২০২১-এ আলগা হয়েছে 'হাত', মালদা দক্ষিণে লড়াই এবার ত্রিমুখী
এই সময় | ২৯ এপ্রিল ২০২৪
গনি খান চৌধুরী নেই, তবে কেউ কেউ বলেন, আজও নাকি মালদা জেলার প্রতিটা ধুলোকণার সঙ্গে মিশে রয়েছেন তিনি। নিজের আমলে মালদাকে কংগ্রেসের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন গনি খান। আর শুধু তাই নয়, মালদা জেলার রাজনীতিতে তাঁর পরিবারের আজও একটা বিশেষ প্রভাব রয়েছে বলেই মনে করেন অনেকে। শুধু গনি খান চৌধুরীই নন, তাঁর পরিবারের আরও একাধিক সদস্য সংসদে বা বিধানসভায় পা রেখেছেন। সেই মালদাতেই আগামী ৭ তারিখ হতে চলেছে লোকসভা নির্বাচন। যদিও বিগত কিছু নির্বাচনে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের 'হাত' থেকে অনেকটাই বেরিয়ে গিয়েছে মালদা। তা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও, কোনও দলই এই জেলায় কংগ্রেসকে পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারে না বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবে৭কদের একাংশের।লড়াইতে কারা?বর্তমানে মালদা জেলায় ২টি লোকসভা কেন্দ্র, মালদা উত্তর ও মালদা দক্ষিণ। তার মধ্যে মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী লড়াইতে এবারেও রয়েছেন গনি খান চৌধুরীর পরিবারে সদস্য। সেক্ষেত্রে এবারে মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে লড়াইতে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী শাহনওয়াজ আলি রেহান, বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী ও কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরী। এই ঈশা খান চৌধুরী হলেন গনি খান চৌধুরীর ভাই তথা মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরীর ছেলে। উল্লেখ্য ২০০৯ সালে মালদা লোকসভা কেন্দ্রের অবলুপ্তি ঘটিয়ে এলাকা পুনর্বিন্যাসের মধ্যে দিয়ে মালদা উত্তর ও মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।
শুরু থেকেই কংগ্রেসের দখলেমালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র গড়ে ওঠার পর থেকেই ওই আসনটি নিজেদের দখলে রেখেছে কংগ্রস। ওই কেন্দ্র থেকে একটানা ১৫ বছরের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য থেকে যে দু'টি আসন কংগ্রেস পেয়েছিল, তার মাধ্যমে একটি ছিল এই মালদা দক্ষিণ। যদিও ২০২১ সালের নির্বাচনে মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভার মধ্যে ৬টি-তেই জয় পায় পায় তৃণমূল। একমাত্র ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে জয় পায় বিজেপি। ইংরেজবাজার কেন্দ্রের জয়ী বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকেই এই আসন থেকে টিকিট দিয়েছে বিজেপি। এলাকায় 'নির্ভয়া দিদি' নামেও পরিচিত তিনি। অন্যদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শাহনওয়াজ আলি রেহানকে এই কেন্দ্র থেকে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল।
ভোটের ইস্যু কী কী?প্রত্যেক প্রার্থীই নিজের মতো করে জনসংযোগ গড়ে তুলছেন, চেষ্টা করছেন ভোটার আরও কাছে পৌঁছে যাওয়ার। ভোটে জিতে সাংসদ হলে এলাকার সমস্ত সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিচ্ছেন তাঁরা। এক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখ্য, মালদার অন্যতম বড় সমস্যা নদী ভাঙন। প্রতি বছরই নদী ভাঙনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রচুর মানুষ। বাড়িঘর ও সম্পত্তি হারিয়ে অনেকে আজও অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাই এই নদী ভাঙন ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন মালদার দীর্ঘদিনের এক সমস্যা। আর এই নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজাও অব্যাহত।
এছাড়াও রুজির টানে আজও এখানকার বহু মানুষকে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে যেতে হয় ভিন রাজ্যে। অর্থাৎ কর্মসংস্থান মালদার আরও এক মাথাব্যথার কারণ বলেই অভিযোগ। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বারেবারেই বলেছেন, বাংলায় কাজের অভাব নেই। মানুষকে এরাজ্যে থেকে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে আবার এই দক্ষিণ মালদাতেই রানওয়ে হয়ে যাওয়ার পরেও চালু করা যায়নি বিমানবন্দর। মূলত জমিজটেই তা আটকে রয়েছে বলে খবর। এলাকাবাসীদের অনেকেই মনে করেন, ওই বিমানবন্দর চালু হলে বদলে যাবে গোটা অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্রটা। সেক্ষেত্রে দেখার এবারে লড়াইতে যাবতীয় সমস্যা সমাধানের আশা নিয়ে কাকে সমর্থন দেয় মালদা দক্ষিণের মানুষ।