এই সময়: সুপ্রিম কোর্টে সোমবার প্রথম দিনের সওয়াল-জবাবেই স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) জানিয়েছে, আদালত চাইলে যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথক তালিকা জমা দিতে তারা প্রস্তুত। তারা কী ভাবে এ কাজ করবে, তা নিয়ে সে দিনই প্রশ্ন ওঠে শীর্ষ কোর্টে। কারণ, প্রার্থীদের ওএমআর শিট-ই তো নেই। তা হলে যোগ্য-অযোগ্য কী ভাবে আলাদা করা হবে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এসএসসি-র দাবি ঘিরে এই প্রশ্ন কার্যত সকলেরই।
এই পরিস্থিতিতে কী বলছে কমিশন বা রাজ্য সরকার?
বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে এসএসসি-র একমাত্র ভরসা হতে পারে গাজিয়াবাদ থেকে সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ২০১৬-র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মেনে নেওয়া পরীক্ষার ওএমআর। এই শিটগুলিই এসএসসি তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছিল। এবং সিবিআইয়ের উদ্ধার করা এই ওএমআর শিটগুলিকে স্বীকৃতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চও।যদিও স্বচ্ছতার অভাবে পুরো প্যানেল বাতিল করেছে এই ডিভিশন বেঞ্চই। কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার অবশ্য এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে নারাজ। কারা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, সেই তালিকা আগেই হলফনামা দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়েছিল এসএসসি। কিন্তু বাকিরা যে যোগ্য, সেই সার্টিফিকেট কমিশন দেয়নি। এ নিয়ে এসএসসি-র ব্যাখ্যা হলো, আদালতই চায়নি সেই তালিকা।
তা হলে, এখন কী ভাবে যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করে পৃথক লিস্ট তৈরি করা হবে? স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য, বিষয়টি বিচারাধীন। এসএসসি এবং রাজ্যের তরফে আইনজীবীরাই শীর্ষ আদালতে যা জানানোর জানাবেন। আদালত যে ভাবে এগোনোর নির্দেশ দেবে, সে ভাবেই পদক্ষেপ করা হবে। তবে প্রত্যেক যোগ্য প্রার্থীর ওএমআর এবং অন্যান্য মাপকাঠি খতিয়ে দেখতে প্রস্তুত কমিশন। তাই তারা পৃথকীকরণের কথা বলেছে। এবং এখানেই সিবিআইয়ের বাজেয়াপ্ত করা ওএমআর শিটের প্রসঙ্গ আসছে।
যেগুলি এসএসসি-র ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক স্কোরের (মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক ও বিভিন্ন ডিগ্রিতে প্রাপ্ত নম্বর এবং ইন্টারভিউয়ের মার্কস মিলিয়ে) নিরিখে যোগ্যদের তালিকা দিতে তারা প্রস্তুত বলে কমিশনের একটি সূত্রের দাবি। এ ভাবে তারা জানাতে চাইছে, আপাতদৃষ্টিতে এই তালিকাভুক্তরাই যোগ্য। যত দ্রুত সম্ভব তালিকাটি তৈরি করে ফেলতে চাইছে এসএসসি। সর্বোচ্চ আদালতে আগামী শুনানিতেই এই যোগ্য-অযোগ্য তালিকা দিতে চায় কমিশন।
গত সপ্তাহে ২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিলের পরে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মুখে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি। এবং এ ক্ষেত্রে মূল অভিযোগ এসএসসি-র বিরুদ্ধে। যদিও কমিশন গত সপ্তাহেই সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছে, তাদের কাছে যোগ্যদের তালিকা চাওয়াই হয়নি। তারা অযোগ্যদের লিস্ট দিয়েছিল। যা থেকে ধরে নেওয়া যায়, বাকিরা যোগ্য প্রার্থী।
এ ছাড়া, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে আগেই নবম-দশমের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৩০ জনের সুপারিশপত্র প্রত্যাহার করেছিল এসএসসি। সেই মতো মধ্যশিক্ষা পর্ষদও এঁদের নিয়োগপত্র প্রত্যাহার করে। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ অবশ্য এতে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। এই শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতনও ফের চালু হয়েছিল। এখন প্রায় ২৬ হাজারের চাকরি বাতিলের প্রেক্ষিতে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে।
সেখানেই যোগ্যদের তালিকা দেওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে। এ সবের মধ্যেই মঙ্গলবার এই ‘চাকরিহারা’ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের স্বস্তি দিয়ে এপ্রিলের বেতন ঢুকেছে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এমনটা যে হবে, সে ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল রাজ্য সরকার। পাশাপাশি এ দিন বেশ ক’জন শিক্ষক ভোটের ডিউটির প্রশিক্ষণের চিঠিও পেয়েছেন।