টগবগ করে ফুটছে গোটা বাংলা। দাবদাহের মাঝে খানিক স্বস্তি উত্তরের জেলাগুলিতে। ‘প্রাণটা জুড়িয়ে নে’ বলে দু’হাত বাড়িয়ে ডাকছে পাহাড়ের রানি। ব্যাগ গুছিয়ে সকলেই তাই দে ছুট শৈল শহরে। দার্জিলিং জুড়ে থিকথিক করছে পর্যটকদের ভিড়। হোটেল থেকে গাড়ি, ভাড়ার মিটার চড়চড় করে বাড়লেও, ‘কুছ পরোয়া নেহি’। তবে, শীতলতার খোঁজে দার্জিলিঙে গিয়েও পর্যটকরা কি এসি হোটেল রুমই বেছে নিচ্ছেন? কী বলছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা?রাজ্য জুড়ে তীব্র দাবদাহে মধ্যেই সামান্য ঠাণ্ডা পেতে দার্জিলিঙমুখী অনেকে। কিন্তু খোঁজ নিতেই দেখা যাচ্ছে দার্জিলিঙে বহু হোটেলেও এখন এসি রুমের চাহিদা বাড়ছে। সেখানেও যে খুব ঠাণ্ডা, তা একেবারেই নয়। যে কারণে রুম গুলিতে ফ্যান তো বটেই। কিছু ক্ষেত্রে এসিও চালাতে হচ্ছে।
বাড়ছে এসি রুমের চাহিদা?
পর্যটন মহল সূত্রে খবর, অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের জন্য রুমে এসিও লাগাচ্ছে। এতে করে রুম ভাড়াও আগের তুলনায় বাড়ছে। তবে গত কয়েকদিনে দার্জিলিঙে পর্যটকদের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। বেশিরভাগ হোটেলের রুম বুকিং ফুল হয়ে রয়েছে। নন এসি রুমের ভাড়া ১৫০০-২৫০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এসি রুমের ভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়। তবে এখন সেই রুম ভাড়া আরও অনেকটাই বেড়েছে বলে খবর। হিমালয়ান হসপিট্যালিটি অ্যাণ্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, 'দার্জিলিঙে পর্যটকদের ভিড় রয়েছে। অনেকেই এখন ঠান্ডার জন্য এখানে আসছেন। বাংলা ছাড়াও নানা রাজ্য থেকে পর্যটকদের ফোন আসছে। তাঁর ট্যুর বুক করছেন।'
দার্জিলিং হোটেলের জানলা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা
দার্জিলিঙের এক পর্যটন ব্যবসায়ী সমীর জানার মতে, ‘নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে যে চাহিদা থাকে, এপ্রিল-মে মাসে সেই চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই গরমের থেকে বাঁচতে এখানে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। সেই কারণে হোটেল রুমের ভাড়াও কিছুটা বেশি নিচ্ছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।
হোটেলের নামনভেম্বর-ডিসেম্বর ভাড়াএপ্রিল-মে ভাড়াশহর থেকে একটু দূরের হোটেল১৫০০-১৮০০ টাকা১৮০০-২০০০ টাকামেল থেকে কিছুটা কাছের হোটেল২০০০-২৫০০ টাকা২৫০০-৩০০০ টাকামেলের কাছাকাছি হোটেল ভাড়া৩৫০০-৪০০০ টাকা৩৮০০-৪৫০০ টাকাআবহাওয়া দফতরের খবর অনুযায়ী, সকালের দিকে দার্জিলিঙের তাপমাত্রা ২২ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। সেক্ষেত্রে দার্জিলিঙের কিছু হোটেলে সকালের দিকে এসির চাহিদা থাকলেও বিকেলের পর সেটার আর প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে যে হারে রেকর্ড গরম পড়েছে গোটা বঙ্গ জুড়ে, সেখানে প্রথা ভেঙে পাহাড়ের কোলেও কৃত্ৰিম ঠান্ডা হাওয়ার খোঁজ হচ্ছে হোটেলগুলিতে।
গাড়ি ভাড়া কেমন?
এদিকে গাড়ি ভাড়াও গত কয়েকদিনে যথেষ্ট বেড়েছে। অন্যান্য সময় শিলিগুড়ি থেকে ছোট গাড়ি দার্জিলিং যেতে ২৫০০-৩০০০ টাকা ভাড়া নিলেও এখন সেই ভাড়া প্রায় ৩৫০০-৪০০০ টাকা হয়েছে। গত নভেম্বর- ডিসেম্বরের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশি গাড়ি ভাড়া। দার্জিলিঙে যাওয়ার জন্যে এনজেপি, বাগডোগরা বা শিলিগুড়ি জংশন থেকে গাড়ি মেলে। তবে সুযোগ বুঝে কোপ মারছে অনেক চালক, বলেই দাবি পর্যটকদের। অন্যদিকে, অত্যাধিক পর্যটকের চাপে দার্জিলিং শহর এলাকায় যখন-তখন তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট।
Darjeeling Tour: কীসের টানে বারবার দার্জিলিঙে?
MakemyTrip বা Goibibo-র মতো হোটেল বুকিং অ্যাপগুলিতে ১ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে একাধিক হোম স্টে-র সন্ধান মিলছে। তবে, হোটেল ভাড়া নিতে গেলে ভাড়া ২ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এসি হোটেলের ক্ষেত্রে ভাড়া আরও খানিকটা বাড়বে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সাধারণত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত আবার সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে দার্জিলিঙে। সেই কারণে, সিজন টাইমে হোটেলের ভাড়া কমে বাড়ে।
ইতিমধ্যেই দার্জিলিঙে ভোটগ্রহণ পর্ব মিটে গিয়েছে। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতার বিশেষ সম্ভাবনা নেই। এই পরিস্থিতিতে শৈলশহরে স্বাভাবিকভাবেই অধিকাংশ হোটেলে জায়গা নেই। স্থানাভাব বিভিন্ন হোম স্টে-তেও। কার্শিয়াং, মিরিক, বিজনবাড়ি, সিটং-সহ একাধিক দার্জিলিং নিকটবর্তী ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনেও ছাপিয়ে গিয়েছে পর্যটকের সংখ্যা। এর মধ্যে সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়ার কারণে স্বভাবতই ভিড় আরও বাড়ছে।