একই রুমে দুই তরুণীর সঙ্গে ব্যবসায়ী! বন্ধুত্বের নামে সর্বস্ব লুট
এই সময় | ০১ মে ২০২৪
এই সময়: ভুবনভোলানো হাসি, সেই সঙ্গে লাস্যময়ী চেহারা-- ডেটিং অ্যাপে দুই তরুণীর এমন ছবি দেখে বন্ধুত্ব পাতানোর চেষ্টা করেন কলকাতার এক ব্যবসায়ী। ওই অ্যাপের মাধ্যমে ফোন নম্বর পেয়ে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। শুরু হয় হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট। এর পর, তাঁদের সঙ্গে আলাপের আগ্রহ বাড়তে থাকে ওই ব্যবসায়ীর। একটি হোটেলে দু’জনকে এক সঙ্গে আসার আমন্ত্রণও জানিয়ে বসেন তিনি। সেটাই শেষপর্যন্ত কাল হলো ওই ব্যবসায়ীর।হোটেলে পৌঁছে আলাপচারিতার ফাঁকে কখন যে ওই তরুণীরা খাবার-ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে ব্যবসায়ীর টাকা-পয়সা থেকে শুরু করে সোনার চেন-বালা লুঠ করে চম্পট দিয়েছিলেন, তা টের পাননি তিনি। হুঁশ ফেরার পরে হাসপাতাল ঘুরে পুলিশে অভিযোগ জানান ওই ব্যবসায়ী। তদন্তে নেমে পুলিশ প্রতারক দুই তরুণীকে গ্রেপ্তারও করেছে। তবে, তাঁরা আসল অপরাধী নন।
এদের সামনে রেখে ভুয়ো ডেটিং অ্যাপ যাঁরা চালাচ্ছেন, সেই চাঁইদের খোঁজ শুরু হয়েছে। দেশে ডেটিং অ্যাপের জালিয়াতির ঘটনা নতুন কিছু নয়। এখানে মূলত টার্গেট হন পয়সাওয়ালা ব্যবসায়ী এবং সমাজের প্রতিষ্ঠিতরা। কিন্তু, এ শহরেও এমন বিপদ যে ঘাপটি মেরে রয়েছে তা দুই তরুণীর কীর্তিকলাপের ঘটনায় সামনে এসেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ থানা এলাকার শরৎ বোস রোডের একটি হোটেলে দুই তরুণী অঙ্কিতা ও মৌমিতাকে ডেকে ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর জন্য ওই ডেটিং অ্যাপে টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় তাঁকে। এর পর অ্যাপের মাধ্যমে দু’জনের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয় ব্যবসায়ীকে। শুরু হয় মায়াজাল ছড়ানোর প্রক্রিয়া।
কথার প্যাঁচে ফেলে ব্যবসায়ীকে কাত করেন তরুণীরা। ওই ব্যবসায়ী তাঁদের শরৎ বোস রোডের হোটেলে ডাকেন। দুপুরে দুজন হোটেলে আসেন। তিনজন একই রুমে সময় কাটাতে শুরু করেন। অভিযোগ, সে সময়ে ব্যবসায়ীর পানীয়ের মধ্যে মাদকদ্রব্য জাতীয় কিছু মিশিয়ে অজ্ঞান করে দেওয়া হয়। এরপর ব্যবসায়ীর সোনার চেন, হাতের বালা খুলে নেন দুই তরুণী।
এটা যে পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছিল-- পুলিশি তদন্তে তা উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, হোটেল ছাড়ার আগে ওই ব্যবসায়ীর মোবাইল থেকে তাঁদের ব্যক্তিগত নম্বর এবং হোয়টসঅ্যাপ চ্যাটও ডিলিট করে দেন দুই তরুণী। যাতে পুলিশ তাঁদের নাগাল না পান। পুলিশ সূত্রে খবর, হোটেলের রুমে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন ব্যবসায়ী। ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় হোটেলের কর্মীদের সন্দেহ হয়। তাঁরাই বালিগঞ্জ থানায় খবর দেন।
এর পর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্তে নামে সাউথ ইস্ট ডিভিশনের সাইবার সেল। প্রথমেই তদন্তকারীরা বুঝে যান, ওই অ্যাপটি ভুয়ো। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। অ্যাপের ‘হিস্ট্রি’ থেকে প্রায় একশোটি মোবাইল নম্বর খতিয়ে দেখে দুই তরুণীকে চিহ্নিত করা হয়। মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতা এবং নদিয়া থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।