Supreme Court : ৩০ সপ্তাহের গর্ভপাতের সেই রায় ফিরিয়ে নিল শীর্ষ কোর্ট
এই সময় | ৩০ এপ্রিল ২০২৪
নয়াদিল্লি: গত ২২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ একটি ১৪ বছরের মেয়েকে ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করার পরে ৩০ সপ্তাহে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল। সিজেআই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, ‘আমাদের মেয়েকে রক্ষা করা আমাদের প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।’ কিন্তু সোমবার সেই রায়-ই ফিরিয়ে নিল তাঁর বেঞ্চ। কিশোরী যাতে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারে সে জন্য চিকিৎসকদের ও অন্তঃসত্ত্বার মাকে তার প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার কথা বলেছেন সিজেআই।কেন এই রায় রিকল বা ফিরিয়ে নেওয়া হলো? সূত্রের খবর, এ দিন সকালে কোর্ট বসামাত্রই ওই কিশোরীর মা সিজেআই-এর বেঞ্চে আবেদন করেন যে তাঁর মেয়ের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সুপ্রিম কোর্ট যেন গর্ভপাতের নির্দেশ ফিরিয়ে নেয়। এর পরেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের থেকে কিশোরীর বর্তমান অবস্থা ও গর্ভপাতজনিত রিস্ক জানতে চাইলে, কোর্টকে তারা জানায়, ‘মেয়েটির যদি এখন গর্ভপাত করানো হয়, তা হলে শিশুর জন্ম হবে জীবিত অবস্থায় হবে তবে তা প্রিম্যাচিওর ভাবে। ফলে, তাকে সঙ্গে সঙ্গেই নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে দিতে হবে, যা কিশোরী মা ও সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে সমান আশঙ্কাজনক।’
এই মত শোনার পরে নিজের চেম্বারে মেয়েটির মা-বাবার সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে কথা বলেন সিজেআই। সূত্রের খবর, সেখানে মেয়েটির মা তাঁকে জানান, তিনি মনে করছেন যে এতটা অ্যাডভান্সড স্টেজে গর্ভপাত করানো হলে তাঁর মেয়ের জীবনহানির আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই তিনি চান না যে এখন আর গর্ভপাত করানো হোক। মেয়েটির বাবাও একই কথা বলেন প্রধান বিচারপতিকে। তিনি তাঁর সহ-বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে বলেন, ‘এখানে মেয়েটির ইন্টারেস্ট সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। ফলে নির্দেশ ফিরিয়ে নেওয়া হলো।’
সূত্রের খবর, মেয়েটির মা সিজেআই-কে বলেন, ‘আমার মেয়ে যে সন্তান প্রসব করবে তার দেখভাল আমরাই করব। আমার মেয়ের জীবন আমার কাছে সবার আগে।’ সাধারণত এই সব ক্ষেত্রে অর্থাৎ কেউ যদি ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়েন, গর্ভপাত করানো বা একান্তই না করানো গেলে সদ্যোজাতকে দত্তক দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে দিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েটির মা যদি এই কথা বলে থাকেন, তা হলে নিঃসন্দেহে তা ব্যতিক্রমী বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে, এ দিন সুপ্রিম কোর্ট রায় ফেরালেও দু-একটা প্রশ্ন উঠছেই। গত সোমবার অর্থাৎ ২২ তারিখ যে মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে ধর্ষিতা মেয়েটিকে ৩০ সপ্তাহে গর্ভপাতের ‘একস্ট্রা অর্ডিনারি কেস’ হিসেবে বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাবরশনের অনুমতি দিয়েছিল সেখানে বলা ছিল — সন্তানের জন্ম দিলে কিশোরীর মানসিক স্বাস্থ্য ও ফিজ়িক্যাল হেলথ-এ মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর গর্ভপাতের ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বার জীবনহানির খুব একটা আশঙ্কা নেই।
তা হলে এক সপ্তাহের মধ্যে তা বদলে গেল কী করে? সূত্রের খবর, শীর্ষ কোর্টের নির্দেশ মতো যখন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে মেয়েটির অ্যাবরশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তখনই তার মা-বাবা তাতে আপত্তি জানান। মেয়েটির মা চিকিৎসকদের জানান, তিনি যে সময়ে মেয়ের হয়ে গর্ভপাতের জন্য আদালতে গিয়েছিলেন, তখনও তা এতটা অ্যাডভান্সড অবস্থায় আসেনি। কিন্তু নিম্ন আদালত ও বম্বে হাইকোর্ট অনুমতি না দেওয়ায় তাঁকে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয় ও সেখানে শুক্রবার অর্থাৎ ১৯ এপ্রিল কোর্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বিকেল সাড়ে চারটের পরে সিজেআই-এর বেঞ্চ আর্জেন্ট হিয়ারিং করেন ও ২২ তারিখ সব দিক বিবেচনা করে গর্ভপাতের রায় দেয়। কিন্তু তখন ৩০ সপ্তাহও পেরিয়ে গেছে।
অর্থাৎ আর চার থেকে ছ’সপ্তাহের মধ্যেই লাস্ট ট্রাইমেস্টারও পূর্ণ হবে। তাই তিনি ও তাঁর স্বামী চান, তাঁদের নাবালিকা কন্যা সন্তানের জন্ম দিক ও সুস্থ থাকুক। তার পরেই সব পক্ষ ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। চিকিৎসকরাও মেয়েটিকে পরীক্ষা করে দেখেন যে, গর্ভপাত (ফোর্সড ডেলিভারি) করাতে গেলে কিশোরীর মারাত্মক ব্লিডিং হতে পারে যা থেকে তার মৃত্যুও হতে পারে। পাশপাশি, সদ্যোজাতকেও বাঁচানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে কারণ সে প্রিম্যাচিওর ভাবে জন্মাবে। মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটিও চিকিৎসকরা বিবেচনা করেন। তাঁরা মেয়েটির মাকে পরামর্শ দিয়েছেন, কাউন্সেলিং করিয়ে ও সায়াকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে এই ট্রমা থেকে মেয়েকে বের করে আনতে হবে।