Jadavpur University : যাদবপুরে 'র্যাগিং'-র বলি সেই ছাত্রের ভাইও সফল
এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
এই সময়: পরীক্ষা এলেই ভাইয়ের সঙ্গে রাত জাগত দাদা। ভাইয়ের পড়াশোনার খুঁটিনাটি থেকে খাওয়া-দাওয়া, স্কুলে যাওয়ার দেখভালও করত সে। ভাইয়ের রেজাল্ট আউটের আগের দিন ভাই যদিবা ঘুমিয়ে পড়ত, টেনশনে সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারত না দাদা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে র্যাগিং ও যৌন হেনস্থায় গত বছরের অগস্টে প্রাণ দিতে হয়েছে সেই দাদাকে। আর ভাইয়ের মাধ্যমিকের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার।কিন্তু ফলাফল খুশি করতে পারেনি তাকে। কারণ, দাদাই ছিল তার বাড়ির শিক্ষক। সেই শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে ফলাফল যে মন মতো হবে না, সেটা সে জানত। সন্তান হারানোর কষ্টে বিভোর পরিবার যদিও ছোটছেলের এই ফলাফলে খুশি। কারণ, এই অসহায় অবস্থার মধ্যেও তার সাহস, অধ্যবসায় এবং প্রিয়জন হারানোর মতো এই বাধা টপকানোকে হেলাফেলা করে দেখছেন না তাঁরা। আর মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীও খানিকটা খুশি, কারণ তার রেজাল্টের হাত ধরেই বাবা-মায়ের শুকনো মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠতে দেখেছে সে।
যাদবপুরের মেন হস্টেলে দাদার মৃত্যুর পর থেকেই বগুলার বিশাল বাড়িতে তালা পড়েছে। বইপত্র, ব্যাগ গুছিয়ে এখন এই পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা রানাঘাটে। যাদবপুরের হস্টেলে যখন ওই ছাত্রের যখন মৃত্যু হয়, তখন সবে ক্লাস টেনে উঠেছিল এবারের মাধ্যমিক পড়ুয়া। যাদবপুরে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো ভাইকে দাদা বলে গিয়েছিল, ‘তুই ভাবিস না। যখন দরকার আমাকে ফোন করবি। পড়াশোনায় ফাঁকি দিবি না!’ কিন্তু ফাঁকি দিয়ে দাদা চলে গিয়েছে। আর তারপর থেকে প্রায় নির্বাকই হয়ে পড়েছিল ভাই। কথাবার্তা বলত না, পড়াশোনায় মন ছিল না, খেলাধূলো ছেড়ে দিয়েছিল প্রায়। এখন অবশ্য ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সে। মনের হদিশ পেতে এখনও নিয়মিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয় তাকে।
টেস্ট পরীক্ষার আগে তিন মাস সে কোনও পড়াশোনাই করেনি। মামা-মামি, শিক্ষকরা জোর করায় পরীক্ষায় বসেছিল। তারপরেও অবসাদ এতটাই গ্রাস করে রেখেছিল তাকে যে সেভাবে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিতেই পারেনি। তবু পরীক্ষা দিয়েছে, মাধ্যমিকে মোট ২৮৪ নম্বর এবং সব মিলিয়ে বি গ্রেড পেয়েছে। কোথা থেকে পেল অনুপ্রেরণা? সফল পড়ুয়া বলছে, ‘দাদাই আমার সব কিছু ছিল। ও থাকলে রেজাল্ট আরও ভালো হতো। আমাকে প্রায় সব সাবজেক্টই বুঝিয়ে পড়াত, সেটা আর কেউ পড়াতে পারে না।’ বগুলা হাইস্কুলের ছাত্রের আক্ষেপ, ‘তবে এই নম্বর দেখে দাদা খুব খুশি হতে পারত না। ও নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলত, উচ্চ মাধ্যমিকে যেন ভালো ফল করি।’
এ দিন রেজাল্ট বেরনোর পরে দাদার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ছলছল চোখে আশীর্বাদও নিয়েছে সে। দাদার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি একটা ফ্যাসিনেশন ছিল। ভাইয়ের তাই ইচ্ছে ছিল যাদবপুর থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার। কিন্তু যা ফলাফল হয়েছে তাতে সে আর সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায় না। আর্টস নিয়েই পড়বে। আর যে যাদবপুরে গিয়ে তার দাদা হারিয়ে গিয়েছে, সেখানেও সে আর পড়তে চায় না।
মা বলছেন, ‘দাদাই ওকে বড় করেছে। আজ বড় ছেলে যেখানেই থাকুক, আশা করি সেখান থেকেই ভাইকে আশীর্বাদ করছে!’ আর বাবা বলেন, ‘এই অবস্থায় যা হয়েছে তাই অনেক। আমরা হলে তো পরীক্ষায় বসতেই পারতাম না।’ মা-বাবা দুজনেই চান, এক ছেলেকে তাঁরা হারিয়েছেন। শাক-নুন-ভাত যাই খান না কেন ছোট ছেলে যেন আজীবন তাঁদের কাছেই থাকে। তাই বাইরে কোথাও ছেলেকে এখনও পাঠাতে রাজি নন তাঁরা।