• পরিযায়ীদের ভোটদানের ব্যবস্থা করতে আবেদন
    আনন্দবাজার | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • ভোট আসে, ভোট যায়। হাল ফেরে না পরিযায়ী শ্রমিকদের। মুর্শিদাবাদের কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক কর্মসূত্রে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকেন। ভোটের সময়ে তাঁদের অনেকেই কর্মস্থলে থাকার কারণে ভোট দিতে পারেন না। অথচ গণতন্ত্রে প্রত্যেক ভোটারের মূল্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভোটদানে উৎসাহ দিতে মানুষকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সচেতনও করা হয়। অথচ ভোটের মরসুমে পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই পেটের দায়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে পড়ে রয়েছেন। তাঁদের ভোটদানের ব্যবস্থা করার দাবি তুলল পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এ বিষয়ে তারা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছে।

    স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার মতিউর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের জেলার প্রায় ৬ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে, ভিন্ দেশে কর্মসূত্রে থাকেন। এই ৬ লক্ষ মানুষ ভোটদান করতে না পারলে গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসব পূর্ণতা পায় না। তাই পরিযায়ী শ্রমিকেরা যাতে ভোটদান করতে পারেন বা ঘরে ফিরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিক নির্বাচন কমিশন।’’

    জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ নেই। তবে দেশজুড়ে কমিশন যে ভাবে ভোটদানে উৎসাহ দিতে সচেতন করে, তেমনই এখানেও হচ্ছে।জেলার প্রায় চার লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক নাম নথিভুক্ত করেছে শ্রম দফতরে। এ ছাড়া বিদেশে আরও লাখ দুয়েক মানুষ কাজ করেন। সব মিলিয়ে জেলার প্রায় ৬ লক্ষ বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। তাঁদের একাংশ ভোটদান করতে বাড়ি ফিরলেও একটা অংশ কর্মস্থলেই থেকে যান। তবে বিগত নির্বাচনে পরিযায়ীদের ভিন্ রাজ্যের ঠিকানা সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়ে ভোটদান করতে আসার আহ্বান জানানোর নজির রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও পরিযায়ীদের ভোট দানের আহ্বান জানায়। তাঁদের সাড়া দিয়ে অনেকে ভোট দিতে বাড়ি ফেরেন।’’

    জানা গিয়েছে, ২০০১ সালে সিপিএমের মুর্শিদাবাদের তৎকালীন জেলা সম্পাদক মধু বাগ তাঁদের দলীয় মুখপত্রে ৬০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে ভোট দিতে বাড়ি ফেরার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। আবার ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের ১ লক্ষ ১২ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফিরে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক। এ বারেও পরিযায়ীদের ভোটদানে উৎসাহ দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে।

    মুর্শিদাবাদের মোট ভোটার হলেন ৫৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ৮১৮ জন। তাঁদের মধ্যে ২৮ লক্ষ ৯০ হাজার ৩৮৫ জন পুরুষ এবং ২৮ লক্ষ ৩ হাজার ৩৩০ জন মহিলা এবং ১০৩ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে বা ভিন্ দেশে থাকেন। পরিযায়ীদের সিংহ ভাগ পুরুষ ভোটার। ফলে বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা যায় ভোটদানে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা এগিয়ে থাকছেন।

    বহরমপুরের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, সামরিক বা সরকারি কর্মচারীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট, ভোট কর্মীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট, বয়স্ক এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য বাড়িতে ভোট দেওয়া, সাংবাদিকদের জন্যও পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটদানের সমস্যা সমাধানে কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটদান নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)