এই সময়: প্লাস্টিক-মুক্ত কলকাতা! এমন দিনও কি সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত নেই। তবে, কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যকে অনুরোধ করেছে প্লাস্টিকের বোতল এবং প্যাকেট নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ করা হোক। যদি সম্ভব হয়, তা হলে পুরো শহরে প্লাস্টিকের বোতল এবং ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা করুক রাজ্য। ময়দান এলাকায় দূষণ সংক্রান্ত একটি মামলায় সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ।ময়দান এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে ক্লাবগুলিকে কাজে লাগানোর জন্যও কলকাতা পুরসভাকে পরামর্শ দিয়েছে বেঞ্চ। তা ছাড়া ওই এলাকায় যাতে যানবাহন বেশিক্ষণ দাঁড়াতে না পারে, তার জন্য রাজ্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট। ময়দানের দূষণ সংক্রান্ত মামলাটি অনেক পুরোনো। সেই মামলার শুনানি ছিল সোমবার। অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে বেঞ্চ জানায়, রাজ্য হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, ধর্মতলা চত্বরে মাল্টি মোডাল বাস টার্মিনাস করতে চায় তারা। সেটা যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আশপাশের এলাকায় বাসস্ট্যান্ড তৈরির কাজ চলছে।
তার মধ্যে সাঁতরাগাছির বাসস্ট্যান্ড অনেকাংশেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেখানে বাসস্ট্যান্ড দ্রুত সরানো হবে। মাল্টি মোডাল বাস টার্মিনাসের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা রাইটস। ৩১মে-র মধ্যে সেই রিপোর্ট তারা জমা দেবে। রাজ্য আরও জানিয়েছে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে দূষণ থেকে বাঁচাতে ওই চত্বরে যানবাহন যাতে না দাঁড়ায়, তার জন্য ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ডিজিটাল এবং ইলেকট্রনিক করা হচ্ছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, শুনানির সময়ে বেঞ্চ লক্ষ্য করেছে, ভয়ানক প্লাস্টিক দূষণের কবলে পড়েছে ময়দান এলাকা। এই অবস্থায় কোর্ট কলকাতা পুরসভাকে নজরদারি এবং সাফাইয়ের কাজ আরও বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। এই কাজে স্থানীয় ক্লাবগুলিকে কাজে লাগানোর কথাও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি কোর্ট রাজ্যের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, প্লাস্টিকের বোতল এবং ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হোক।
যদি সম্ভব হয় পুরো কলকাতায় প্লাস্টিক বোতল এবং ব্যাগ নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে বিকল্প খোঁজার কাজও করুক রাজ্য। ভিক্টোরিয়ার চার দিকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই কাজ চলছে—এমনটাই জানিয়েছে কলকাতা পুরসভা। তারা এই কাজ শেষ করতে আরও কিছুটা সময় চেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভিক্টোরিয়া-সহ মধ্য কলকাতার অন্যান্য স্মৃতিসৌধকে বাঁচাতে জন্য ধর্মতলা থেকে বাসস্ট্যান্ড সরানোর দাবি তুলেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। সেই দাবির প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। ১২ বছর আগেই হাইকোর্ট ধর্মতলা থেকে বাস টার্মিনাস সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল। রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে, শীর্ষ কোট হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে। তবে সেই নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় ফের হাইকোর্টে মামলা করেন সুভাষ। সেই মামলাতেই কলকাতা হাইকোর্ট ময়দান চত্বরে যানবাহন যাতে না দাঁড়ায়, সেই নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ধর্মতলা থেকে বাস টার্মিনাস সরানোর নির্দেশও দেওয়া হয়।