এই সময়: তৃণমূলের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগকে সম্বল করেই বাংলায় ভোট-প্রচারে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। মঙ্গলবারও পূর্ব বর্ধমানের নির্বাচনী সভা থেকে এ বিষয়ে সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। কী ভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির খাতে দিল্লি থেকে পাঠানো টাকা নয়ছয় হয়েছে, তার বর্ণনা এদিন ফের দিয়েছেন শাহ। জবাব দিতে দেরি করেননি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তাঁর সাফ কথা, ‘অভিযোগের প্রমাণ চাই, প্রমাণ দাও।’ মমতার দাবি, সব মিথ্যা কথা বলছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর জন্য শাহকে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে জনগণের কাছে নাকে খত দেওয়ার পরামর্শও শাহকে দিয়েছেন মমতা।
এদিন পূর্ব বর্ধমানের নির্বাচনী সভা থেকে শাহ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী দশ লক্ষ কোটি টাকা বাংলার উন্নয়নের জন্য দিদিকে দিয়েছেন। আপনাদের গ্রামে কিছু এসেছে? আসেনি তো? কোথায় গেল, জানেন তো? তৃণমূলের গুন্ডারা সব খেয়ে নিয়েছে।’
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তনের অভিযোগও আরও একবার তুলেছেন শাহ। বিজেপির দাবি, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খাতে দিল্লি থেকে যে টাকা পাঠানো হয়েছে, তার কোনও হিসেব কেন্দ্রকে দেয়নি রাজ্য সরকার। বরাদ্দ ব্যবহারের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেটও দিল্লিতে পাঠানো হয়নি।
মালদার সভা থেকে মমতা পাল্টা বলেন, ‘অমিত শাহ বলছেন, রাজ্য টাকার হিসেব দেয়নি। ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) দেয়নি। পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমাদের সরকার আসার পর থেকে একটিও ইউসি পড়ে নেই। হয় আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে, না হয় জনগণের কাছে নাকে খত দিয়ে বলতে হবে, যা বলেছি মিথ্যা বলেছি। আর কোনও দিন বলব না।’
যদিও বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কোনও কথারই আর কোনও গুরুত্ব নেই জনমানসে। তৃণমূল নেতারাই এখন আর ওঁর কথা মন দিয়ে শোনেন না। এই তো দেখলাম, উনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছেন, আর ওঁর দলের নেতারা পিছনে বসে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করছেন।’
অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক প্রকল্প কার্যকর করার জন্য ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেয়নি বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন মমতা। তৃণমূলনেত্রীর কথায়, ‘আপনাদের ক্যাগ রিপোর্টে কী বলা আছে? ৫২ হাজার কোটি টাকার ইউসি দেয়নি। আগে আয়নায় নিজের দিকে তাকান, তারপর অন্যদের বলবেন। তৃণমূলের মতো পার্টি সারা পৃথিবীতে দুর্লভ। কেউ দুষ্টুমি করলে তার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশন নিতে পিছপা হই না।’
মমতার সংযোজন, ‘তৃণমূল চুরি করল কোথায়, প্রমাণ দেখাও। আমি বারবার বলছি, ক্ষমতা থাকলে মোদীবাবু একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। ৩৫০টা কেন্দ্রীয় টিম বাংলায় এসেছে। কিচ্ছু ধরতে পারনি। কিন্তু একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়ির টাকা বন্ধ। রাস্তার টাকা বন্ধ করেছে। এখন দুয়ারে রেশনকে বেআইনি বলছে!’
এই নির্বাচনী প্রচার পর্বে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল ঘোষণা করেছে, আবাস যোজনায় যাঁরা টাকা পাননি তাঁদের টাকা রাজ্য সরকার আগামী ডিসেম্বর মাসের আগে দিতে শুরু করবে। রাজ্য সরকারের তরফে যে ১১ লক্ষ বাড়ি প্রাপকের তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে, সেই তালিকা থেকেই মানুষকে টাকা দেওয়া হবে বলে এ দিন মথুরাপুরের তৃণমূলের নির্বাচনী সভায় ফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্য, ‘একশো দিনের কাজের টাকা রাজ্য সরকার দিয়েছে। মথুরাপুরে বাপি হালদার জয়ী হলে ওঁর হাত দিয়েই যাঁরা বাড়ির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরা ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে যাবেন।’