এই সময়: ধর্মের নামে ভোট চাওয়া এবং নানা ভাবে অন্য ধর্মকে হেয় করা ভাষণের কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ৬ বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত করার আর্জিতে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন আইনজীবী আনন্দ এস জোন্ধলে। সোমবার সে মামলা খারিজ করে দিলেন বিচারপতি সচিন দত্ত। আদালতের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনে একই আর্জি জানিয়েছেন মামলাকারী। কমিশন কী করবে, আদালত তা নিয়ে নির্দেশ দিতে পারে না। কমিশন স্বাধীন। কমিশনই আইন অনুযায়ী যা করার করবে।বিচারপতি দত্তর বক্তব্য, মামলাকারী মনে করেছেন নির্বাচনী মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট (এমসিসি) লঙ্ঘিত হয়েছে। সেটা বিবেচনা করার এক্তিয়ার নির্বাচন কমিশনের। আদালত কমিশনকে নির্দেশ দেবে না। কমিশনের আইনজীবী সিদ্ধান্ত কুমার জানান, এমসিসি লঙ্ঘন করা নিয়ে প্রতিদিনই কমিশন অভিযোগ পাচ্ছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গত ৯ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে নরেন্দ্র মোদী হিন্দু ও শিখ দেবতা এবং দেবস্থানের উল্লেখে ভোট চেয়েছেন এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ করে এমসিসি ভেঙেছেন বলে আইনজীবী জোন্ধলে মামলা করেছিলেন। মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, বিজেপির জন্যে ভোট চাইতে হিন্দু ও শিখ ধর্মকে ব্যবহার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবং মুসলিম তোষণ নিয়ে বিরোধীদের বিঁধতে গিয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় পরিচয় নিয়ে মন্তব্যের মাধ্যমে অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা হয়েছে।
এর ফলে এমসিসি লঙ্ঘন হয়েছে এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ (এ) ধারা অনুযায়ী (বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা তৈরি) নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের এফআইআর করা উচিত। জোন্ধলে তাঁর সওয়ালে বলেন, তিনি বিষয়টি আগেই কমিশনের নজরে এনেছেন এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। আইন অনুযায়ীই নরেন্দ্র মোদীকে ৬ বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত করা উচিত।
মডেল কোড অফ কন্ডাক্টে স্পষ্ট বলা রয়েছে, কোনও দল বা প্রার্থী এমন কিছু করবেন না যাতে সমাজে বিদ্যমান কোনও ফারাক আরও বাড়ে বা উত্তেজনা তৈরি হয় বা ঘৃণার পরিবেশ তৈরি হয়। এমসিসি অনুযায়ী, কোনও ধর্মস্থানের প্রসঙ্গ টেনে আনা যায় না ভোট-প্রচারে। অথচ সেটাই ঘটে চলেছে। কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাই মামলা করতে হয়েছে।
বস্তুত, ৯ এপ্রিল পিলিভিটের পর গত ২১ এপ্রিল রাজস্থানের বাঁশওয়ারায় বিজেপির নির্বাচনী সভাতেও নরেন্দ্র মোদী সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষমূলক ভাষণ দিয়েছেন বলে বহু নাগরিক, বিভিন্ন সংগঠন নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন। অনলাইনে কয়েক হাজার সই সংগ্রহ হয়েছে ওই ভাষণের প্রতিবাদে। তার পরেও কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপর খবর নেই। এ বার দিল্লি হাইকোর্টও এ সংক্রান্ত মামলা খারিজ করে দিল।