• Calcutta High Court : নির্যাতিতাদের সুরক্ষার ভারও সিবিআইকে দিল হাইকোর্ট
    এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
  • এই সময়: সন্দেশখালিতে জমি দখলের প্রায় ন’শো অভিযোগ জমা পড়লেও তা নিয়ে তদন্তে কোনওভাবে সহযোগিতা করছে না রাজ্য— কলকাতা হাইকোর্টে এমনই অভিযোগ জানাল সিবিআই। বৃহস্পতিবার এই কেন্দ্রীয় এজেন্সির তরফে মুখবন্ধ খামে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয় আদালতকে। সেটা দেখে সন্তুষ্ট হাইকোর্ট তা আবার ফিরিয়ে দেয় সিবিআইকেই।সন্দেশখালির দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শেখ শাহজাহান ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে সেখানকার যে মহিলারা নির্যাতনের বিষয়ে হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা এখন রাতের অন্ধকারে খুন হয়ে যাওয়ার হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। যা শুনে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে মহিলা অফিসারদের তদন্তে নিয়োগ করতে হবে। মহিলাদের ভয় কাটাতে আর যা যা করণীয়, একটি প্রিমিয়ার এজেন্সি হিসেবে তা করতে সিবিআইকে অনুমতিও দেয় আদালত।

    বেঞ্চের নির্দেশ, কোনও মহিলা যদি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে জানান, সেক্ষেত্রে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারেও সিবিআইকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেয় আদালত। এক কথায় সন্দেশখালিতে জমি দখলের থেকেও মহিলাদের প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের সঙ্গে তাঁদের সাহস জোগানো থেকে নিরাপত্তা—যাবতীয় ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সিবিআই একাই নিতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট।

    এদিন গোপন রিপোর্ট দেখার পর সিবিআইয়ের তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘জমির রেকর্ড নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে কিছু অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে রিপোর্টে। আদালত আশা করে, রাজ্য এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথি দিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করবে। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের কোনও স্থগিতাদেশ নেই, তাই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথ ভাবে মানতে হবে রাজ্যকে।’

    জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল অভিযোগ করেন, ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইয়ের কাছে কোনও এফআইআর যেন দায়ের করা না হয়, এনিয়ে মহিলাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তখনই প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘মানুষের মনে আস্থা বাড়ানোর জন্য সিবিআইকে পদক্ষেপ করতে হবে।’ ১৩ জুন পরবর্তী শুনানিতে ফের সিবিআইকে তদন্তে অগ্রগতির রিপোর্ট পেশ করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে মামলায় যুক্ত হওয়ার এদিন অনুমতি দিয়েছে আদালত।

    সন্দেশখালির গ্রামে সিসিটিভি এবং এলইডি আলো লাগানো হয়েছে কি না, তা নিয়ে কোনও রিপোর্ট এদিন দেয়নি রাজ্য। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য, ‘তাহলে এটা ধরে নিতে হবে, রাজ্য এই নির্দেশ পালন করেনি। এবং রাজ্য যদি এটা না করে তাহলে কলকাতা হাইকোর্ট জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে পারে।’

    গত ১০ এপ্রিল সন্দেশখালিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। জমি দখল, জমির চরিত্র বদল, চাষের জমি ভেড়িতে পরিবর্তন করা, ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগের তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয় সিবিআইকে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। জুলাই মাসে হবে সেই শুনানি। যদিও সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মামলা বিচারাধীন আছে বলে কোথাও যেন কোনও তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ না থাকে।

    অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার সন্দেশখালির রাজবাড়ি এলাকায় যান সিবিআই কর্তারা। অভিযোগ, শেখ শাহজাহান জেলে থাকলেও তাঁর শাগরেদরা এখনও এলাকাতে রয়েছেন। এখনও তাঁরা গ্রামবাসীদের উপরে নজর রাখছেন। এমন অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা এ বার শাহজাহানের শাগরেদদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। বুধবার সরবেড়িয়া বাজারে গিয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ী ফারুক পাইকের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। শাহজাহান ঘনিষ্ঠ সিরাজুল মীরের বাড়িতেও যান তদন্তকারীরা। এমনকী তলব করে নোটিসও দিয়ে আসেন তাঁরা।
  • Link to this news (এই সময়)