Narendra Modi : 'কলকাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে! মুম্বই যেন সে পথে না হাঁটে...', বাংলার রাজধানীকে তাচ্ছিল্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর
এই সময় | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
কলকাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ের অবস্থা যেন কলকাতার মতো না হয়। বিস্ফোরক মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তিনি কেন মনে করছেন, কলকাতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে?নিউজ ১৮ গ্রুপে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, 'বাংলা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কলকাতা একটা সময় দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির নিরিখে সর্বাগ্রে থাকত। রাজনীতির জন্য তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রকে অন্তত সেই পথে যেতে দেওয়া যাবে না।' মোদীর সংযোজন, 'মুম্বই দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। মহারাষ্ট্রে আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে যাতে দেশের উন্নতিতে সে রাজ্যের যথেষ্ট অবদান থাকে। মহারাষ্ট্রের মানুষের আবেগ বোঝার চেষ্টা করছি আমরা। আমাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি তাদের। অত্যন্ত ইতিবাচক ফলও পাচ্ছি সেখান থেকে।'
মোদীর কথায়, 'মহারাষ্ট্র সরকার দীর্ঘদিন ধরেই জোট সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। কোনও মুখ্যমন্ত্রীই সেখানে পাঁচ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি। বিলাসরাও দেশমুখ কিংবা শরদ পাওয়ারের মতো নেতাও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত সরকার চালাতে পারেননি। এটা মহারাষ্ট্রের দুর্ভাগ্য যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকেই সে রাজ্যের বাসিন্দারা পাঁচ বছরের বেশি পায়নি। দীর্ঘদিন বাদে দেবেন্দ্র ফড়ণবীশই একমাত্র যিনি নিজের মেয়াদ সম্পূর্ণ করেন। তাঁর সরকার ছিল পরিচ্ছন্ন এবং দাগহীন। মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করেছে তাঁর সরকার।'
উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা এবং একনাথ শিন্ডের শিবসেনার মধ্যে তফাতগুলি হাইলাইট করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, 'যারা আমাদের সঙ্গে নির্বাচনে লড়েছে, মহারাষ্ট্রের মানুষের কাছে আমাদের সঙ্গে নিয়ে ভোট চেয়েছেন, তারাই এখন ইগো দেখাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছিলেন। আর সে কারণেই জোট ভেঙে গিয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন আমাদের সঙ্গে। বালসাহেব ঠাকরের আমলে তৈরি একটি সম্পর্ক এভাবে ভেঙে যাওয়ার কথা নয়। এই কারণেই মহারাষ্ট্রের মানুষ ওদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। তারা BJP-কেই সমর্থন করেন।'
মহারাষ্ট্রের জন্য BJP অনেক আত্মত্যাগ করেছে। এমনটাই মত প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর কথায়, 'অনেকে ভেবেছিল আমরা মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির জন্য লোভী। একদমই তা নয়। চাইলে তো আমরা মুখ্যমন্ত্রীর আসন নিতেই পারতাম। কিন্তু, আমরা তা নিইনি। আমরা মহারাষ্ট্রের মানুষকে বোঝাতে পেরেছি আমরা তাদের জন্য সর্বদা রয়েছি। নিজেদের স্বার্থ দেখছি না। এই নির্বাচনে এই আবেগটাই আমাদের পক্ষে রয়েছে। BJP-র মতো বড় দল, একজন সফল মুখ্যমন্ত্রী যিনি এখন উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন, আমাদের পক্ষে বড়সড় সমর্থন এনে দিয়েছে। মহারাষ্ট্রে BJP-র ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।'
পাওয়ার পরিবারের ভাঙন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন, 'যখন দলের থেকে পরিবার বড় হয়ে দাঁড়ায়, দেশের মানুষের সেবার থেকে পরিবারের স্বার্থ দেখা বেশি গুরুত্ব পায় তখন এমনটাই হয়। মেয়ে না ভাইপো, কাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, এই নিয়ে পাওয়ারদের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়। শিবসেনাতেও তাই হয়েছিল। ছেলে না যোগ্য দলের নেতা, কাকে প্রমোশন দেওয়া হবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। পরিবারতন্ত্রকে ঘৃণা করে আমাদের দেশ। পরিবারের ঝামেলা পরিবারের অন্দরেই মিটিয়ে নেওয়া উচিত। মহারাষ্ট্রকে এইসব করে নষ্ট করবেন না। কলকাতার মতো মুম্বইকে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।'
প্রসঙ্গত, মাত্র কয়েকমাস আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল দাবি করেছিলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং বাম সরকার কলকাতা তথা বাংলার অর্থনীতি, বুদ্ধিজীবী মহল এবং সাংস্কৃতি ক্ষেত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই ধাক্কা কলকাতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তিনি বলেন, 'জ্যোতি বসুর খাতায় মরিচঝাঁপির গণহত্যার দাগ লেগে রয়েছে। তিনি ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করতে শুরু করেছিলেন। আমার মনে আছে, ছেলেবেলায় আমি লণ্ঠন-মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতাম। আমি দরিদ্র পরিবারে বড় হইনি. আসলে তখন তো বিদ্যুৎই থাকত না।' কলকাতা তথা বাংলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার মন্তব্যে সেই সুরই এবার খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে।