Chandrayaan-3: ভেঙে খান খান হয়ে যেতে পারত চন্দ্রযান-৩, কোন 'ট্রিকসে' বরাত জোরে রক্ষা? তথ্য ফাঁস ISRO-র
এই সময় | ৩০ এপ্রিল ২০২৪
গত বছর ২৩ অগাস্ট এক ইতিহাস তৈরি করে ভারত। সফল ভাবে চাঁদে পৌঁছয় ইসরোর তৈরি চন্দ্রযান-৩। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইসরোর মুকুটে জুড়েছিল সাফল্য়ের সোনালি পালক। তবে চাঁদে চন্দ্রযান-৩-কে সফল ভাবে অবতরণ করানোর কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। ২০১৯ সালে একেবারে শেষ ল্যাপে এসে ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। সেই ভুলের থেকে শিক্ষা নিয়ে চন্দ্রযান-৩ মিশন পরিকল্পনা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার একটুও যাতে ভুল না হয় বা ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য বাড়তি নজর দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযান-৩-কে সফট ল্য়ান্ডিং করাতে বেশ কাঠখড়ও পোড়াতে হয়েছে ইসরোকে। বিশেষ 'ট্রিকস' অনুসরণ না করলে চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য ধরা দিত না। এবার প্রকাশ্যে এল সেই তথ্য। চাঁদে নামা তো দূর মহাকাশেই চিরতরে বিলীন হয়ে যেতে পারত চন্দ্রযান। কোন বিশেষ কৌশল অনুসরণের জন্য সাফল্য ধরা দেয়? কী ভাবে তাকে বাঁচাল ইসরো?নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে নির্দিষ্ট সময়ের থেকে কয়েক সেকেন্ডে বিলম্বে উড়েছিল চন্দ্রযান-৩। আর এই কৌশলই চন্দ্রযানের সাফল্য আনতে অনুঘটকের মতো কাজ করেছে। সম্প্রতি চন্দ্রযান-৩ নিয়ে একটি নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ISRO। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে কেন চন্দ্রযান-৩-এর উৎক্ষেপণ চার সেকেন্ড পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
দেখুন কী জানিয়েছে ইসরো?
কোনও উপগ্রহ বা মহাকাশযান উৎক্ষেপণের আগে, ISRO বিজ্ঞানীরা সংঘর্ষ এড়ানো বিশ্লেষণ (COAL) পরিচালনা করেন। ইসরো জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ ও উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষের একটি টুকরোর মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়াতেই বিশেষ পদক্ষেপ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে একাধিক উপগ্রহর ধ্বংসাবশেষ। এমনই এক ধ্বংসাবশেষের একটি টুকরোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারত চন্দ্রযান ৩। কিন্তু তা হয়নি শুধুমাত্র ইসরোর বিজ্ঞানীদের তৎপরতায়।
কী ভাবে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্ত নিলেন?
২০২৩ সালে ১৪ জুলাই নির্দিষ্ট সময়ে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল চন্দ্রযান-৩। উৎক্ষেপণের পর থেকেই কবে সেটি চাঁদে অবতরণ করবে তা নিয়ে উত্তেজনার পারদ ছিল তুঙ্গে। ইসরোর বিজ্ঞানী থেকে ইঞ্জিনিয়র থেকে আপামর ভারতবাসী ইতিহাস তৈরির অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে দিন গুনছিলেন। মহাকাশযানটি উড়ে যাওয়ার ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে পুরো অভিযানটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করেন। বিজ্ঞানীরা দেখেন, একেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে নির্ধারিত সময়ে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হলে সেটির গতিপথে ভেঙে পড়া উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষ চলে আসতে পারে। উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে চন্দ্রযানের ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আর তা যাতে না হয় তার জন্যই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া চার সেকেন্ডের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইসরোর বিজ্ঞানীরী। বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে দেখেছিলেন চার সেকেন্ডের জন্য যদি উৎক্ষেপণ পিছিয়ে দেওয়া যায় তবে চন্দ্রযান-৩-এর
'পথের কাঁটা' হবে না ধ্বংসাবশেষ। গোটা যাত্রাপথে চন্দ্রযান ৩-এর আর কোনও বাধা আসবে না, এগোতে পারবে মসৃণ ভাবে। এই সিদ্ধান্তের কারণেই দেশ ইতিহাস তৈরি থেকে বঞ্চিত হয়নি। ইসরো জানিয়েছে, শুনে কয়েক সেকেন্ড মনে হলেও এই কয়েক সেকেন্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। চন্দ্রযানের উৎক্ষেপণ কয়েক সেকেন্ড পিছিয়ে না দেওয়া হলে বড়সড় দুর্ঘটনার মুখে পড় ভারতের মহাকাশযান। চাঁদে পৌঁছনোর আগেই ভেঙে খান খান হয়ে যেতে পারত চন্দ্রযান-৩।
চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য
চন্দ্রযান-৩ অভিযান সফল হওয়ায় চাঁদে মহাকাশযান অবতরণ করানো দেশের তালিকায় ভারত চতুর্থ স্থানে নাম লেখায়। এর আগে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন সফল ভাবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণ করাতে সক্ষম হয়েছে। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কৃতিত্ব সর্বপ্রথম ভারতই অর্জন করেছে। ভারতের আগে কোনও দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশ যান অবতরণ করাতে পারেনি।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যে জায়গায় চন্দ্রযান-৩-এর বিক্রম ল্যান্ডার অবতরণ করে সেই পয়েন্টটির নাম 'শিবশক্তি' পয়েন্ট নামে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ঘোষণার সাত মাস পর ওই নামটিকে অনুমোদন দিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন বা আইএইউ। ২৩ অগাস্ট দিনটিতে 'জাতীয় স্পেস দিবস' হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।