• Governor Qualifications And Powers: মুখ্যমন্ত্রীকে করতে পারেন পদচ্যুত! কোন কোন বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে রাজ্যপালের?
    এই সময় | ০৩ মে ২০২৪
  • সম্প্রতি বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ। শ্লীলতাহানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চাপানউতোর। কড়া সমালোচনায় সরব রাজ্যের শাসক শিবির। তবে এই প্রতিবেদনে আলোচ্য বিষয় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নয়, একজন রাজ্যপালের কী ক্ষমতা ও তাঁর যোগ্যতা কী সেই বিষয়ে আলোকপাত করা।ভারতে, একজন রাজ্যপরাল হলেন ভারতের একটি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। জাতীয় স্তরে একজন রাষ্ট্রপতির যা ক্ষমতা থাকে রাজ্যস্তরে একই রকম ক্ষমতা ভোগ করেন রাজ্য়পাল। অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালরা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ৫ বছরের জন্য মনোনীত হন। দিল্লি ও পুদুচেরির মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ক্ষমতায় থাকেন লেফটেন্য়ান্য় গর্ভনর ও প্রশাসক। ভারতে, একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নর (এলজি) এবং প্রশাসক একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাংবিধানিক প্রধান। যাইহোক, এলজি র‌্যাঙ্ক শুধুমাত্র আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ , লাদাখ , জম্মু ও কাশ্মীর , দিল্লি এবং পুদুচেরির কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিদ্যমান।

    ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে পাঁচ বছরের জন্য নিযুক্ত করেন। অবশ্য রাষ্ট্রপতি তাঁকে পুনরায় মনােনীত করতে পারেন বা কার্যকাল বৃদ্ধি করতে পারেন। এই নিয়ােগ সংক্রান্ত ব্যাপারে রাজ্যের কোনাওরকম ভূমিকা বা হস্তক্ষেপ থাকে না। তবুও কোনাও রাজ্যের রাজ্যপাল নিয়ােগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতামত গ্রহণ করে থাকেন। সংবিধানের ১৫৬ (১) নং ধারানুযায়ী রাজ্যপালের স্বপদে বহাল থাকা নির্ভর করে রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির উপর। রাজ্যপাল কে শপথ বাক্য পাঠ করিয়ে থাকেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।

    যোগ্যতা

    ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫৭ ও অনুচ্ছেদ ১৫৮ গর্ভনর পদের জন্য় যোগত্য়ার উল্লেখ রয়েছে।

    ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী কোনও নাগরিককে রাজ্যপাল হতে গেলে তাকে অবশ্যই—

    ১) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে

    ২) কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে

    ৩)কেন্দ্র বা রাজ্য আইনসভার সদস্য থাকতে পারবেন না

    ৪) কেন্দ্র বা রাজ্যের কোনাও সরকারি লাভজনক পদে বহাল থাকতে পারবেন না।

    রাজ্যপালের ক্ষমতা

    শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপালের শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল-

    ১) রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা তত্ত্বগতভাবে ন‍্যাস্ত থাকে রাজ্যপালের হাতে। তিনি নিজে অথবা তাঁর অধস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন সেইসব ক্ষমতা।

    ২) রাজ্যের শাসন কার্য যাতে যথাযথ ভাবে সম্পাদনার জন্য তিনি তিনি নিয়মাবলী প্রণয়ন করতে পারেন।

    ৩) রাজ্যপাল নিয়োগ করেন বিধানসভার সংখ্যা ঘনিষ্ঠ দল বা মোর্চার নেতা বা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ও তাঁর পরামর্শক্রমে রাজ্য মন্ত্রীসভার অন্য সদস্যদের।

    ৪) মুখ্যমন্ত্রী সহ যে কোন মন্ত্রীকে পদচুত্য করার ক্ষমতাও রয়েছে রাজ্যপালের।

    ৫) রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল, রাজ্য জনপালান কর্তৃক কমিশন-এর সদেস্য প্রমুখ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ করেন রাজ্যপাল।

    ৬) রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচল অবস্থা দেখা দিয়েছে বলে মনে হলে রাজ্যপাল ৩৫৬ ধারা জারি করার জন্য সুপারিশ করতে করতে পারেন রাষ্ট্রপতি কাছে।

    ৭) নিজ নিজ রাজ্য অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির (কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া) আচার্য বা চ্যানশেলার হিসাবে কার্যসম্পাদন করেন রাজ্যপালরা।

    আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা

    ১) যেসব রাজ্যের আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সেই সব রাজ্যে বিধান পরিষদে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল মনোনীত করতে পারেন কয়েকজন ব্যক্তিকে। এছাড়া বিধানসভায় ইঙ্গ-ভারতীয় কোনও প্রতিনিধি না থাকলে রাজ্যপাল উক্ত সম্প্রদায় থেকে মনোনীত করতে পারেন একজন সদস্যকে।

    ২) মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতেন পারেন। কিংবা স্থগিত করতে পারেন। তাছাড়া প্রয়োজন মনে করলে ভেঙে দিতে পারেন বিধানসভা।

    ৩) রাজ্য আইনসভার গৃহীত কোনও বিল আইনে পরিণত হতে পারে না রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া।

    ৪) তিনি বিধানসভা কিংবা বিধান মণ্ডলীর কাছে বাণী প্রেরণ করতে পারেন।

    ৫) অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিলকে তিনি রাজ্য আইনসভায় পূর্ণ বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন।

    ৬) রাজ্য আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন জরুরী প্রয়োজনে রাজ্যপাল অধ্যাদেশ বা ordinennce জারি করতে পারেন।

    অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা

    ১) রাজ্যপালের সম্পত্তি ছাড়া রাজ্য আইনসভা কোনও ব‍্যয় বরাদ্দের দাবি পেশ কিংবা কোনও অর্থবিল উত্থাপন করা যায় না।

    ২) রাজ্যের বাজেট বার্ষিক আয় ব্যয়ের বিবরণ তিনি অর্থমন্ত্রী মারফত আইনসভার কাছে উত্থাপন করেন।

    ৩) রাজ্যপালের হাতে রাজ্যের আকস্মিক ব‍্যায় তহবিলের দায়িত্ব ন‍্যাস্ত থাকে।

    বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা

    ১) রাজ্যপালের পরামর্শক্রমে রাজ্যের হাইকোর্ট বিচারপতিদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি।

    ২) রাজ্যের দেওয়ানী আদালতের বিচারপতি, অতিরিক্ত জেলা জজ, দায়েরা জজ প্রমুখকে নিয়োগ করতে পারেন রাজ্যপাল।

    ৩) আইন ভঙ্গের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর দন্ডাদেশ রাশ/ হ্রাস করা, স্থগিত রাখা, এমনকি তাঁকে ক্ষমা প্রদর্শন করার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা তাঁর নেই।

    স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা: সংবিধান রাজ্যপালের হাতে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রদান করেছে।

    ১) পার্শ্ববর্তী কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তা স্বাধীনভাবে পালন করা।

    ২) মণিপুর ও সিকিমের রাজ্যপালের ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ দায়িত্ব পালন করা।

    ৩) নাগাল্যান্ডের রাজ্যপালের ক্ষেত্রে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিশেষ দায়িত্ব পালন করা।

    ৪) রাষ্ট্রপতির কাছে সাংবিধানিক অচল অবস্থা সম্পর্কিত রিপোর্ট পাঠানো।

    ৫) রাজ্য আইন সবার যে কোনো বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠানো।

    ৬) রাজ্য মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করা বা রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়া ইত্যাদি।
  • Link to this news (এই সময়)