West Bengal Voter Turn Out : দেশের উলটো পথে হেঁটে ২ দফাতেই ভোটের হারে এগিয়ে মহিলারা, খেল দেখাল মমতার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার?
এই সময় | ০১ মে ২০২৪
প্রথম দফা শেষ হওয়ার ১১ দিন আর দ্বিতীয় দফার চারদিনের মাথায় সম্পূর্ণ ভোটের হার প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন। দুই দফাতেই ৬৬ শতাংশের আশপাশে ভোট পড়েছে দেশে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, বড় বড় রাজ্যগুলিতে যেখানে বুথ বিমুখ জনতা, সেখানে ভোটের হারে অনেকটাই এগিয়ে বাংলা।মহিলা, পুরুষ এবং ততীয় লিঙ্গের ভোটারদের সম্পূর্ণ হারও প্রকাশ করা হয়েছে কমিশনের ওয়েবসাইটে। সেখানেও দুই দফায় বাংলা লেটার মার্কস এনেছে। অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় বাংলায় ভোট পড়েছে বেশি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাংলায় পুরুষ ভোটারের চেয়ে মহিলার সংখ্যা বেশি। তবে কি রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পগুলিই কামাল দেখাচ্ছে এবারের লোকসভায়?
নিঃসন্দেহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প লোকসভা ভোটের অন্যতম অস্ত্র। গোটা দেশে সমাদৃত বাংলার সরকারের এই প্রকল্পে সম্প্রতি মহিলাদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০০ থেকে বাড়িয়ে হাজার টাকা করা হয়েছে। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে মমতা, অভিষেক সহ দলের সমস্ত নেতা এবং প্রার্থীদের গলাতেও শোনা গিয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের কথা। এমনকী, চির প্রতিদ্বন্দ্বী CPIM-এর প্রার্থীও ভোটের প্রচারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রসঙ্গ টেনেছেন। যাদবপুরের CPIM প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'CPIM কোনওদিন আবার ফিরলে এই প্রকল্পগুলি ডবল ডবল চলবে। আজ যিনি হাজার টাকা পাচ্ছেন, তিনি আগামী দিনে দু’হাজার টাকা পাবেন। কোনও প্রকল্প বাদ যাবে না।'
ভোটের হারে কে এগিয়ে কে পিছিয়ে?
কেবলমাত্র এ রাজ্যই নয়, শিবরাজ সিং চৌহ্বানের মুখ্যমন্ত্রিত্বে মধ্য প্রদেশে শুরু হয় 'লাডলি বহনা' প্রকল্প। সেখানেও মহিলাদের স্বণির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে ভাতা দেয় সরকার। তা যে বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের অনুকরণ, তা বোধহয় কারও অজানা নয়। আবার কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে মহালক্ষ্মী যোজনার কথা। যেখানে মহিলাদের স্বণির্ভর করার লক্ষ্যে বার্ষিক এক লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
মহিলা ভোটার গোটা দেশে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদী, সকলেরই মুখে বারবার শোনা যায়, মা-বোনেদের সমর্থনের কথা। সন্দেশখালি ইস্যু নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে নিয়ে বাংলার মহিলাদের প্রসঙ্গ টেনেছেন মোদী-শাহ-যোগীরা। আবার কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টো নিয়ে মুসলিম ইস্যুকে হাতিয়ার করতে গিয়েও মোদী তুলেছেন, মহিলাদের মঙ্গলসূত্রের প্রসঙ্গ। এমনকী, গোটা দেশে নজির তুলে ধরতে একাধিক মহিলা প্রার্থীকে ভোটে দাঁড় করিয়েছে BJP।
ভোটের হারে গোটা দেশের কার্যত উলটো পথে হেঁটে বাংলায় মহিলাদের ভোটের হার অনেকটাই বেশি।
প্রথম দফাদেশে মোট ভোটের হার: ৬৬.১৬ শতাংশ
পুরুষ ভোটের হার: ৬৬.২২ শতাংশ
মহিলা ভোটের হার: ৬৬.০২ শতাংশ
তৃতীয় লিঙ্গের ভোটের হার: ৩১.৩২ শতাংশ
বাংলায় মোট ভোটের হার: ৮১.৯১ শতাংশ
পুরুষ ভোটের হার: ৮১.২৫ শতাংশ
মহিলা ভোটের হার: ৮২.৫৯ শতাংশ (দেশের মধ্যে দ্বিতীয়)
তৃতীয় লিঙ্গের ভোটের হার: ৪২.৫৯ শতাংশ
দ্বিতীয় দফাদেশে মোট ভোটের হার: ৬৬.৭১ শতাংশ
পুরুষ ভোটের হার: ৬৬.৯৯ শতাংশ
মহিলা ভোটের হার: ৬৬.৪২ শতাংশ
তৃতীয় লিঙ্গের ভোটের হার: ২৩.৮৬ শতাংশ
বাংলায় মোট ভোটের হার: ৭৬.৫৮ শতাংশ
পুরুষ ভোটের হার: ৭৫.২২ শতাংশ
মহিলা ভোটের হার: ৭৭.৯৯ শতাংশ (দেশের মধ্যে চতুর্থ)
তৃতীয় লিঙ্গের ভোটের হার: ৩৩.৮১ শতাংশ
বিশিষ্ট সেফোলজিস্ট তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয় মুর্গ বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ভোটারদের সংঘবদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দলগুলি। রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং ক্যাডার ভিত্তিক দল CPIM-এর জন্যই ভোটের হার বেশি হওয়া বাংলায় অতীত থেকেই ট্রেন্ড। এই রাজ্যে রাজনৈতিক দলগুলির কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ এবং নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বরাবরই ভোট নিয়ে সচেতন মানুষের সংখ্যা বেশি। ইতিহাস বলছে বঙ্গের ভোটের হার বরাবরই বেশি।'