বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা দুজনেই ছিলেন দিল্লির বাইরে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, সনিয়া গান্ধী দুজনকেই ফোনে পরামর্শ দেন দলের সিদ্ধান্ত মতো কাজ করতে। কর্নাটকের শিবমোঙ্গায় রাহুলের পাশে তখন ছিলেন খাড়্গে। রাহুল জানিয়ে দেন তিনি রায়বেরেলি থেকে প্রার্থী হবেন।অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রিয়াঙ্কা মাকে জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে দলের নির্দেশ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বভাবতই কৌতহল তৈরি হয়েছে এত করে বলার পরও কেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভোটের ময়দান এড়িয়ে গেলেন। সংসদে যাওয়া নিয়ে তাঁর কেন এত অনীহা?
তবে শুধু আজ নয়, প্রিয়াঙ্কাকে সাধারণ কংগ্রেস কর্মী থেকে শুরু করে সবস্তরের নেতারাই বহুদিন ধরে ভোটের ময়দানে চাইছেন। ২০০৪ এর লোকসভা ভোটের আগে থেকে তাঁকে প্রার্থী হিসেবে চেয়ে পোস্টার লাগানো শুরু হয়। সেই ট্র্যাজিশন মেনে এবারও ‘নো প্রিয়াঙ্কা নো ভোট’ পোস্টারে কার্যত ছেয়ে গিয়েছে আমেঠি, রায়বেরেলির দেওয়াল। সনিয়া, রাহুল প্রার্থী হলেও আমেঠি, রায়বেরেলিতে ভোট হয় প্রিয়াঙ্কার নামেও।
এতোকিছুর পরও কারও ডাকেই সাড়া দেননি কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। যদিও আমেঠি ও রায়বেরেলির সঙ্গে গান্ধী পরিবারেরআত্মার যোগ রয়েছে। রায়বেরেলিতে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন সনিয়া গান্ধীর শ্বশুর এবং রাহুল-প্রিয়াঙ্কার দাদু ফিরোজ গান্ধী। পরে ফিরোজ-ইন্দিরা বিচ্ছেদের পরও গান্ধী পরিবারের হাতেই থাকে আসনটি। তিনবার সেখান থেকে জিতেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরার পর মাঝে গান্ধী পরিবারের আত্মীয়া শীলা কল রায়বেরেলি থেকে জিতে সংসদে যান। প্রার্থীহন গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ দীনেশ সিং। ১৯৯৮ সাল থেকে প্রার্থী হতেন সনিয়া।
পরিবারের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জুড়ে থাকা আসন দুটি থেকে প্রিয়াঙ্কার শেষপর্যন্ত প্রার্থী না হওয়ারসিদ্ধান্ত ঘিরে কংগ্রেসের অন্দরেই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। এই সিদ্ধান্তের পিছনে সনিয়া কন্যার উদ্দশ্য নিয় চর্চা তুঙ্গে। কারণ, রাজনীতিকরা সাধারণত বিধানসভা বা লোকসভা আসনের উপর পারিবারিক যোগ বজায় রাখার চেষ্টা করে থাকেন। বাংলায় যেমন বরকত গণিখান চৌধুরী, শিশির অধিকারীদের পরিবার। আবার উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবদলের প্রচারের ব্যাস্ততা সত্ত্বেও এবার কনৌজ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। ওই আসন থেকে অখিলেশ নিজে তিনবার এবং প্রয়াত বাবা মুলায়ম সিং যাদব দুবার সাংসদ হয়েছেন। একবার জিতেছেন অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পলও।
এমন বহু দৃষ্টান্ত তাকা সত্ত্বেও দলের কাছে প্রিয়াঙ্কার বক্তব্যছিল, তিনি প্রার্থী হলে বিজেপি আরও বেশি করে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলবে।
কেরলের ওয়ানাড় থেকে রাহুলের জয় নিয়ে সংশয় নেই। রায়বেরেলি থেকে প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হলে তাঁর জয় নিয়েও তেমন একটা সংশয় ছিল না। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা দলের হয়ে প্রচার করার সিদ্ধান্তেই অনড় থাকলেন।
তবে এই নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও প্রিয়াঙ্কার এই সিদ্ধান্ত দলের অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি তা বলাই বাহুল্য। এমনকি প্রিয়াঙ্কার এই সিদ্ধান্ত আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন কিছু কংগ্রেস নেতা।