জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সালটা ২০২০। ভয়ংকর কোভিডে (COVID-19) বদলে গিয়েছিল এই পৃথিবীটাই। মহামারির হাত থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ বলতে এসেছিল প্রাণদয়ী টিকা। ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে, তাদের তৈরি কোভিড টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অক্সফোর্ড-অস্ট্রাজেনেকা কোভিড ভ্যাকসিন বিশ্বব্যাপী কোভিশিল্ড এবং ভ্যাক্সজেভরিয়া ব্র্যান্ড নামে বিক্রি হয়েছিল। জানা গিয়েছিল, কোভিড টিকার ট্রায়াল নিয়েছিলেন এক মহিলা। ইঞ্জেকশন নেওয়ার পরেই ওই মহিলা স্বেচ্ছাসেবকের অজানা রোগ দেখা গিয়েছিল। যদিও কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সেটা প্রথমে জানায়নি ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম। এরপরে ২০২৩ সালে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেছিলেন জেমি স্কট নামে এক ব্যক্তি। তিনি অভিযোগ করেন যে ২০২১ সালের এপ্রিলে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ও তা জমাট বেঁধে যায়। এর ফলে তাঁর মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়। স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাও কমে গেছে জেমি স্কটের।
এরপর অ্যাস্ট্রজেনেকা ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি ডিএনএ ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধও করে দেওয়া হয়েছিল একসময়। ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম মানতেও চায়নি যে তাদের টিকায় গলদ আছে। কিন্তু এতদিন পরে ফের জানা গিয়েছে, অ্যাস্ট্রজেনেকার তৈরি টিকা ভারতে যার নাম কোভিশিল্ড। সেই টিকার ডোজে বিরল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।গত ফেব্রুয়ারি অ্যাস্ট্রাজেনেতা আদালতে একটি নথি জমা দেয়। সেখানে তারা স্বীকার করেছে যে, তাদের তৈরি কোভিড ভ্যাকসিনের কারণে 'খুব বিরল টিটিএস' এর ঘটনা ঘটতে পারে। টিটিএস-এর পুরো অর্থ হল থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম। এর ফলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এমনকী রক্তে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকাও কমতে দেখা গিয়েছে।
উক্ত নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলে, 'আমরা এটি স্বীকার করছি যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার কারণে খুব বিরল ক্ষেত্রে টিটিএস-এর মতো ঘটনা ঘটাতে পারে।’ অ্যাস্ট্রাজেনেকা নথিতে আরও উল্লেখ করে, ‘এ ছাড়া, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা (বা যেকোনো টিকা) না দিলেও থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমের ঘটনা ঘটতে পারে। কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার কারণ জানার বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের বিবেচনার দাবি রাখে।'ব্রিটেনের হাইকোর্টে এই নিয়ে ৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে ভুক্তভোগীরা মোট ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। অ্যাস্ট্রজেনেকা স্বীকারও করেছে যে টিকার ডোজেই এমন সাইড এফেক্টস হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্রিটিশ-সুইস এই কোম্পানিটির স্বীকারোক্তির ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে বিপুল পরিমাণ জরিমানা গুনতে হতে পারে।