অর্ণব আইচ: ডেটিং অ্যাপে লুঠের ফাঁদ। ডেটিংয়ের নাম করে শহরের এক ব্যবসায়ীকে হোটেলে ডাকে দুই সুন্দরী। তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার একটি হোটেলের ঘরে নিয়ে গিয়ে মাদকাচ্ছন্ন করে তাঁর সোনার গয়না হাতিয়ে নিয়ে পালায় ওই দুই যুবতী। প্রায় একশো মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে দুই যুবতীকে গ্রেপ্তার করলেন দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ থানার আধিকারিকরা। ধৃত যুবতীর মধ্যে একজনের নাম অঙ্কিতা গুহ। অন্যজনের নাম মৌমিতা চক্রবর্তী ওরফে মামণি ওরফে পিউ মিত্র।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতারই এক ব্যবসায়ী একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। রেজিস্ট্রেশনের পর তিনি একসঙ্গে দুই মহিলার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান। অ্যাপের মাধ্যমেই দুজনের মোবাইল নম্বর পান তিনি। যদিও তখনও ব্যবসায়ী বুঝতে পারেননি যে, ওই ডেটিং অ্যাপটি ভুয়ো ও একসঙ্গে লুঠপাটের ফাঁদ পেতেছে দুই যুবতী। বালিগঞ্জ থানা এলাকার শরৎ বোস রোডের একটি হোটেলে ব্যবসায়ী তাদের আসতে বলেন। দুপুরে তারা হোটেলে আসে। একই রুমে তিনজন সময় কাটাতে থাকেন। এর মধ্যেই ব্যবসায়ীর পানীয়র মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় অভিযুক্ত দুই যুবতী। তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই অচেতন হয়ে পড়েন। সেই সুযোগে তাঁর সোনার চেন, বালা লুঠ করে অভিযুক্তরা। রুম থেকে বের হওয়ার আগে তাঁর মোবাইল থেকে তাদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ও তাদের সঙ্গে হওয়া যাবতীয় হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট মুছেও ফেলে দুই যুবতী। দু’জন চলে যাওয়ার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর ব্যবসায়ীর চেতনা ফেরে। তাঁর ডাকে হোটেলের কর্মীরা চলে আসেন। তাঁরাই বালিগঞ্জ থানায় খবর দেন।
হাসপাতালে চিকিৎসার পর তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। বালিগঞ্জ থানার ওসি বোধিসত্ত্ব প্রামাণিকের নেতৃত্বে একটি টিম তদন্ত শুরু করে। টিমকে সাহায্য করে সাউথ ইস্ট ডিভিশনের সাইবার সেল। তদন্তের শুরুতেই পুলিশ বুঝতে পারে যে, ডেটিং অ্যাপটি ভুয়ো। যেহেতু হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর মুছে ফেলা হয়, তাই ডেটিং অ্যাপটির সূত্র ধরেই চলে তদন্ত। ওই ডেটিং অ্যাপের ‘হিস্ট্রি’ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ হওয়া প্রায় একশো মোবাইল নম্বর পরীক্ষা করতে থাকেন পুলিশ আধিকারিকরা। শেষ পর্যন্ত কয়েকটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরেই দুই যুবতীকে শনাক্ত করা হয়। জানা যায়, নিজেদের নাম ভাঁড়িয়ে তারা বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মোবাইলের সূত্র ধরেই দক্ষিণ কলকাতা ও নদিয়া জেলায় তল্লাশি চালিয়ে তাদের সন্ধান মেলে। গ্রেপ্তারির পর হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ থেকেও তাদের শনাক্তকরণ করা হয়। এর আগে ভুয়ো ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে তারা কতজনের কাছ থেকে লুঠপাট চালিয়েছে, কী ধরনের মাদক তারা ব্যবহার করেছিল, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। দুই যুবতীকে জেরা করে চক্রের বাকিদের সন্ধানেও তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।