এই সময়: বাংলায় বিধানসভা ভোট-পরবর্তী হিংসায় নিহত কর্মীরা বিচার পাবেন বলে মঙ্গলবার বর্ধমানের কাটোয়ার নির্বাচনী জনসভা থেকে আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর দাবি, প্রয়োজনে পাতাল থেকে টেনে বের করা হবে দুষ্কৃতীদের। বিজেপির সরকার তৈরি হলেই এই অভিযান শুরু হবে বলে শাহ এদিনের সভা থেকে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে কেন্দ্রে না রাজ্য—কোথায় সরকার তৈরির পর এই তাঁরা পদক্ষেপ করার কথা ভাবছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি শাহ। তৃণমূলের দাবি, ভোটের পর বাংলা জুড়ে সন্ত্রাস চালিয়েছিল বিজেপি-ই।
এদিন কাটোয়ায় শাহ সন্ত্রাস ইস্যুতে তৃণমূলকে বিঁধতে গিয়ে বলেন, ‘২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বালেশ্বর রায়, সন্দীপ ঘোষ, রবিন পাল, সুখদেব প্রামাণিক, বলরাম মাঝির মতো বহু বিজেপি কর্মীকে দিদির গুন্ডারা মেরে দিয়েছে। আজ আমি বলে যাচ্ছি, যারা এই হত্যা করেছে, আমাদের সরকার হওয়ার পর পাতাল থেকে খুঁজে বের করে তাদের জেলে পাঠানো হবে।’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘কোনও সন্ত্রাস অথবা রিগিংয়ের অভিযোগ ২০২১-এ ছিল না। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে আট দফায় ভোট হয়েছিল।’ তাঁর দাবি, বাংলায় সন্ত্রাস আবহ তৈরি হয়েছিল বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পর। এবং সেটা বিজেপির প্ররোচনাতেই হয়েছিল বলে কুণালের ব্যখ্যা।
তিনি বলেন, ‘বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর বিজেপি গন্ডগোল শুরু করেছিল। অমিত শাহকে বলব, এ ধরনের কথা বলবেন না। ইতিমধ্যেই ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের তদন্ত নেমে সিবিআই সাধারণ তৃণমূল কর্মীদের হেনস্থা শুরু করেছে। এজেন্সি দিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছেন আপনারা। আমাদের বহু কর্মী এখনও বাড়ি ছাড়া। এরপর আর নতুন করে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।’
বঙ্গ-বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ভোটের আগে তাঁদের দলের নিচুতলার কর্মীদের মনোবল ভাঙতে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল সরকার। সুকান্ত মজুমদারদের অভিযোগ, নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বিরোধী রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল। বিষয়টি তাঁরা জানিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকেও।
গেরুয়া শিবিরের একাংশের মতে, সম্ভবত সে কারণেই এদিন কাটোয়ার সভা থেকে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে শাহ বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে গাঁজা, চরসের কেস দেওয়া হচ্ছে। কোর্টে গিয়ে তাঁরা অবশ্য মুক্তি পাচ্ছেন। নির্দোষ, গরিব বিজেপি কর্মীদের উপর মাদকের কেস দিচ্ছে বাংলার তৃণমূল সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত।’ তাঁর ব্যাখ্যা, বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে বলেই তৃণমূল এ সব করছে।
শাহের কথায়, ‘ভয় পেয়েই এ রাজ্যে আমাদের নেতাদের হোটেল, গাড়ি বুক করতে দিচ্ছে না। হোটেল মালিকদের ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। আমাদের কেউ কোনও হোটেল বুক করলে মমতার গুন্ডারা হোটেল ফাঁকা করিয়ে দিচ্ছে। বিজেপির কর্মীরা ভয় পান না। যা সন্ত্রাস করার আছে করে নাও।’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে মনে করছে তৃণমূল। কুণালের কথায়, ‘অমিত শাহরা তো বাংলায় এলে নিউটাউনের বিলাসবহুল হোটলে থাকেন। সেখানে ঘর পেতে কখনও কোনও সমস্যা হয়েছে বলে তো শুনিনি। কেন এ সব অসার কথা বলছেন উনি?’
রাজনৈতিক মহলের মতে, শাহরা চাইছেন ভোটের দিন বুথ বাঁচানোর লড়াইয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপান দলের নিচুতলার কর্মীরা। তাই শাহ এদিন পাতাল ফুঁড়ে দলীয় কর্মীদের হত্যাকারীদের খুঁজে বার করার বার্তা দিয়ে আদপে সামগ্রিকভাবে সর্বস্তরের বিজেপি কর্মীর জোশ বাড়াতে চেয়েছেন।