা করেনা। কিন্তু এই তিনটি স্টেশন রক্ষনাবেক্ষনের জন্য রেলের প্রচুর পরিমানে অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

    এইবার এই এলাকার গৌরব ফিরিয়ে আনার লক্ষে একজোট হয়েছে ময়নাগুড়ির বাসিন্দারা। তাঁরা নাগরিক চেতনা নামে একটি মঞ্চ গড়েছেন।সেই মঞ্চের সদস্যরা এখন রেলের এই পড়ে থাকা জমিতে রেলের ওয়ার্কশপ, AIMS-এর ধাঁচে হাসপাতাল, তিনটি স্টেশনকে মিলিয়ে Y লেগ স্টেশনকে জংশনে পরিনত  করার পাশাপাশি রেলের পড়ে থাকা কোয়ার্টার ও অন্যান্য পরিকাঠামোগুলিকে কাজে লাগিয়ে ইকো টুরিজম হাব গড়ে তোলার দাবীতে আন্দোলন শুরু করলেন। একইসঙ্গে দোমহনী স্টেশন মাস্টারের কাছে স্মারকলিপিও জমা দিলেন তাঁরা।সুশান্ত দাস নামে স্থানীয় এক যুবক জানিয়েছেন দোমহনীর গৌরব ফিরিয়ে আনার দাবীতে জন চেতনা মঞ্চের পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এখানে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে’।

    সব্যসাচী রায় নামে এক পর্যটন ব্যাবসায়ী জানিয়েছেন, ‘রেল যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নত হলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হবে। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই দোমহনী স্টেশন। এখান থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে গরুমারা জাতীয় উদ্যান। মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে রামশাই। মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে জল্পেশ ও জটিলেশ্বর মন্দির। এখান থেকে খুব কাছেই সামসিং, সুন্তালেখোলা সহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র। তাই এই স্টেশনের উন্নতি হলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হবে’।

    জন চেতনা মঞ্চের সম্পাদক অপু রাউত বলেন, ‘এখানে ৪০ হাজারের বেশি লোকের বসবাস। এই এলাকা একসময় জমজমাট থাকার ফলে এখানকার মানুষ ব্যাবসা বানিজ্য করে ভালোভাবে সংসার চালাতেন। কিন্তু ৬৮ সালের বন্যার পর সব শেষ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের রুজিরোজগার বিপন্ন। এখানে রেলের ৪০০ একরের বেশি জমি পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। তাই আমরা চাই এই জমিতে কেন্দ্রীয় সরকার AIMS এর ধাঁচে হাসপাতাল করুক। রেলের ওয়ার্কশপ তৈরী করুক। তিনটি স্টেশনকে মিলিয়ে দিয়ে একটি জংশন স্টেশন স্থাপন করুক। আরও রেল চলাচল করুক। এইসব হলে এখানে লোক সমাগম বাড়বে। ফলে নতুন করে  রুজিরোজগার চালু হবে। এই লক্ষে আজ আমরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে আমাদের দাবীপত্র স্টেশন ম্যানেজারের মাধ্যমে ডিআরএম এর কাছে প্রেরণ করলাম’।

    দোমহনী স্টেশন ম্যানেজার সৌরভ চৌধুরী জানিয়েছেন, এই দাবীপত্র তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। 
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)