• টাকার মায়া ত্যাগ করেই তাপে ভরসা অ্যাপ ক্যাব, স্বস্তির আশায় ভিড় মেট্রোতেও
    এই সময় | ০১ মে ২০২৪
  • এই সময়: তাপের দাপটে কর্মস্থল থেকে শুরু করে অন্য জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে পৌঁছনোর পথটাই কার্যত বদলে ফেলেছেন মহানগরবাসীর বড় অংশ। সেখানে এসি-র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় চেপে ডেস্টিনেশনের যতটা কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব, হয় সে পথ ধরছেন যাত্রীরা। নয়তো গাঁটের কড়ি অনেকটাই বেশি খসিয়ে বুক করছেন অ্যাপ ক্যাব।মেট্রো এবং অ্যাপ ক্যাবে প্যাসেঞ্জার যে অনেকটা বেড়েছে, তা মেনেও নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল। দুটো উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। যেমন, ডালহৌসি চত্বরে একটি ট্রাভেল এজেন্ট সংস্থার কর্মী অভিষেক বসু। থাকেন বালিগঞ্জ চত্বরে। সেখান থেকে বাসে করে অফিসে গেলে আর ব্রেক জার্নি করতে হয় না। তবু তীব্র তাপের হাত থেকে বাঁচতে বেছে নিচ্ছেন মেট্রো।

    তাঁর কথায়, 'খরচ কিছুটা বেশি হয় ঠিকই, তবে হোক। রাস্তার ৮০ শতাংশ তো এসিতে যেতে পারব, এটাই যথেষ্ট।' রুবি মোড় থেকে বাসে টেকনোপলিস যান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী মণিকা দত্ত। বাস মিললেও প্রবল গরমে তা যেন 'চলন্ত কনসেনট্রেশন ক্যাম্প' হয়ে গিয়েছে। তাই প্রত্যাশিত ভাড়ার তুলনায় কিছুটা বেশি দিয়েই অনেক সময়ে অ্যাপ ক্যাব বুক করেন মণিকা। বলেন, 'গরমে মনে হয় যেন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাব। ক'টা টাকার পরোয়া না করে শেষে অ্যাপ ক্যাবকেই বেছে নিলাম।'

    এমনিতেই বেলা একটু বাড়লেই কমছে বাস। যে ক'টা রাস্তায় বেরোচ্ছে, সেগুলোও স্ট্যান্ড ছাড়ার পর সে ভাবে আর যাত্রী পাচ্ছে না। বাসের জানলা দিয়ে যে হাওয়া অবাধে ঢুকছে, তা যেন গলানো লোহার মতো ছেঁকা দিচ্ছে যাত্রীদের। এই পরিস্থিতিতে বাঁচার উপায় হয় মেট্রোর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিষেবা, না হলে গাঁটের কড়ি বেশিই খসিয়ে অ্যাপ ক্যাব বুক করা।

    গত ক'দিনে কলকাতায় যে অ্যাপ ক্যাব বুক করার হার অনেকটাই বেড়েছে, তা মানছেন 'অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড'-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, 'বিশেষ করে দুপুরের দিকে অ্যাপ ক্যাবের বুকিং অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সাধারণত এসি না চালানো নিয়ে অ্যাপ ক্যাবের বিরুদ্ধে যাত্রীদের বড় অংশের অভিযোগ থাকে। কিন্তু এই তীব্র তাপে এসি বন্ধ রাখার কথা ভাবতে পারছেন না ড্রাইভাররাও। ক্যাবের চাহিদা তুঙ্গে থাকার এটা অন্যতম কারণ।'

    অ্যাপ ক্যাব চালক সুকমল মণ্ডল বলেন, 'এত বেশি বুকিং আসছে যে সামাল দিতে পারছি না। একজন প্যাসেঞ্জারকে নামানোর আগেই অন্য বুকিং ঢুকছে। খাওয়ার সময়টুকু পাচ্ছি না।' আবার, বাইরে যখন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মেট্রো স্টেশনে তখন তাপমাত্রা ২৩-এর বেশি নয়। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের বড় অংশ মেট্রোর শরণও নিচ্ছেন।

    এমনিতেই সংস্থার দাবি, দেশের মধ্যে সবচেয়ে সস্তার গণ-পরিবহণ কলকাতা মেট্রো। মাত্র পাঁচ টাকায় এসি-তে দু'কিলোমিটার যাওয়ার বন্দোবস্ত অন্য কোনও গণপরিবহণে নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সুবিধে পুরোমাত্রায় নিচ্ছেন যাত্রীরা। কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, 'ভোটের জন্য বাসের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। তর উপর এই তীব্র গরম। দু'য়ের কারণে আমাদের যাত্রী অনেক বেড়েছে।'

    তিনি জানান, বিভিন্ন মেট্রো স্টেশন মিলিয়ে ১১৬টি ওয়াটার পিউরিফায়ার বসানো হয়েছে। শুধু মেট্রো রেলের ভিতরের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নয়, বাইরের চেয়ে অনেক ঠান্ডা থাকা স্টেশনের সিঁড়িগুলোও এখন পথচারীদের অন্যতম প্রধান আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
  • Link to this news (এই সময়)