তীব্রতা বৃদ্ধি ইজ়রায়েল-বিরোধী বিক্ষোভে, UCLA-তে রায়ট পুলিশ
এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
লস অ্যাঞ্জেলস: ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ের স্মৃতি ফিরে এলো আমেরিকার ক্যাম্পাসে। গত অর্ধ শতকের সবচেয়ে বড় ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল গোটা আমেরিকা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী রইল UCLA. ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলস গত বেশ কিছুদিন ধরে উত্তাল হয়েছে গাজায় ইজরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে। গত সপ্তাহ থেকে ক্যাম্পাসের মধ্যেই তাঁবু খাটিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা।এ দিন ভোরে সেখানে ঢুকে পড়ে বিশাল পুলিশবাহিনী। স্টান গান, টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয় বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের। গ্রেপ্তার করা হয় অসংখ্য পড়ুয়াকে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এ দিন জাতির উদ্দেশে এই নিয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদের অধিকার থাকলেও অশান্তি করার অধিকার কারও নেই।’ তাতে অবশ্য ভোটের মুখে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়িয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ।
বুধবার মাঝরাত থেকেই UCLA ক্যাম্পাসের দখল নিতে শুরু করে পুলিশ। প্রায় ৫২ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়েন আমেরিকার অন্যতম প্রিমিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুধবার রাতে রায়ট গিয়ারে সেখানে ঢুকে পড়ে প্রায় শ’পাঁচেক পুলিশ। গেটের বাইরে পজিশন নেয় আরও হাজার তিনেক রায়ট পুলিশ। মাথার উপরে চক্কর কাটতে শুরু করে পুলিশের হেলিকপ্টার। ভোর হতেই পুলিশ ঢুকে পড়ে প্রতিবাদকারীদের তাঁবুতে। টেনেহিঁচড়ে বের করে আনা হয় সারা বিশ্ব থেকে পড়তে আসা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের। অনেকেরই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে বসিয়ে রাখা হয় রাস্তার ধারে।
সকাল হতেই এই দৃশ্য দেখে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য ক্যাম্পাসেও। এএমই গাজায় ইজরায়েলের বিধ্বংসী যুদ্ধের প্রতিবাদে সরব হয়েছিল কলম্বিয়া, ইয়েল, এমআইটি, প্রিন্সটনের মতো আইভি লিগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। এ দিন প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশি নিগ্রহের ছবি প্রকাশ্যে আসতে নতুন করে গোলমাল ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশের প্রায় সবক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে অনেক দিন আগে থেকেই আন্দোলন শুরু করেছিলেন আমেরিকার ছাত্রছাত্রীরা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ছাত্রবিক্ষোভের এমন চেহারায় প্রবল অস্বস্তিতে বাইডেন প্রশাসন। সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে বিরোধী রিপাবলিকানরা দাবি তুলেছে, ক্যাম্পাসে শান্তি ফেরাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক ন্যাশনাল গার্ডদের হাতে।
এই পরিস্থিতিতে ঘরে বাইরে প্রবল চাপে পড়েছে ইজরায়েলও। ইতিমধ্যেই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মার্কিন ক্যাম্পাসে গাজার সমর্থনে এই ছাত্রবিক্ষোভকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। পরিস্থিতি জটিল হয় মঙ্গলবার রাতে। ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে থাকা প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণ করেন দক্ষিণপন্থী আর একদল পড়ুয়া। তার পর থেকেই বাড়তে থাকে উত্তেজনা। এর মধ্যেই ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রতিবাদকারীদের সমর্থনে হাজির হন আশপাশের বহু মানুষ।
গোলমাল ও গ্রেপ্তারির খবর এসেছে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও। অকুপাই ইয়েল নামে একটি প্রতিবাদ গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল ক্যাম্পাসে। সেখানেই প্রায় ২০০ পুলিশ ঢুকে গ্রেপ্তার করে দুই পড়ুয়া-সহ চারজনকে। সেখানেও পুলিশের বিরুদ্ধে হিংসা ও অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমেরিকার ক্যাম্পাসে ইজরায়েল বিরোধী এই বিক্ষোভের খবর গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হচ্ছে আরব দুনিয়ার প্রায় সর্বত্র। গত ১৭ এপ্রিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় নরসংহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়। তার পর ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই মুহর্তে দেশের অভ্যন্তরে তা নিয়েই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে জো বাইডেন।