Columbia University : হুঁশিয়ারির মুখেও অনড় কলম্বিয়া
এই সময় | ০১ মে ২০২৪
এই সময়: সাপপেনশনের হুমকি সত্ত্বেও বিক্ষোভে অনড় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে দু'সপ্তাহ ধরে ক্যাম্পাসে ক্যাম্প খাটিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য পড়ুয়া। মিছিলে নেমেছেন প্রফেসররাও। লাটে উঠেছে ক্লাস। নামমাত্র চলছে অনলাইনে। কিন্তু পড়ুয়ারা যে সবাই মানবতার স্বার্থে গলা ফাটাচ্ছেন! প্রায় ৫০০ জনকে আটক করার পরেও স্লোগানে-মিছিলে কান পাতা দায়। ক্যাম্পাসের 'হাল ফেরাতে' সোমবারই তাই আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।দুপুর ২টোর ডেডলাইন দিয়ে বলা হয়েছিল, এর মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে না সরলে বিক্ষোভে নামা পড়ুয়াদের সাসপেন্ড করে পরীক্ষা বাতিল করতেও পিছপা হবে না ইউনিভার্সিটি। কিন্তু কোথায় কী! সূর্য ডুবতেই দেখা গেল ডজনখানেক প্রতিবাদী পড়ুয়া দখল করে বসলেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মূল অ্যাকাডেমিক ভবন। মঙ্গলবার সকালে প্রতিবাদের সুর চড়িয়ে ওই ভবনের ঐতিহ্যশালী হ্যামিল্টন হলে ঢুকে পড়ে ভিতর থেকে তালা লাগালেন পড়ুয়ারা। বাইরে আরও কয়েক জন পড়ুয়ার হিউম্যান ব্যারিকেড।
ব্যালকনি থেকে ঝুলল ইজ়রায়েলি হামলায় নিহত শিশু হিন্দ রজ়াবের নামে ব্যানার। নিজেদের মতো করে প্রতিবাদীরা রাতারাতি বদলে দিলেন হ্যামিল্টনের হলের নামটাই- হিন্দস হল। ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে উঠল স্লোগান- 'ফ্রম রিভার টু সি, প্যালেস্তাইন উইল বি ফ্রি।' তিন দফা দাবিতে অনড় প্রতিবাদী পড়ুয়ারা। মপ্রথমত, ইজ়রায়েল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় আর্থিক বিনিয়োগ তুলে নিচে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং তৃতীয়ত, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সব ধরনের শাস্তি থেকে মুক্তি দিতে হবে।
গাজ়ার পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ক্যাম্পাস-বিক্ষোভের এপিসেন্টার এখন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৭ এপ্রিল বিক্ষোভের শুরুটা করেছিলেন ৭০ জন পড়ুয়া। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়তে থাকে সংখ্যাটা। বিক্ষোভ-দমনে নেমে গত সপ্তাহেই শ'খানেক পড়ুয়াকে আটক করে পুলিশ। তাতেই যেন আগুনে ঘি পড়ে। আগুন ছড়াতে থাকে দিকে-দিকে। প্রশাসনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে এই মুহূর্তে ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফর্নিয়া, অস্টিনের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, বোস্টনের এমারসন ইউনিভার্সিটি, ইয়েল ইউনিভার্সিটির মতো আমেরিকার ২৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইজ়রায়েল-বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। লাগাতার চলছে ধরপাকড়ও।
গ্রেপ্তারির সংখ্যাটা দেশ জুড়ে অন্তত হাজার বলে দাবি একাধিক সূত্রের। এ দিকে নিউ ইয়র্কের আপার ম্যানহাটন এলাকার অভিজাত আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয় হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পদত্যাগ করতে হবে। ইজ়রায়েলি প্রেসিডেন্ট স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকার ক্যাম্পাস-বিক্ষোভ মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর কথায়, 'প্রতিবাদের নামে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তা ভয়ঙ্কর। গত শতাব্দীর তিনের দশকে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল।' তবে এরই মধ্যে যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে ফ্রান্সের বিভিন্ন ক্যাম্পাসেও।
বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলতে থাকলেও গাজ়া সিটির মতো রাফাতেও হামলা চালাতে মরিয়া ইজ়রায়েলি প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সূত্রের খবর, ছ'মাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা গাজ়া অভিযানে যুদ্ধাপরাধ এবং ধারাবাহিক মানবতা-বিরোধী পদক্ষেপের কারণে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালত। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পথে ইন্টারন্যাশনাল কোর্টকে ঠেকাতে মরিয়া ইজ়রায়েল। সূত্রের খবর, আমেরিকার সঙ্গে এই মর্মেই যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে তেল আভিভ। কিন্তু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেই বা কী? এমন পরোয়ানা তো ইউক্রেন যুদ্ধে অনড় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধেও জারি করা হয়েছিল- প্রশ্ন তুলছেন ওয়াকিবহাল মহলের একটা বড় অংশ।