১। প্রশ্ন: দু’দফার ভোট মিটে যাওয়ার পরেও কি আপনি নিশ্চিত চারশোর টার্গেট পেরবে বিজেপি?মোদী: নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পরে আমি অন্তত ৭০টা র্যালি ও রোড-শো করেছি। সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা, আবেগ ও সহযোগিতা আমি দেখেছি, তা আমরা যে চারশোর টার্গেট পেরতে পারব, সেই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। সাধারণ মানুষ বুঝেছেন, বিজেপিকে একটা ভোট দেওয়া মানে উন্নয়নের স্বার্থে একটা ভোট দেওয়া। দু’দফার ভোটে বিরোধীরা আউট হয়ে গিয়েছে। আর ৪০০ আসন পাওয়ার লক্ষ্যে আমরা এগোচ্ছি, কারণ, আমরা দেশের এসসি, এসটি, ওবিসিদের অধিকার সুরক্ষিত করতে চাই। যাতে বিরোধীরা তাঁদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে রেখে দেওয়ার যে ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছে, সেটা ধূলিসাৎ করে দেওয়া যায়, সেজন্যই আমরা বিশাল মার্জিনে জয় চাইছি।
২। প্রশ্ন: ‘অব কি বার চারশো পার’ বলার পরেও যখন আপনি বিজেপির জন্য ৩৭০ আর এনডিএ-র জন্য ৪০০ আসনের টার্গেট দিয়েছেন, তখন কি কোথাও আপনার মধ্যে এই চিন্তা ছিল যে পার্টি ক্যাডার, এমনকী ভোটারদের মধ্যেও একটা আত্মসন্তুষ্টি গ্রাস করতে পারে?
মোদী: ‘অব কি বার চারশো পার’—শুধুমাত্র একটা পার্টির স্লোগান নয়, এটা সাধারণ মানুষেরও সেন্টিমেন্ট...এটা সেই সব মানুষের সমবেত স্বর, যাঁরা আমাদের প্রচেষ্টাটা বুঝতে পারছেন এবং যাঁরা আগামীতে আরও বদল দেখতে চান।
আরও একটা বিষয়—এই স্লোগানটা আমাদের কাছেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং ইমোশনালও বটে। যেমন—আর্টিকল ৩৭০ আমার এবং আমাদের দলের কার্যকর্তাদের কাছে অত্যন্ত ইমোশনাল ইস্যু। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের বিষয়টার জন্য আমাদের বহু প্রজন্ম অপেক্ষা করেছে। এই লক্ষ্যটা আমাদের কার্যকর্তাদেরও বহু যুগ ধরে প্রেরণা জুগিয়েছে। যখন সাধারণ মানুষ দেখেছেন, আমাদের সরকার ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে দেখিয়েছে, তখন তাঁদের মধ্যেও এই মনোভাব নিশ্চিতভাবে কাজ করবে, যে সরকার এই কাজটা করতে পেরেছে, তাদের ৩৭০টা আসনে জয়যুক্ত করতে হবে।
আমি নিজে একজন পার্টি কার্যকর্তা হিসাবে বলতে পারি, বিজেপির মধ্যে কোনও আত্মসন্তুষ্টি গ্রাস করেনি। আমাদের পার্টির প্রত্যেক শীর্ষ নেতাও সর্বক্ষণ মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন, সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেক বুথে দেখবেন, শুধুমাত্র বিজেপির কার্যকর্তাই রয়েছেন।
আমি এটাও দেখেছি, বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে দেশকে নিয়ে একটা আবেগ রয়েছে এবং সেই কারণে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে তাঁদের অনেকে স্বেচ্ছায় বিজেপির হয়ে ভলান্টিয়ার করতে এগিয়েও আসছেন। এই মনোভাবই আমাদের অনেক সাহায্য করছে।
৩। প্রশ্ন: দক্ষিণ ভারতে আপনাদের অবস্থা কেমন বুঝছেন? কেরালা ও তামিলনাড়ুতে তো আপনারা এবার বড়সড় প্রচারে নেমেছেন...
মোদী: দক্ষিণ ভারতে বিজেপির ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। বিষয়টা ঠিক এরকম নয় যে, আমি একাই এক্ষেত্রে ঝাঁপিয়েছি। দক্ষিণ ভারতের জনতা নিজেরাই ঝাঁপিয়েছেন, বিজেপির জন্য জায়গা করে দিতে। আপনি দক্ষিণ ভারতে যেখানেই যান না-কেন, সাধারণ মানুষ সেখানে আমাদের যেভাবে গ্রহণ করছেন এবং যে আবেগ সহকারে গ্রহণ করছেন, সেটা অভূতপূর্ব।
দক্ষিণ ভারতের মানুষ এতদিন কংগ্রেস বা আঞ্চলিক দলের শাসন দেখে এসেছেন। তাঁরা দেখেছেন, এই দলগুলো কীভাবে শুধু দুর্নীতি, পরিবারবাদ, বিভেদবাদ, মিসগভর্ন্যান্স এবং ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি চালিয়ে এসেছে। ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি এই দলগুলোর ঘৃণার মনোভাবও মানুষ দেখেছেন। এসব দেখতে দেখতে সেখানকার জনতা কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলোর ভূমিকায় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।
আর উল্টোদিকে কেন্দ্রে আমাদের সরকারকেও সেখানকার মানুষ দেখছেন। বুঝতে পারছেন, আমাদের সরকারের জনকল্যাণমুখী কর্মসূচিগুলি কীভাবে তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির মধ্যেই তাঁরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন এবং বিজেপিকেই তাঁরা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প বলে মনে করছেন। ২০১৯-এই বিজেপি দক্ষিণ ভারতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছিল। এবং এবার আরও বড় মার্জিনে বিজেপিই একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হবে।
দক্ষিণ ভারতে এবারের ভোট অনেক মিথ ভেঙে দেবে। মানসিক দিক থেকে দক্ষিণ ভারতে আমাদের হাওয়া এমনিতেই অনেক বেড়ে গিয়েছে। আপনারা দেখবেন, আমাদের ভোট শেয়ার ও সিট শেয়ারও অনেকগুণ বাড়বে।
৪। প্রশ্ন: কর্নাটকে লোকসভা ভোটে বিজেপি বিপুল জয় পেলেও বিধানসভা ভোটে বড় ধাক্কা খেয়েছিল। এবার তো বলা হচ্ছে, আপনাদের সংখ্যা এবার আরও কমবে। আপনার কী মত?
মোদী: প্রত্যেক ভোটেই তো আমরা একই কথা শুনি। যাঁরা বলছেন, আমাদের অঙ্কটা এবার আরও কমে যাবে, তাঁরা নিজেরাই ৫০টি আসনে নেমে এসেছেন। কর্নাটকের জনতার সঙ্গে বিজেপির বরাবরই একটা বিশেষ যোগ আছে। ২০১৯-এও বিজেপি সেখানে বিপুলভাবে জয় পেয়েছে। এবং গত ১০ বছরে আমাদের সরকার অর্থনৈতিক দৃঢ়তা, দেশের সার্বিক সুরক্ষা এবং জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির স্বার্থে যে কাজ করেছে, তাতে কর্নাটকে এবার ২৮টি সিটেই এনডিএ জিতবে। জেডিইউ-এর যোগদানে এনডিএ আরও শক্তিশালী হয়েছে।
এই রাজ্যে সাধারণ মানুষ ভুগছেন আর কংগ্রেস নেতারা নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যস্ত কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে। কংগ্রেস সরকারের ভুল নীতি আর নিজেদের প্রতিশ্রুতির খাপছাড়া রূপায়ণের জন্য সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে জিতিয়ে আনার জন্য কর্নাটকের জনতা এখন পস্তাচ্ছেন। এবার তাঁরা মোদীর গ্যারান্টিতেই আরও বেশি করে আস্থা রাখবেন।
৫। প্রশ্ন: কর্নাটক ও তেলঙ্গানায় কংগ্রেস সরকারের গ্যারান্টি তাদের বিপুল জয়ের নেপথ্যে বড় কারণ ছিল। ‘মোদী কি গ্যারান্টি’ কি এই ভোটে তাদের টেক্কা দিতে পারবে?
মোদী: আমার কাছে গ্যারান্টি শব্দটা নিছক একটা কথার কথা নয়। এটা আমার কাছে অত্যন্ত পবিত্র একটা শব্দবন্ধ। এটা আমার কঠোর পরিশ্রম এবং বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। জনগণের সেবায় আমি আমার সর্বস্ব দেওয়ার যে অঙ্গীকার করেছি, এই শব্দবন্ধ তারই বহিঃপ্রকাশ। আমি যখন গ্যারান্টির কথা বলি, তখন এই শব্দটা আমাকে মানুষের জন্য কঠোরতর পরিশ্রম করার সাহস জোগায়। আমি যখন গ্যারান্টির উপর এতটা গুরুত্ব দিই, তখন স্বাভাবিকভাবে মানুষও সেটা অনুভব করেন।
সাধারণ মানুষ এটা দেখছেন, পরিস্থিতি যেমনই হোক না-কেন, মোদী যে গ্যারান্টি দেয়, সেটা মোদী করে দেখায়। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল থেকে রেশন, গরিবদের জন্য বাড়ি তৈরি থেকে এক্সপ্রেসওয়ের সফল রূপায়ণ—মোদী কিন্তু জনতাকে দেওয়া তার প্রতিটি প্রতিশ্রুতি কার্যকর করে দেখিয়েছে। মোদীর গ্যারান্টির মধ্যে যদি, কিন্তু বলে কোনও শব্দ নেই।
উল্টোদিকে কংগ্রেসকে দেখুন—তাদের প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র মানুষকে ভোটের কথা ভেবে বোকা বানানোর জন্য। তাদের না-আছে কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা, না-আছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি রূপায়ণের আন্তরিক ইচ্ছা। স্বাধীনতার সময় থেকেই তো ওরা কত গ্যারান্টি দিয়ে এসেছে। তাঁদের সর্বোচ্চ নেতার দেওয়া বৃহত্তম গ্যারান্টিরই কী পরিণতি হয়েছে, সেটা দেখুন। একের পর এক কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে দারিদ্র দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন দশকের পর দশক ধরে, কিন্তু কিছুই হয়নি।
গরিব মানুষ তারপরেও বাড়ি, শৌচালয়, পানীয় জলের সংযোগের মতো অত্যন্ত জরুরি জিনিসগুলো ছাড়া বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। আর উল্টোদিকে লাগামছাড়া দুর্নীতি চলেছে। ভারতবর্ষের সঙ্গেই যে সব দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের অর্থনীতি কোথায় এগিয়ে গিয়েছে আমাদের পিছনে ফেলে! আমরা ক্ষমতায় আসার আগে তো ভারতবর্ষকে ‘ফ্র্যাজাইল-ফাইভ’-এর (ভঙ্গুরতম পাঁচটি দেশ) তালিকায় ফেলা হতো। অর্থাৎ, সাধারণ মানুষের কাছে মোদীর গ্যারান্টির সঙ্গে কংগ্রেসের ব্রোকেন প্রমিজ়-এর কোনও তুলনাই হয় না।
৬। প্রশ্ন: কর্নাটকে বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস। বিজেপি পাল্টা তোষণের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে। এই দোষারোপের খেলাকে কী ভাবে দেখছেন?
মোদী: শুধু অভিযোগ নয়, সংবাদমাধ্যমের দেখা উচিত, কী পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিস্ফোরণ, একটি মেয়ের নৃশংস খুন, ভজন-কীর্তন দলের উপর হামলা—কর্নাটকে পর পর ঘটে চলেছে। বোমা বিস্ফোরণের সময়ে রাজ্য সরকার মানুষকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করেছিল। কলেজ ছাত্রীর খুনে তাঁর বাবা ন্যায়বিচার চেয়ে পুলিশের দরজায় দরজায় ঘুরছেন।
নিহত ছাত্রীর বাবা কংগ্রেসের সদস্য, তার পরও তিনি ন্যায়বিচার পাননি। এটা তোষণ ছাড়া আর কী? কর্নাটকে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ পাইয়ে দিতে কংগ্রেস অসাংবিধানিক ভাবে আইন পাশ করিয়েছে, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো মোটেই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ নয়।
আমাদের সংবিধানেই বলা আছে, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া যাবে না। বিজেপি ওবিসিদের যে সংরক্ষণ দিয়েছিল, কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার সেই আইন বদলে সব মুসলিমকেই ওবিসি বলে চিহ্নিত করে সংরক্ষণ দিয়েছে। এমনকী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল কমিশন অফ ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস’ও কংগ্রেসের এই পদক্ষেপকে সামাজিক ন্যায়ের বিরোধী বলে সমালোচনা করেছে।
এদিকে তেলঙ্গানার কংগ্রেস সরকারও বলেছে, কর্নাটক প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বলবৎ করবে তারা। এতেই স্পষ্ট—কংগ্রেস এসসি, এসটি এবং ওবিসিদের সংরক্ষণ কমিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ দিতে চায়। অবশ্য যে দলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরই দেশের সম্পদের উপর প্রথম অধিকার, সেই দলের থেকে আর কী-ই বা প্রত্যাশিত!
৭। প্রশ্ন: কর্নাটক এবং অন্যত্র বিরোধীরা উত্তর-দক্ষিণ বিভাজনের একটা অভিযোগ তুলছেন। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার দক্ষিণের রাজ্যগুলোর প্রতি বৈষম্য করছে। এই অভিযোগের সারবত্তা কতটা?
মোদী: বৈষম্যের মিথ্যে অভিযোগ তুলে নিজেদের দুর্নীতি এবং অপশাসন থেকে নজর ঘোরানো বিরোধীদের স্বভাব। কর্নাটকের দেশপ্রেমী মানুষ ভারতের এই বিভাজন মেনে নেবেন? কংগ্রেসের তৈরি করা মিথ্যে বিভাজন দেশপ্রেমী সব ভারতীয়ই প্রত্যাখ্যান করবেন। বামেদের সঙ্গে মিলে কংগ্রেস কেরালাকে প্রায় দেউলিয়া করে দিয়েছে। আর এখন কর্নাটক, তেলঙ্গানাতেও সেটাই করার চেষ্টা করছে।
কর্নাটকে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে মাত্র এক বছর হলো, তার মধ্যে অর্থনীতির ক্ষতি করেছে। রাজ্য সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের ভুয়ো প্রতিশ্রুতি কর্নাটকের মানুষের কোনও উন্নয়ন করতে পারেনি। বরং কংগ্রেসের অপশাসন বিনিয়োগকারীদের আশাহত করেছে, কর্নাটক থেকে বিনিয়োগ বাইরে চলে গিয়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) ৪৬% কমেছে। স্টার্ট-আপের ফান্ড কমেছে ৮০%!
৮। প্রশ্ন: আপনার পূর্বাভাস সত্যি হলে পণ্ডিত নেহরুর মতো আপনিও পর পর তিন বার জেতার রেকর্ড করে ফেলবেন। দু’জনের ব্যাকগ্রাউন্ড কিন্তু পুরোপুরি আলাদা। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
মোদী: সত্যি বলতে কী, এ সব রেকর্ডের ব্যাপারে আমি জানিও না, ভাবিও না। ট্রেন্ড অ্যানালাইজ় করা তো আপনাদের কাজ। আমি শুধু আমার কাজ করে যাচ্ছি।
তবে যদি উত্তর দিতেই হয়, আমি আপনাদের একটা অ্যানালাইজ় করার অনুরোধ করব। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবেশ, বিরোধী দল, বিরোধী নেতাদের দেখুন। এখনকার জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে কতটা সচেতন, তাঁদের শিক্ষার মান কতটা উঁচু—সেটা দেখুন। নেহরুজির ১০ বছরে দেশ কতটা এগিয়েছিল, আর আমাদের ১০ বছরের শাসনে কতটা এগিয়েছে—এটার একটা অ্যানালিসিস করা দরকার। দেশ আগামী ২৫ বছরের রোডম্যাপ তৈরি করতে চলেছে, ফলে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
৯। প্রশ্ন: রাহুল গান্ধী বলছেন, আপনাদের আচরণ খুবই ঔদ্ধত্যপূর্ণ। বিজেপি নাকি ২০০৪ সালের সেই ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ মুহূর্তের দিকে এগিয়ে চলেছে, যখন মুখ থুবড়ে পড়েছিল গেরুয়া শিবির। এ ব্যাপারে আপনার কী মত?
মোদী: ঔদ্ধত্য নিয়ে তো কংগ্রেস পার্টির যুবরাজের কথাই বলা উচিত নয়। তবে এটাও সত্যি, কংগ্রেসের দলটাই এখন শক আর চমকের উপর বেঁচে! তাদের একমাত্র আশা—কিছু একটা মির্যাক্ল ঘটুক, আর তারা ভোটটা জিতে যাবে। লড়ে জেতা সম্ভব নয়, সেটা তাদের বর্ষীয়ান সব নেতাই বুঝে গিয়েছেন। সব ভোটই তৎকালীন ইস্যুর ভিত্তিতে হয়, ফলে ভোটের মধ্যে তুলনা করা যায় না। ২০২৪ সালে আমরা শুধু নতুন জোটসঙ্গী পাইনি, মানুষের অপ্রত্যাশিত সমর্থনও পেয়েছি, আর সেটাই আমাদের জয়ের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।
১০। প্রশ্ন: আপনি বলেছেন, মানুষের সম্পত্তি, সম্পদের হিসেব করে, সেটাকে সকলের মধ্যে পুনর্বণ্টন করবে কংগ্রেস, সেটা মাওবাদী মানসিকতার প্রতিফলন। সম্পত্তি পুনর্বণ্টন নিয়ে আপনার এত চিন্তা কেন?
মোদী: এটা কংগ্রেসের একটা কথার কথা বলে ভাবলে হবে না, এই হুঁশিয়ারি ভয়াবহ আর এটা কার্যকর হলে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা পুরোপুরি মাওবাদী ভাবনাচিন্তা। কংগ্রেস এবং তাদের যুবরাজ (পড়ুন রাহুল গান্ধী) সেই মাওবাদী মতাদর্শকেই অনুসরণ করে বিপর্যয় ডেকে আনতে চাইছেন, এটা মানা যায় না।
আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন, কংগ্রেসের যুবরাজ বার বার বলেছেন, তাঁরা এক্স-রে করবেন। এই এক্স-রে আর কিছুই নয়, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি। ওরা কৃষকদের বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে দেখবে কত জমি রয়েছে! সাধারণ মানুষের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাদের সম্পত্তির হিসেব নেবে। ওরা মহিলাদের গয়নার হিসেবও নেবে।
আমাদের সংবিধান সব সংখ্যালঘুর সম্পত্তিকে সুরক্ষিত করে। এর অর্থ, কংগ্রেস সম্পত্তি পুনর্বণ্টনের কথা বললেও সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি তারা স্পর্শ করতে পারে না। ওরা ওয়াকফের সম্পত্তি পুনর্বণ্টন করবে না, নজর পড়েছে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের সম্পত্তির উপর। এটা সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা ছাড়া আর কী? এ ব্যাপারেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেউ আমাদের দেশের ক্ষতি করে চলে যাবে, সেটা হতে দিতে পারি না।
দেশের এবং দশের উন্নয়ন, মঙ্গলসাধনই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠ—কাউকে সুবিধা দিতেই নীতি বানাই না। আমরা দেশের মঙ্গলের জন্য পলিসি বানাই, সেখানে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের মধ্যে কোনও বিভেদ করা হয় না।
১১। প্রশ্ন: ভারতীয় অর্থনীতির বিস্তার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সমতা আর বৈষম্য নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। আপনি কি মনে করেন সম্পত্তি কর আর উত্তরাধিকার কর এর সমাধান?
মোদী: কোনও ভাবেই এগুলোকে সমাধান বলা যায় না, বরং এগুলো সমাধানের ছদ্মবেশে বিপজ্জনক সমস্যা। সরকার যদি পুনর্বণ্টনের নামে আপনার টাকা কেড়ে নেয়, আপনি আর দিন-রাত পরিশ্রম করবেন কি? আমরা ৩ কোটি মহিলার ক্ষমতায়ন করে ‘লাখপতি দিদি’ বানিয়েছি। কিন্তু সম্পত্তি বা উত্তরাধিকার কর বসালে কোনও মহিলা লাখপতি হবেন না, কারও উন্নতির ইচ্ছেও থাকবে না। হকার ভাইয়েরাও আমাদের সরকারি নীতির ফলে অনেক উন্নতি করেছেন, এই কর বসালে তাঁরাও উন্নতি করতে পারতেন না। এই ধরনের নীতি স্টার্ট-আপ রিভোলিউশনকেও ধ্বংস করে দেবে। এই নীতি শুধু ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে পারে।
যদি সত্যিই মানুষের উন্নতি করতে চাই, তাঁদের পথের বাধা সরিয়ে ক্ষমতায়ন করতে হবে। সম্পত্তি কর বা সম্পত্তি পুনর্বণ্টনের মতো বিষয়গুলো কখনওই সফল হয়নি, কারণ এই নীতি দারিদ্র দূর করতে পারেনি। গরিবরা গরিবই থেকেছেন। সম্পত্তি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, দেশজুড়ে শুধু দারিদ্রই ছড়িয়েছে। এই নীতি আদতে সাম্যের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বিদ্বেষ, অসাম্যই ছড়ায়।
১২। প্রশ্ন: ২০১৯ সালে উজ্জ্বলা যোজনা থেকে পিএম আবাস যোজনা—মানুষ বিপুল ভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে, তাই বিজেপিকে ঢেলে ভোটও দিয়েছে। কিন্তু এ বার কোনও প্রকল্পই নতুন নয়। এবারও কি বিজেপিকে আগের মতোই ভোট দেবে জনতা?
মোদী: আমাদের ইস্তেহার দেখলে বুঝবেন, আমরা শুধু কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে বাড়াইনি, প্রয়োজন বুঝে তাতে পরিবর্তনও করেছি। যেমন ধরুন—আমাদের মুদ্রা যোজনা নতুন উদ্যোগপতিদের জগতে বিপ্লব এনেছে। এ বার চাহিদা বুঝে আমরা লোন অ্যামাউন্ট দ্বিগুণ করছি। প্রথম বারে ৩ কোটি বাড়ি, ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছিলাম আমরা, এখন আমরা ‘পিএম সূর্যঘর মুফত বিজলি যোজনা’ এনেছি, যাতে মানুষ বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পায়। আগে স্টার্ট-আপের জন্য পলিসি বানিয়েছিলাম, এখন আমরা ভারতকেই একটা স্টার্ট-আপ হাব বানাতে চাই।
ফলে বুঝতেই পারছেন, সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে আমরা দিশা বদলাচ্ছি, স্কিমের পরিধি বাড়াচ্ছি। যে সব মানুষ দারিদ্ররেখা পেরিয়ে এসেছেন, তাঁরা যেন আর গরিবিতে ফিরে না যান, এটা নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য। মিথ্যে, অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দেওয়ার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
১৩। প্রশ্ন: রামমন্দির বাদে এবারের ভোটে তেমন কোনও আবেগপ্রবণ বিষয় নেই৷ আপনি কি মনে করেন, আমজনতা তাদের জীবন ও সম্ভাবনার উন্নতি বিবেচনা করবে এবং আপনি যে ভোট পাওয়ার আশা করছেন, সেটি ইতিবাচক ভোট হিসেবে চিহ্নিত হবে? কাশী এবং মথুরার মন্দির সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে আদালতে৷ একটি দীর্ঘ, আইনি লড়াইয়ের অপেক্ষার পরিবর্তে উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলির কি সমাধান করা যেতে পারে?
মোদী: হ্যাঁ, রাম মন্দির আমাদের দেশের মানুষের জন্য একটি আবেগপূর্ণ বিষয়৷ এটি ৫০০ বছরের একটি সভ্যতাগত সংগ্রাম, যার সমাধান করা হয়েছে৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিপুল সংখ্যক ভারতীয়ের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছে৷
কিন্তু এটা ঠিক নয়, যে অন্য কোনও আবেগের ইস্যু নেই৷ একজন মহিলার কাছে পানীয় জলের সংযোগ, এলপিজি সংযোগ, শৌচাগার পাওয়া, লাখপতি দিদি হওয়া এবং সার্বিকভাবে একটি উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার শক্তি পাওয়া একজন মহিলা এবং তাঁর পরিবারের কাছে অবশ্যই একটি আবেগময় মুহূর্ত৷
একজন যুবক যিনি তাঁর ব্যবসা শুরু করতে এবং তাঁর পরিবারের ভরণপোষণ করতে কোনও শর্ত ছাড়াই ঋণ পান, তাঁর ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তাঁর জন্যও একটি আবেগময় মুহূর্ত৷ একজন কৃষক তাঁর সম্মান পাচ্ছেন, একজন পিতা আয়ুষ্মান ভারতের মাধ্যমে তাঁর সন্তানের সর্বোত্তম চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে পারছেন, একজন রাস্তার পণ্য বিক্রেতা প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বিতীয় ব্যবসা খুলছেন এবং পুরো লেনদেন সম্পন্ন করছেন ইউপিআই-র মাধ্যমে, সমগ্র দেশের জন্য এটি একটি আবেগময় মুহূর্ত৷ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন একটি আবেগপ্রবণ বিষয়, যা এবারের নির্বাচনে অনুরণিত হচ্ছে৷
এই দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখছেন, যে তাঁরা একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে পারেন এবং নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন, এটা তাঁদের কাছে একটি আবেগপূর্ণ বিষয়৷
কাশী এবং মথুরার বিষয়ে আমি খুব বেশি মন্তব্য করব না, কারণ বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন৷ তবে আমি আপনাদের বলব, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বিকাশে আমাদের অঙ্গীকারের কথা৷ আমাদের ইস্তেহারে বলা হয়েছে, সারা দেশের সাংস্কৃতিক পর্যটনকে উত্সাহিত করা হবে৷ এই মর্মে মন্দিরের স্থান ও সমস্ত ধর্মের সাস্কৃতিক স্থানগুলিকে তীর্থযাত্রা ও পর্যটনের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের গন্তব্য রূপে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে৷ আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মন্দির নগরীগুলির যে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে, তা শুধু তীর্থযাত্রীদেরই নয়, স্থানীয় অর্থনীতিরও উন্নতিসাধন করবে৷
১৪। প্রশ্ন: বিরোধীরা এবং ইন্ডি জোট ক্রমাগত ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে৷ এরা ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে ইভিএম বিকৃতির (ট্যাম্পারিং) অভিযোগ করেছিল৷ এই ধারাবাহিক প্রচারকে আপনি কী ভাবে দেখেন?
মোদী: আমি মনে করি, আমাদের সুপ্রিম কোর্ট এই মর্মে একটি ভালো উপসংহার টেনেছে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, ইভিএম-র গুরুত্ব এবং সেগুলির মাধ্যমে নিয়ে আসা স্বচ্ছতার কথা৷ বিরোধীরা সব সময়ে গোটা দেশকে বুথ দখলের সেই সব দিনে ফেরত নিয়ে যেতে চায়, এবং কাগজের ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ ফিরিয়ে এনেই একমাত্র সেটা করা সম্ভব৷ আমি মনে করি না, ইন্ডি জোটের সদস্যরা ইভিএম-র বিষয়টিকে যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করেছেন৷ বিরোধীদের কাছে পরাজয়ের পরে ইভিএমকেই বলির পাঁঠা হিসাবে তুলে ধরা সুবিধাজনক৷ দেখা যাক, এবার সেটা পাল্টায় কি না৷
১৫। প্রশ্ন: বিরোধীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, যে আমাদের দেশের গণতন্ত্রে বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে এবং দেশ একটি নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা তথাকথিত অনুদার ও অনমনীয় গণতন্ত্রের একটি বাস্তব সংস্করণ৷ আপনি কি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন?
মোদী: আমাদের বিরোধী দলগুলি যে পোড়া মাটির নীতি অনুসরণ করছে, এটা তারই উদাহরণ৷ আমাদের দেশে ক্ষমতা দখল করতে না পেরে বিরোধীরা বিশ্বমঞ্চে ভারতের মানহানি শুরু করে৷ তারা আমাদের দেশের জনগণ, আমাদের দেশের গণতন্ত্র এবং আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করে৷
‘যুবরাজ’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষমতা দখল করতে না পারলে দেশ নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয় না৷ শুধুমাত্র তিনিই নির্বাচনে লড়াই করবেন এবং দেশের জনতা তাঁর দ্বারা প্রভাবিত না হলেই ভারত কম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে—এটা হয় না৷ আমি মনে করি না, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মতের বিশ্বাসী বেশি লোক আছেন৷ তাঁরা নিজেদের দেশের শংসাপত্রের দোকানের থেকে বাস্তবের সঙ্গে বেশি সমন্বয় করে থাকেন৷ আমি যখন বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে মিলিত হই, তখন আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁদের প্রকৃত প্রশংসা অনুভব করি৷ তাঁরা যখন আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মানদণ্ড এবং গতির গভীরে গিয়ে বিষয়টা বিবেচনা করেন, তখন তাঁরা আমাদের দক্ষতা দেখে বিস্মিত হন৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
১৬। প্রশ্ন: বিরোধীদের হয়রানি করার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি, সিবিআই-র অপব্যবহার করার অভিযোগ আছে সরকারের বিরুদ্ধে৷ এটাও অভিযোগ করা হয়েছে যে, কলঙ্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা বিজেপিতে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই সাফসুতরো হয়ে যাচ্ছেন৷
মোদী: সংবাদ মাধ্যমের কাছে আমার অনুরোধ, আগে এই অভিযোগগুলি নিয়ে গবেষণা করুন৷ কেন দলে দলে লোক কংগ্রেস ছাড়ছে, সেই বিষয় নিয়ে আত্মসমীক্ষা না করেই এই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে৷ এমন অনেক রাজনীতিবিদ আছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইয়ের মামলা নেই। কিন্তু তাঁরাও কংগ্রেস ছেড়ে আমাদের দলে যোগদান করেছেন৷ আমি আপনাদের বলি, কেন্দ্রীয় এজেন্সির মোট মামলার একটা ক্ষুদ্র অংশ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত৷
ইডির তদন্ত করা মামলাগুলির মাত্র ৩ শতাংশ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত৷ বাকি ৯৭ শতাংশ মামলা অপরাধী এবং আধিকারিকদের বিরুদ্ধে৷ তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে৷ গত ১১ বছরে সিবিআইয়ের দায়ের করা ১০৬২২টি প্রিলিমিনারি এনকোয়্যারি এবং রেগুলার কেসের মধ্যে মাত্র এক থেকে দেড় শতাংশ মামলা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত৷ এই পরিসংখ্যানই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মোডাস অপারেন্ডি খণ্ডন করে৷
আর একটি আকর্ষণীয় তথ্য হলো, ২০১৪ সালের আগে ইডি শুধুমাত্র ৫০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল৷ গত দশ বছরে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক ট্রিলিয়নের বেশি৷
সব থেকে বড় কথা, একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন বলে একটি ক্ষেত্রেও চলমান তদন্ত বন্ধ করা হয়নি৷ দুর্নীতি একটি গভীর সমস্যা এবং আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তার মোকাবিলা করছি৷ গত দশ বছরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জারি যুদ্ধে আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি এবং এখন একটি পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আছি৷
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি উচ্চপদস্থ সরকারি আমলাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগেরও তদন্ত করেছে৷ এই মর্মে ১৬,০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ অর্থনৈতিক অপরাধের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি কতটা স্বচ্ছ ও পারদর্শী তার প্রমাণ দেয় এই পরিসংখ্যান৷
১৭। প্রশ্ন: দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এখন জেলে আছেন৷ এটা কিছুটা প্রথাবিরোধী, তবে আইন এই প্রসঙ্গে নীরব৷ আপনি কি এটাকে নজির হিসেবে দেখছেন?
মোদী: আমি মনে করি, এই ঘটনায় পুরো প্রেক্ষিতটা জনগণের সামনে তুলে ধরা সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব৷ দিল্লির মানুষ কী ভাবে ভুগছেন, আদালত মামলাটি সম্পর্কে কী বলেছে, তা দেখানো মিডিয়ার দায়িত্ব৷ আমি আশাবাদী যে এই ঘটনা নজির হয়ে উঠবে না৷ আমি মনে করি, অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নৈতিকতার এতটা অভাব হবে না এবং সেটা এই মাত্রায় যাবে না৷
১৮। প্রশ্ন: এক দেশ-এক নির্বাচন—কি আপনার তৃতীয় টার্মের কার্যসূচির শীর্ষে থাকবে? অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আপনার কী ভাবনা? কেন্দ্র কি একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি রাজ্যগুলির উপরে বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হবে?
মোদী: দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে শুধুমাত্র ভোটের কথা ভেবে সরকার পরিচালনা করে আসা হয়েছে৷ প্রতি বছর কোনও না কোনও নির্বাচন আয়োজিত হবে, তারপরেই পরের নির্বাচনের জয়ের লক্ষ্য তৈরি করা হবে—সেটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে? এর জন্য জনসাধারণের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে নিয়ে ব্যবসা করতে হলে তা-ও করা হবে, এটাই চলে আসছে! এটা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়৷ দেশ গঠনের জন্য আমাদের সময়, প্রচেষ্টা ও সম্পদের সদ্ব্যবহার এবং কীভাবে তার ফলপ্রসু বিনিয়োগ করা যায়, তা সুনিশ্চিত করবে এক দেশ-এক ভোট৷
দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের রিপোর্ট পেশ করেছেন৷ আমাদের সরকারের তৃতীয় টার্মে এই মর্মে সুনিশ্চিত, সুদৃঢ় পদক্ষেপ গৃহিত হবে৷
ইউনিফর্ম সিভিল কোড আমাদের দলের কোর অ্যাজেন্ডাগুলির মধ্যে একটি৷ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্য তার প্রয়োগ পন্থা নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ উত্তরাখণ্ড ইউসিসি প্রয়োগকারী প্রথম রাজ্য হয়েছে৷ এটাও স্পষ্ট হয়েছে, যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক আইন সমাজের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর৷ আমরা এমন একটি রাষ্ট্র বা জাতি হতে পারি না, যেখানে একটি সম্প্রদায় সংবিধানে উল্লিখিত ধারাকে অবলম্বন করে এগিয়ে চলেছে, অন্য একটি সম্প্রদায় তুষ্টিকরণের রাজনীতির জন্য সময়ের জালে জড়িয়ে পড়ে আটকে থাকছে৷ ভারতে ইউনিফর্ম সিভিল কোডকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সব কিছু করব৷