অরূপ বসাক: উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব চলছে প্রায় সর্বত্রই। অন্যান্য জায়গার মতো গত কয়েকদিনের প্রখর রৌদ্র ও অনাবৃষ্টির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উত্তরের জঙ্গলেও। ডুয়ার্সের বিভিন্ন নদী শুকিয়ে গিয়েছে এই গরমের কারণে। চেল, ঘিস, জলঢাকার মতো বড় নদী, আবার কালীখোলা, রোমতির মতো ছোট-ছোট ঝোরাগুলিও শুকিয়ে গিয়েছে। অথচ এই সব নদীর এবং ঝোরার জল কোনও না কোনও ভাবে বিভিন্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জঙ্গলের ভেতরের বিভিন্ন ঝোরাতেও পর্যাপ্ত জল নেই বলে দাবি পরিবেশপ্রেমীদের। যার জেরে বন্যপ্রাণীদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরাও। জঙ্গলে তেষ্টা নিবারণের জন্য মূলত এই ঝোরা বা নদীগুলির উপরই নির্ভর করতে হয় বন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাখিদের। সেই নদী ও ঝোরাগুলি শুকিয়ে যাওয়ায় পশু-পাখিদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে আশঙ্কা বোধ করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষজন।এই চেল, ঘিস, জলঢাকা-সহ ছোট ঝোরাগুলি, তারঘেরা, কাঠামবাড়ি, গরুমারা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কম-বেশি সব ছোট নদী বা ঝোরাগুলি কোথাও শুকিয়ে গিয়েছে, কোথাও শুকিয়ে যেতে বসেছে। এইসব নদী বা ঝোরাগুলি থেকেই নিয়মিত জল পান করে বন্যপ্রাণী বা পাখি। এই সব জঙ্গলে রয়েছে হাতি, লেপার্ড, হরিণ, বাইসন, বুনো শূকর, ময়ূর-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। পরিবেশপ্রেমীরা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। প্রতিদিনই প্রায় পাল্লা দিয়ে উষ্ণতা বেড়ে চলায় এই সময় বুনোদেরও ব্যাপক জলের প্রয়োজন পড়ে। গরম থেকে বাঁচতে নদী বা জলাশয়ে নেমে স্নান করে বন্যপ্রাণীরা। তবে ঝোরাগুলি শুকিয়ে যাওয়ায় ঠিক মতো জল পাচ্ছে না বন্যপ্রাণীরা। যে কারণে তারা লোকালয়ে চলে আসছে বলেও খবর মিলেছে। ফলে, মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাতের আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে।মালবাজারের পরিবেশপ্রেমী স্বরূপ মিত্র বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে জলাশয়গুলি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। গত দু-তিন বছর ধরেই এই ধারা দেখা যাচ্ছে। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বন্যপ্রাণীদের। জঙ্গলে কৃত্রিম জলাশয়ের সংখ্যা আরও বাড়ানো হলে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই সময়ে বিভিন্ন চা-বাগান ছোট ছোট ঝোরাগুলিতে বাঁধ দিয়ে সেই জল চা-বাগানে নিয়ে নেয়। যার ফলে, ঝোরার জল আর জঙ্গলে পৌঁছতে পারে না।
পশুপ্রেমী দিলীপ চৌধুরী বলেন, 'মানুষের মতোই প্রচণ্ড গরমে বন্যপ্রাণীদেরও কষ্ট হয়। তখন তারা নদী বা ঝোরাগুলি খোঁজে মূলত স্নান করে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য। আর জঙ্গলের ঝোরা বা নদীগুলি শুকিয়ে যাওয়া জঙ্গলের পক্ষে মোটেই ভালো নয়। দ্রুত বন দফতরের এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।' বন দফতরের এক অফিসার রাজকুমার পালের মতে, জঙ্গলে যে বড় নদীগুলি আছে সেগুলি বন্যপ্রাণীদের জলের প্রয়োজন মেটানোর পক্ষে উপযুক্ত। এ ছাড়া কৃত্রিম জলাশয়গুলির সংস্কার করা-সহ পুরো বিষয়টিতে নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।