ইম্ফল: ভোটের আবহে ফের উত্তপ্ত মণিপুর। সেখানের কাংপোকপিতে দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক জনের, আহত অন্তত তিন। নিহত লাম্মাং কিপগেন (৪৪) কুকি সম্প্রদায়ের এক ‘ভিলেজ ভলান্টিয়ার’ বলে জানা গিয়েছে। আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ লেইমাখোং-কাংচুপ এলাকায় শুরু হয় গুলির লড়াই। মেইতেই জনজাতি অধ্যুষিত কৌত্রুক গ্রামে ঢুকে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। পাল্টা প্রত্যুত্তর দেয় গ্রামের মেইতেই ‘ভিলেজ ভলান্টিয়ার’রাও। সেই গুলিতেই লাম্মাংয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। লাম্মাংয়ের মৃত্যুর জন্য মেইতেই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করে ১২ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দেয় কাংপোকপি-র কুকি সংগঠন ‘কমিটি অন ট্রাইবাল ইউনিটি’।
রবিবার দুপুর বারোটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। শনিবার রাতের এই অশান্তির আগেই মেইতেই অধ্যুষিত বিষ্ণুপুরে একটি সেনা ক্যাম্পে হামলা হয়, যাতে প্রাণ হারান এক বাঙালি-সহ সিআরপিএফের দুই জওয়ান। এই হামলার পিছনে সশস্ত্র কুকি দুষ্কৃতীরা রয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ। পাহাড়ের উপরের অংশ থেকে ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে আততায়ীরা।
প্রায় ৪০-৫০ মিনিটের গুলির লড়াই এবং দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় শহিদ হন দুই জওয়ান, আহত হন সিআরপিএফের আরও দুই সদস্য। পরে মণিপুরের স্টেট সিকিউরিটি অ্যাডভাইজ়ার কুলদীপ সিং জানান, আততায়ীদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি, তবে কিছু তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে। সিংয়ের কথায়, ‘তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, ফলে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
সিআরপিএফের ইনস্পেক্টর জেনারেল অখিলেশ প্রসাদ সিং বলেন, ‘ভোটের কারণে সিআরপিএফের অনেক জওয়ানকেই মণিপুরের স্পর্শকাতর এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। এই জওয়ানরা ভোটের ডিউটিতে গিয়েছেন। দুষ্কৃতীরা সেটারই সুযোগ নিয়েছে। তবে আততায়ীদের শীঘ্রই শনাক্ত করে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর এই হামলা মেনে নেওয়া যায় না। এই অশান্তির পিছনে কারা রয়েছে, কেন তারা হামলা চালাল, পুরোটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এটাকে গোয়েন্দা তথ্যের ব্যর্থতা এখনই বলা যাবে না।’
কুকি-মেইতেই জনজাতির সংঘর্ষে ২০২৩-এর ৩ মে থেকে উত্তপ্ত মণিপুর। বছরভর চলা অশান্তি, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে কয়েকশো মানুষের। আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিভিন্ন গ্রামে ‘ভিলেজ ভলান্টিয়ার’ বা দুই জনজাতির স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর মিলছে। শনিবারের রাতের ঘটনাও তেমনই। আর এই ধরনের ঘটনায় পারস্পরিক দোষারোপও জারি। ঠিক যে ভাবে শনিবার সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনাতেও চলছে দোষারোপ।
কুকি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজ়েশনের দাবি, যে গ্রামে সেনা ক্যাম্পে হামলা হয়েছে, সেই নারানসেইনা গ্রামটি মেইতেই অধ্যুষিত। ফলে, এই হামলার পিছনে মেইতেই জনজাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলেই অভিযোগ কুকিদের। অন্যদিকে মেইতেই জনজাতির দাবি, নারানসেইনা গ্রামের সেনা ক্যাম্পটি পাহাড় থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে। ফলে, পাহাড়ের উপরের ক্যাম্প থেকে কুকি দুষ্কৃতীদের হামলা চালানোর সম্ভাবনাই বেশি।
মেইতেই হেরিটেজ সোসাইটির অভিযোগ, ‘কুকি দুষ্কৃতীরা এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, ওরা স্পর্শকাতর এলাকা পেরিয়ে সেনা ক্যাম্পে হামলা চালাচ্ছে, সিআরপিএফ জওয়ানদের মারছে। কুকিরা ইচ্ছে করে মেইতেইদের বদনাম করতে চাইছে।’ দোষারোপের পালা জারি, তার মধ্যেই রক্ত ঝরে চলেছে মণিপুরে। এই রক্তপাত বন্ধ হবে কবে, উত্তর অজানাই।